প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:১৩
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে শিক্ষার্থীর ব্যাকুলতা-১৭
রঙ্গিন স্বপ্নে এক রাশ মলিনতা
রঙিন স্বপ্নগুলো কি ডানা মেলে ভোরের খোলা আকাশে উড়তে পারবে? সুদীর্ঘ দুর্গম রাতের পথ শেষে সূর্যদয় দেখার যে বাসনা মনে পোষন করেছিলাম তার দেখা কি মিলবে আদৌও ?
|আরো খবর
ফুল হয়ে ফুটে চারিদিকে সুভাষ ছড়ানোর আগেই কি কলি থেকেই শুষ্ক হয়ে ঝড়ে পড়বো মৃত্তিকায়? দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠের আয়োজনে শিক্ষার্থীদের মতমতের উপর ভিত্তি করে 'স্কুল কলেজে ফিরতে শিক্ষার্থীদের ব্যাকুলতা' শীর্ষক শিরোনামে ব্যকুলতা জানতে চাঁদপুর সরকারি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ মফিজুল ইসলাম সাহেদ কাছে জানতে চাইল, উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে চান পৃথিবীর কাছ থেকে।
করোনার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘকালীন ছুটি সম্পর্কে সে জানায়, জীবনের সেরা সময় বিশ্ববিদ্যালয় জীবন!শুনতে শুনতেই সবার মতো আমিও বেড়ে উঠেছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছতে পারা সত্ত্বেও এর স্বপ্নসাধ এখনো বাস্তবায়ন করার সুযোগটা পাওয়া হয় নি।
সুখের নীড় রচনা করতে অনার্স প্রথম বর্ষে রসায়ন বিভাগে ভর্তি হই চাঁদপুর সরকারি কলেজে। ঠিক তার ৫ মাস পরেই করোনা ভাইরাসের কারনে লকডাউনের কবলে পড়ে আমার পড়াশোনা। ক্যাম্পাস বন্ধ! এ বন্ধ যে এতদূর পর্যন্ত গড়াবে তা ছিল কল্পনাতীত। বইয়ের উপর ধুলো জমতে শুরু করলো, মনের সুখগুলো নিমিষেই বিষাদের রূপ নিল। বিষাদের এই নদীর তীরের খোঁজ কোনদিন মিলবে তা ঠিক জানি না....
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুরনো স্মৃতি মন্থন করে সে জানায়, ক্যাম্পাসে আমরা বন্ধুরা ছিলাম একই বৃন্তের পাপড়িগুচ্ছ হয়ে। আমাদের স্বপ্নগুলো আমরা দেখতাম মুগ্ধ চোখে – একজন নয়, সবাই। স্বপ্নের দখিনা বাতাসে দোল খেত বৃন্তদলের প্রতিটি পাপড়ি, একসাথে।
ছন্নছাড়া চড়ুই এর মত অবলীলায় ছোটাছুটি আর কিচির-মিচির শব্দে উচ্ছ্বল ছিলাম আমরা। এ ভবন থেকে ও ভবনে ফুড়ুৎ করেই যেন উড়াল দিয়ে ঘুড়ে বেড়াতাম। মায়াভরা চোখে পরস্পরকে দেখতাম বন্ধুর বাৎসল্যে, ভাইয়ের স্নেহ ও বোনের মমতায়।
পড়ালেখা,আড্ডা,খেলাধুলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা, একসাথে খেতে যাওয়া,একে অন্যের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া, সবেমিলে টংয়ের চায়ের কাপে ফু দেওয়া, মাঠের সবুজ ঘাসের চাদরে একসাথে বসে গানে মেতে উঠা (পাখির চোখে হয়তো তখন ফোটা ঘাসফুল ছিলাম আমরা) এ সবকিছুর মধ্যেই বেশ যাচ্ছিল আমাদের দিন। সরলতার এই সুন্দর পথকে হঠাৎ বাঘের থাবার মতো করে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিলো করোনা ভাইরাস। সেই ফুলের পাপড়িগুলো অনেকদিন একসাথে নেই।জীবনকে আর একটু সুন্দর করার উদগ্রীব বাসনায় মাতা এক-একটা পাপড়ি ঝরে যাচ্ছে হয়তো!
করোনাকালীন সময়ে তার সহপাঠী শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে সে জনায়, অনেক বন্ধুর সাথে যান্ত্রিকতার যোগাযোগে জানতে পেরেছি, কেউ কেউ চাকরি বা কাজে ঢুকে গিয়েছে, বাস্তবতার নির্মম পরিহাসে। কত বান্ধবীর এই মহামারীর সময়ে বিয়ে হয়ে গেলো, তাদের নিজেদের বোনা স্বপ্নগুলোর হয়তো এখানেই নিঃশেষ! কারো কারো কাছে,স্বপ্নময় এই পথটি হয়ে উঠেছে হতাশায় পরিপূর্ণ। আরও ভয়ংকর লাগে যখন শুনি নানা কারণে হতাশাকে জয় করতে না পেরে কতিপয় শিক্ষার্থী বেছে নেয় আত্নহত্যার মতো জঘন্য পথকে।
এদিকে যদি নিজের কথা বলি, আকুল চোখে দিগন্ত পানে তাকিয়ে থাকা চোখ জোড়া এখন দিনের বেশি সময় যান্ত্রিক এই ফোনেই বন্ধি হয়ে আছে। স্বপ্নিল পৃথিবীটাকে এখন মাঝে মাঝে বিরক্তিকর'ই মনে হয়। নিজের স্বপ্নগুলোকে ভুলে থাকার মতো করে লুকিয়ে রেখেছি বিশেষ কোন বৃক্ষের আড়ালে। স্বপ্নগুলোকে ছুঁয়ে ফেলার আকাঙ্খায় মাঝেমাঝেই মনে হয়, ফিরে যাই সেই চিরচেনা ক্যাম্পাসে,শুরু করি লেখাপড়া, আবার একসাথে বসে আড্ডা দেই, নিঃশঙ্কোচে আপন সুরে গেয়ে উঠি চেনা গান, হৈ হুল্লোড় করে মেতে উঠি বন্ধুমহলের সবাই, ক্যাম্পাসের সবুজ মাঠে বসে প্রিয় ক্যাম্পাসটাকে মনভরে দেখি, সবশেষে রৌদ্রদগ্ধ দুপুরের স্নানে
আগন্তুক প্রশান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। কিন্তু যখনি মনে পড়ে করোনা মহামারীর কারণে ক্যাম্পাস থমকে আছে তখন একরাশ হতাশা আর হৃদয়ে ছাইচাপা অগ্নি নিয়ে মন ভার করে বসে থাকি, কষ্টসহিষ্ণু আমি অপেক্ষা করি কখন পৃথিবী আগের মত ঠিক হয়ে যাবে আর ছুটে যাব প্রিয় ক্যাম্পাসে, দেখতে পাব প্রিয় চিরচেনা মুখগুলো। ক্যাম্পাসটাও প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে উঠবে। সব কিছু ফিরে আসবে তার আপন মহিমায়। আর আমার স্বপ্নগুলো ডানা মেলে উড়ে যেতে পারবে তার নিজস্ব চূড়ায়....।