প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৩:৪৭
চাঁদপুর সরকারি কলেজের বিভাগ পরিচিতি
গ্রন্থনা : সুমন মজুমদার
বাংলা বিভাগ
চাঁদপুর জেলার উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ‘চাঁদপুর সরকারি কলেজ’। ১৯৪৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির অনুমোদন নিয়ে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হলেও কালের পরিক্রমায় আজ এখানে ১৭টি বিষয়ে অনার্স ও ১৬টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্সে পাঠদান করা হচ্ছে। কলেজে ৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ১৯৯১ সালে বাংলা বিভাগে অনার্স কোর্স চালু হয়। সে সময় চেয়ারম্যান ছিলেন মো. ইসহাক খান। মাস্টার্স কোর্স চালু হয় ১৯৯৫ সালে। চেয়ারম্যান ছিলেন প্রফেসর মো. ইসহাক খান। বিভাগে প্রিলিমিনারি মাস্টার্স কোর্স চালু হয় ১৯৯৫ সালে।
অনার্স কোর্স চালুর পর থেকেই এ বিভাগটি চমৎকার ফলাফল করে আসছে। বিভাগ হতে প্রতি বছর চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা ‘অমরাবতী’ নামে সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করে। বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক সেমিনারে অংশগ্রহণ করে। বাংলা বিভাগে কর্মরত রয়েছেন ৭ জন শিক্ষক। বর্তমানে কর্মরত বিভাগীয় প্রধান অমর চন্দ্র দাস। অনার্সের আসন সংখ্যা ১৩০, মাস্টার্স প্রিলিমিনারি পর্বের আসন সংখ্যা ৪০ ও মাস্টার্স শেষ পর্বের আসন সংখ্যা ১৪৫।
ইংরেজি বিভাগ
চাঁদপুর সরকারি কলেজের সুপরিচিত বিভাগ ‘ইংরেজি’। এ বিভাগটি কলেজের সূচনা থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৯৯৭ সালে ইংরেজি মাস্টার্স (প্রিলি.) কোর্স এবং ১৯৯৮ সালে অনার্স কোর্স চালু হয়। এ সময় বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন সাঈদ মুইজুর রহমান। অনার্স কোর্সটি ৪০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয়েছিল। মাস্টার্স কোর্স চালু হয় ২০০২ সালে, তখন চেয়ারম্যান ছিলেন ফজলুর রহমান। অনার্স কোর্স এবং মাস্টার্স কোর্সে ১৮০টি আসন রয়েছে। প্রিলিমিনারি মাস্টার্স কোর্সে আসন রয়েছে ৪০টি।
এ বিভাগের জন্য গর্বের বিষয়, কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ পরেশ চন্দ্র গাঙ্গুলী ইংরেজির ছাত্র ছিলেন। এ. বি. এম. ওয়ালীউল্লাহ এ বিভাগের উল্লেখযোগ্য শিক্ষক ছিলেন। বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আলী আজগর ফকির। বিভাগে ৫টি শিক্ষক পদ রয়েছে।
ইতিহাস বিভাগ
চাঁদপুর সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার পর মানবিক শাখার অন্যতম বিষয় হিসেবে পরিচিত ছিল ‘ইতিহাস’। দেশবরেণ্য ইতিহাসবিদেরা ঐ সময়ে বিভাগ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। তৎকালে ইতিহাস বিষয়টি ইংরেজিতে পড়ানো হতো। তাই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরাই ইতিহাস বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতো। ১৯৮০ সালে কলেজ সরকারিকরণের পর স্বনামধন্য অধ্যক্ষ তোয়াহা মিয়া কলেজে অনার্স কোর্স খোলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ইতিহাস বিভাগের স্বনামধন্য অধ্যাপক মো. মতিউর রহমানের প্রচেষ্টায় ১৯৯৪ সালে ৪টি বিভাগে অনার্স কোর্স চালু করা হয়। বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন সামছুন নাহার। অনার্স কোর্স চালুর পূর্বেই ইতিহাস বিভাগে মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়েছিলো। ১৯৯৮-৯৯ সালে অনার্স কোর্স চালুর শুরুতে ছাত্র সংখ্যা ছিল ২০ জন। বর্তমানে ইতিহাস বিভাগে মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪০০ জন। মাস্টার্স প্রিলিমিনারি পর্বের আসন সংখ্যা ৫০। মাস্টার্স শেষ পর্বের আসন সংখ্যা ১২০। শিক্ষকগণের পদসংখ্যা ০৪। বর্তমান বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ আবুল বাশার।
সমাজকর্ম বিভাগ
চাঁদপুর সরকারি কলেজ সমাজকর্ম বিভাগের জন্ম ১৯৬৫ সালে। বিভাগে অনার্স কোর্স চালু হয় ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষে। কলেজের সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষক মো. হুমায়ুন আজাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এ বিভাগটি চালু হয়।
পরবর্তীকালে এ বিভাগের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন মো. শাহ্ আলম। তিনি বরিশাল বি এম কলেজের সমাজকর্মের বিভাগীয় প্রধান ও পরে শরিয়তপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার পরে বিভাগীয় প্রধান ছিলেন মো. আজিজুর রহমান। বর্তমান বিভাগীয় প্রধান মুহাম্মদ ইয়াহ্-ইয়া খান। বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭৭৩। শিক্ষক পদ ৪ জন।
অর্থনীতি বিভাগ
‘অর্থনীতি’ চাঁদপুর সরকারি কলেজের এক ঐতিহ্যবাহী বিভাগ। এ বিভাগে ১৯৯৩-১৯৯৪ শিক্ষাবর্ষে অনার্স কোর্স চালু হয়। তৎকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক আহমেদ হোসেন। মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয় ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে। সেসময় বিভাগীয় প্রধান ছিলেন প্রফেসর আহমেদ হোসেন। মাস্টার্স প্রিলিমিনারি পর্বের আসন সংখ্যা ৪০। অর্থনীতি বিভাগে বর্তমান বিভাগীয় প্রধান মো. ফারুক আহাম্মেদ। অনার্সের আসন সংখ্যা ২০০ এবং মাস্টার্স শেষ পর্বের আসন সংখ্যা ১৬৫। শিক্ষকগণের পদসংখ্যা ০৭।
এ বিভাগ হতে বেশ কিছু শিক্ষার্থী কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে সততার সাথে কাজ করছেন।
প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগ
চাঁদপুর কলেজে ১৯৫৮ ও ১৯৬১ সালে বিএ ও বিকম কোর্স এবং ১৯৬৩ সালে বিএসসি পাস কোর্সের প্রবর্তন হয়। ১৯৬৫ সালের ১ জুলাই স্ন্নাতক শ্রেণিতে ঐতিহ্যবাহী প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের প্রবর্তন হয়।
এ বিভাগের প্রথম বিভাগীয় প্রধান আব্দুর রশীদ আকন্দ। বর্তমান বিভাগীয় প্রধান মো. শওকত ইকবাল ফারুকী। অনার্সের আসন সংখ্যা ১০৫টি ও মাস্টার্সের আসন সংখ্যা ১০৫টি। বর্তমানে এ বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০৫ জন। শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন ৪ জন। এ বিভাগের একটি সেমিনার কক্ষ, ল্যাব ও সমৃদ্ধ মিউজিয়াম রয়েছে।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগ যেমনি শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেয়, তেমনি এতে বিগত বছরগুলোর কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বের বিবরণও প্রতিফলিত হয়।
পদার্থবিদ্যা বিভাগ
চাঁদপুর সরকারি কলেজে ১৯৯২-৯৩ শিক্ষাবর্ষে বাংলা ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর মধ্য দিয়ে কলেজে উচ্চতর শিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হয়। তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়ার গৃহীত পদক্ষেপ এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রচেষ্টায় ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষে পদার্থ-বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়।
তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান মো. আনোয়ার হোসেনের অধীনে দুজন শিক্ষক নিয়ে বিভাগীয় কার্যক্রম শুরু হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির জন্য ৫০টি আসন বরাদ্দ দেওয়া হলে প্রথম সেশনে (১৯৯৯-২০০০ সেশনে) ভর্তি হয়েছিল ৪০ জন।
অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন, পিএএ এবং বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক উমেশ চন্দ্র লোধের অক্লান্ত পরিশ্রমে ২০১৭ সালে এ বিভাগে মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে বিভাগে অনার্স কোর্সে ৯৫টি আসন রয়েছে এবং মাস্টার্স কোর্সে ৫০টি আসন রয়েছে। বিভাগে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৯ জন।
২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বিভাগে ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৯৫ জন। বর্তমান বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন। শিক্ষক পদসংখ্যা ০৫।
রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগ
চাঁদপুর সরকারি কলেজে ১৯৯৬ সালে রসায়ন (সম্মান) বিভাগ খোলা হয়। ঐ বছর ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী প্রথম বর্ষ রসায়ন সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হয়। শিক্ষকগণের পদসংখ্যা ০৫টি।
অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া এবং বিভাগীয় প্রধান এম এম শফিউদ্দিন-এর অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৯৯৯ সালে এ বিভাগে মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে বিভাগে অনার্স কোর্সে ১৫০টি আসন রয়েছে এবং মাস্টার্স কোর্সে ৮০টি আসন রয়েছে। বর্তমান বিভাগীয় প্রধান মো. দেলোয়ার হোসেন। বিভাগে কর্মরত শিক্ষক ৫ জন।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
চাঁদপুর অঞ্চলে রয়েছে অনেক ধর্মীয় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বা মাদ্রাসা। মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থাকায় মাদ্রাসার অনেক ছাত্র-ছাত্রী ছুটে আসে চাঁদপুর সরকারি কলেজে। এছাড়া অনেক ইসলামপ্রিয় ছাত্র-ছাত্রী ও ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার জন্য ছুটে আসে এ কলেজে। কিন্তু অত্র কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পাস কোর্সে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয় থাকলেও ২০০৫ সাল পর্যন্ত এ বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু ছিল না বিধায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী তাদের কাক্সিক্ষত বিষয় না পেয়ে বাধ্য হয়ে অন্যান্য বিষয়ে ভর্তি হয়েছে। এ ব্যাপারে অনেক ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষকদের কাছে আক্ষেপও করেছে।
একদিকে এ অঞ্চলের ইসলাম প্রিয় শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি অন্যদিকে সময়ের চাহিদা বিবেচনায় রেখে অত্র কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর ছৈয়দ আহ্মদ চৌধুরীর সহযোগিতায় ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে অনার্স কোর্স খোলার প্রস্তুতি গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়। তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর ছৈয়দ আহ্মদ চৌধুরী অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে যাওয়ার পর অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন প্রফেসর মো. ইকবাল হোসেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের বদৌলতে বিশেষ করে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ের তৎকালীন সহযোগী অধ্যাপক মো. ইসরাফীলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষে এসে বিভাগটি আলোর মুখ দেখতে সক্ষম হয়। তিনজন বিভাগীয় শিক্ষক নিয়েই এ বিভাগের যাত্রা শুরু। বর্তমান বিভাগীয় প্রধান শাহ্ মোহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ। বর্তমান শিক্ষক পদসংখ্যা ০৩টি।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
চাঁদপুর সরকারি কলেজের অন্যতম বিভাগ ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান’। অভিযাত্রার প্রথমদিন থেকেই উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়। ডিগ্রি (পাস কোর্স) পর্যায়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধিভুক্ত হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে। তারপরও পূর্ণ হয়নি আকাক্সক্ষা। অপেক্ষা আরেক শুভদিনের। অবশেষে সে মাহেন্দ্রক্ষণ আসে ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে। অনার্স কোর্স চালুর সময় বিভাগীয় প্রধান ছিলেন মাহবুব মোহাম্মদ আলী। শুরু হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সম্মান কোর্সের পথ পরিক্রমা। প্রথম শিক্ষাবর্ষেই ব্যাপক হৈ চৈ পড়ে যায়। ভর্তি হয় ৩০ জন শিক্ষার্থী। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে চালু হয় মাস্টার্স প্রথম পর্ব ও মাস্টার্স শেষ পর্ব যথাক্রমে ১৯৯৩-১৯৯৪ এবং ১৯৯৪-১৯৯৫ সেশনে। প্রিলিমিনারি মাস্টার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালুর সময় বিভাগীয় প্রধান ছিলেন মাহবুব মোহাম্মদ আলী। বর্তমানে কর্মরত বিভাগীয় প্রধান সামছুর রহমান। বর্তমানে বিভাগে অনার্স কোর্সে আসন সংখ্যা ১৯৫। মাস্টার্স প্রিলিমিনারি পর্বের আসন সংখ্যা ১০৫ এবং মাস্টার্স শেষ পর্বের আসন সংখ্যা ২৬৫। বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা ৫ জন।
দর্শন বিভাগ
চাঁদপুর সরকারি কলেজে ১৯৯২-৯৩ শিক্ষাবর্ষে বাংলা ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর মধ্য দিয়ে এ কলেজে উচ্চতর শিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হয়। অতঃপর পর্যায়ক্রমে ছাত্র-ছাত্রীদের ‘দর্শন’ বিষয়ে অনার্স কোর্সে অধ্যায়নের প্রতি আগ্রহের কথা বিবেচনা করে অত্র কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ইকবাল হোসেনের গৃহীত পদক্ষেপ এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রচেষ্টায় ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষে ‘দর্শন’ বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়।
তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান মো. আমজাদ হোসেনের অধীনে তিনজন শিক্ষক নিয়ে বিভাগীয় কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৬-২০০৭ সেশনে ভর্তি হয়েছিল ৩৫ জন। বর্তমানে অনার্সের আসন সংখ্যা ৮৫টি
তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন, পিএএ এবং বিভাগীয় প্রধান মো. আজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া-এর অক্লান্ত পরিশ্রমে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে এ বিভাগে মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। মাস্টার্স কোর্সে ৫০টি আসন রয়েছে। মাস্টার্স প্রিলিমিনারি পর্ব চালু হয়নি। শিক্ষকগণের পদসংখ্যা ৪টি।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
১৯৯২-১৯৯৩ শিক্ষাবর্ষে বাংলা ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুর মধ্য দিয়ে চাঁদপুর কলেজে উচ্চতর শিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হয়। এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে ২০০৬ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর ছৈয়দ আহ্মদ চৌধুরী অনার্স কোর্স অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ইকবাল হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধান এবং বিভাগীয় শিক্ষকগণের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষ হতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে প্রথম বর্ষ অনার্স কোর্সে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির অনুমোদন দেয়।
অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন, পিএএ এবং বিভাগীয় প্রধান মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান মিয়ার অক্লান্ত পরিশ্রমে ২০১৭ সালে এ বিভাগে মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে বিভাগে অনার্স কোর্সে ১০০টি আসন এবং মাস্টার্স কোর্সে ৫০টি আসন রয়েছে। শিক্ষক পদসংখ্যা ৪টি।
ব্যবস্থাপনা বিভাগ
চাঁদপুর সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগ এই কলেজের ঐতিহ্যবাহী বিভাগ। ১৯৮০ সালে বিভাগটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন বিভাগীয় প্রধান ছিলেন মো. ইকবাল হোসেন। ১৯৮০-২০০১ পর্যন্ত মো. মোজাম্মেল হোসেন, মো. সেকান্দর মিয়া, বিভুতি নারায়ণ দাশ, আলী হোসেন, প্রফেসর চিত্ত রঞ্জন দেবনাথ, প্রফেসর মোহাম্মদ উল্লাহ প্রমুখ বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। এই বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক মৃণাল কান্তি গোস্বামী বর্তমানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র মো. মিহরাবুর রশীদ খান নাইম, বিসিএস, রেলওয়ে (পরিবহন ও বাণিজ্যিক) ডেপুটি ডাইরেক্টর ইন্টারচেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। এছাড়া কাজী মো. সালাউদ্দিন, রিফাত সুলতানা আইরিন, প্রভাষক, মতলব ডিগ্রি কলেজ, ইমন হোসেন (ব্যাংকার)সহ অনেকে নিজ নিজ পেশায় উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছে। বাণিজ্য শাখার অধীনে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অধ্যয়ন করেছেন বহু স্বনামধন্য সফল ব্যক্তিত্ব। যাঁরা অনেকেই পরে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান কে. এম রেজাউল হক। বিভাগের প্রাক্তন প্রভাষক আবু দাউদ লুৎফুল জামির খান এই কলেজের ছাত্র ছিলেন।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে বহু জ্ঞানী ও পণ্ডিত শিক্ষকগণ শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমান বিভাগীয় প্রধান মো. হারুন অর রশীদ। বিভাগে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা ৫ জন।
হিসাববিজ্ঞান বিভাগ
হিসাববিজ্ঞান বিভাগ চাঁদপুর সরকারি কলেজের অন্যতম প্রধান বিভাগ। এ বিভাগে ১৯৯১-১৯৯২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) কোর্স, ১৯৯৩-১৯৯৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর ১ম পর্ব ও ১৯৯৪-১৯৯৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর শেষ পর্ব প্রবর্তন করা হয়। অনার্স কোর্স চালুর সময় বিভাগের আসন সংখ্যা ছিল ৫০ জন, যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে ২৬০ জনে উন্নীত হয়েছে। এ বিভাগে প্রিলিমিনারি মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। মাস্টার্স প্রিলিমিনারি পর্বের আসন সংখ্যা ৪০ এবং মাস্টার্স শেষ পর্বের আসন সংখ্যা ২৪০। অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালুর সময় বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন এ. জেড. এম. সামসুদ্দিন আহমেদ।
এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)সহ, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা ইত্যাদি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। এই বিভাগ হতে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদ মফিজুর রহমান, মো. আতিকুর রহমান, মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসাইন মজুমদার, মো. জিসান আহাম্মেদ, সঞ্জীব চন্দ্র সাহা প্রমুখ।
অনার্স ও মাস্টার্স পাঠদানকারী বিভাগটিতে বর্তমানে ৭ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ বেদারুল আলম।
গণিত বিভাগ
১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ (সম্মান) শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে গণিত বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। তখন গণিত বিভাগ বিভাগীয় প্রধান ছিলেন প্রফুল্ল কুমার দাশ। ঐ বর্ষে ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩১ জন। ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষ থেকে গণিত বিভাগে মাস্টার্স (শেষপর্ব) কোর্স চালু হয়।
অনার্সের আসন সংখ্যা ১৭৫ এবং মাস্টার্স শেষ পর্বের আসন সংখ্যা ৬০। মাস্টার্স প্রিলিমিনারি পর্ব এ বিভাগে শুরু হয়নি। বর্তমানে বিভাগে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা ৬ জন। বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. আনিছুল ইসলাম। এই বিভাগের বিভিন্ন শিক্ষার্থী সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন চাকুরিতে সাফল্য লাভ করেছে।
উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ
চাঁদপুর কলেজে ১৯৫১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে জীববিজ্ঞান বিষয়টি চালু হয়। বিএসসি (পাস) কোর্সে উদ্ভিদবিজ্ঞান পড়ানো হয় ১৯৬৩ সাল থেকে। ১৯৮০ সালে কলেজ জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে অনার্স কোর্স এবং ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমএসসি শেষবর্ষ কোর্স চালু হয়।
বশির উদ্দিন আহমেদ ও তাজুল ইসলাম বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক ছিলেন এবং মো. আসাদুল হাসনাত অনার্স কোর্স ও মাস্টার্স চালুর সময় চেয়ারম্যান ছিলেন। ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে অনার্স কোর্স শুরু হয়। বর্তমানে বিভাগীয় প্রধান মো. ইকবাল হোসেন খান। বিভাগে অনার্স কোর্সে আসন সংখ্যা ১৭০টি এবং মাস্টার্স কোর্সে আসন সংখ্যা ৯০টি। শিক্ষকগণের পদসংখ্যা ০৫। এই বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাহবুব-অর-রশীদ, দীপক চন্দ্র দাস বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) প্রভাষক হিসেবে কর্মরত এবং মো. জাকির হোসেন খান প্রদর্শক হিসেবে অত্র বিভাগে কর্মরত রয়েছে।
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ
১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চাঁদপুর কলেজ থেকে প্রথম বার ১১৯ জন ছাত্র-ছাত্রী আইএ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তখন থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভূগোল বিষয়টি পড়ানো হতো। ১৯৬৭ সালে প্রথম স্নাতক শ্রেণিতে ভূগোল বিভাগ প্রবর্তন করা হয়। ভূগোল বিভাগের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। অনেক স্বনামধন্য অধ্যাপক এই বিভাগে পাঠদান করেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রফেসর ওয়াফেক হোসেন চৌধুরী, প্রফেসর আ. রশিদ, প্রফেসর সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন, খিরসা বাবু, প্রফেসর আক্রাম হোসেন ও প্রফেসর আবুল হাসেম।
১৯৮০ সালে কলেজ জাতীয়করণ হয়। ঐ সময়ে ভূগোল বিভাগের প্রধান ছিলেন প্রফেসর আবুল হাসেম। তৎকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়ার গৃহীত পদক্ষেপ এবং বিভাগীয় প্রধান ড. মো. আব্দুর রশীদসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রচেষ্টায় ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষে ‘ভূগোল ও পরিবেশ’ বিষয়ে ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়।
অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. বজলুল হক এবং বিভাগীয় প্রধান শামসুদ্দীন আহমেদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ২০০২-২০০৩ শিক্ষাবর্ষে এ বিভাগে মাস্টার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে বিভাগে অনার্স কোর্সে ৯৫টি আসন রয়েছে এবং মাস্টার্স কোর্সে ৬৫টি আসন রয়েছে। শিক্ষকগণের পদসংখ্যা ০৫। বর্তমান বিভাগীয় প্রধান ড. সুলতানা তৌফিকা আক্তার।
সুমন মজুমদার : প্রভাষক, ইতিহাস বিভাগ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ।