বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৩:৪৩

চাঁদপুরের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষানুরাগী

মুহাম্মদ ফরিদ হাসান
চাঁদপুরের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষানুরাগী

তৃতীয় পর্ব

শিক্ষানুরাগী আবিদুর রেজা চৌধুরী

আবিদুর রেজা চৌধুরী ১৮৭২ সালে ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা উমেদ রেজা চৌধুরী, মা সৈয়দা আফতাবুন্নেসা চৌধুরানী।

আবিদুর রেজা চৌধুরীর রয়েছে বর্ণাঢ্য জীবন। তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বঙ্গীয় মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। কুমিল্লা মুসলিম লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন প্রায় দু যুগ (১৯৩৫-১৯৫৮)। আবিদুর রেজা চৌধুরী ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি চাঁদপুর লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান (১৯২০-১৯৪০), কুমিল্লা জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান (১৯৩০-১৯৬০), ২৮টি জেলা নিয়ে গঠিত নিখিল বঙ্গ জেলা বোর্ড চেয়ারম্যান এসোসিয়েশন-এর সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। কুমিল্লা জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে আবিদুর রেজা চৌধুরীর ধারাবাহিকভাবে ৩০ বছর দায়িত্ব পালন ছিল অবিভক্ত বাংলার জন্যে রেকর্ড। ১৯৫৮ সালের ১৬ মে কুমিল্লায় তাঁর চেয়ারম্যানশীপের রজতজয়ন্তী পালিত হয়।

তাঁর সঙ্গে শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানীর সুসম্পর্ক ছিল।

আবিদুর রেজা চৌধুরী শিক্ষাবিস্তারে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ছিলেন। তাঁর কাজের মাধ্যমে কেবল চাঁদপুরের নয়, বৃহত্তর কুমিল্লাবাসী উপকৃত হয়েছে। তিনি নিজে যেমন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন, তেমনি অন্যদেরও প্রতিষ্ঠা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁর নামেই ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কুমিল্লা স্কুল বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বকালে তিনি শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ১৯৩০ সালে এ বোর্ডের ৪৫৩ জন ছাত্র প্রাথমিকে উত্তীর্ণ হয়েছিল। ১৯৩৪ সালে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১১৪২ জনে। আবিদুর রেজা বহু শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। শিক্ষার পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নেও তাঁর ভূমিকা রয়েছে।

আজীবন মানুষের জন্যে কাজ করেছেন আবিদুর রেজা চৌধুরী। কুমিল্লা জেলা বোর্ডের দায়িত্বপালনকালে তিনি প্রতীকী একটাকা সম্মানী নিতেন। কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৩০ সালের ১ জানুয়ারি ব্রিটিশ সরকার তাঁকে সম্মানজনক ‘খান বাহাদুর’ খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৪৬ সালে মুসলিম নিগৃহের ঘটনায় তিনি এ খেতাব বর্জন করেন। পাকিস্তান সরকারও আবিদুর রেজা চৌধুরীকে সম্মান জানিয়েছিল। সরকার তাঁকে ‘তঘমায়ে খিদমত’ খেতাব (১৯৫৪) প্রদান করেন। তাঁর সম্মানার্থে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সালে কুমিল্লা জেলা বোর্ড মিলনায়নতকে ‘আবিদুর রেজা চৌধুরী মিলনায়তন’ ঘোষণা করে।

বরেণ্য এ শিক্ষানুরাগী ও রাজনীতিবিদ ১৯৬১ সালের ১৬ জানুয়ারি বেলা ৩টায় রূপসায় মৃত্যুবরণ করেন।

সূত্র :

১. খান বাহাদুর আবিদুর রেজা চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত জীবনী, ভূপেন্দ্রনাথ ঘোষ, কুমিল্লা সিংহ প্রেস থেকে প্রকাশিত।

২. আবিদুর রেজা চৌধুরী, এসএম ওয়াজেদ চৌধুরী (আবিদুর রেজা চৌধুরীর দৌহিত্র)।

৩. দৈনিক আজাদ, ১৯ জানুয়ারি ১৯৬১।

৪. ডিমান্ড ফর গ্র্যান্টস, পৃ. ৩৪-৩৫।

৫. উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া।

ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান

ড. মো. সবুর খান

বাংলাদেশের বিশিষ্ট প্রযুক্তি-ব্যক্তিত্ব আন্তর্জাতিক সমাদৃত ড. মোঃ সবুর খান। ১৯৬৫ সালের ২৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন চাঁদপুর সদরের বাবুরহাটে। তিনি বাবুরহাট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক (১৯৮১) ও চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (১৯৮৩) পাস করেন। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে বিএসসি অনার্স (১৯৮৭) ও এমএসসি (১৯৮৮) ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি সমাজ ও সংস্কৃতিমনস্ক ছিলেন। কবিতা আবৃত্তি, গান, বিতর্ক করতেন। স্কাউটিং, উন্নয়নের অগ্রদূত, খেলাঘর আসর, রোটার‌্যাক্ট ক্লাব-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছেন। তিনি মনে করেন, এ সবকিছুই তাঁর পেশাগত জীবনে কাজে লেগেছে।

সবুর খান ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তিনি এ বিশ^বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠা করেছেন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন’। ড্যাফোডিল গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো : ড্যাফোডিল কম্পিউটারস, ড্যাফোডিল পিসি, ড্যাফোডিল অনলাইন, ড্যাফোডিল মাল্টিমিডিয়া, ড্যাফোডিল সফ্টওয়্যার, ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, বাংলাদেশ স্কিল ডেভলপমেন্ট ইনস্টিটিউট, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল প্রফেশনাল ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট, মাই কিডস, জবসবিডি ডট কম, কম্পিউটার ক্লিনিক, ডলফিন কম্পিউটার্স লিমিটেড, ড্যাফোডিল ওয়েব অ্যান্ড ই-কমার্স ইত্যাদি।

সাংগঠনিকভাবেও সবুর খান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাঞ্জেল নেটওয়ার্ক-এর প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি সার্ভিসেস অ্যালায়েন্স-এর পরিচালক, ওয়ার্ল্ড বিজনেস অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম বাংলাদেশ-এর হাইকমিশনার, অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিজ অব এশিয়া অ্যান্ড দি প্যাসিফিক-এর সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ বহু আন্তর্জাতিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন।

কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ সবুর খান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে অমর একুশে স্বর্ণপদক (২০০০), স্বাধীনতা ফোরাম পুরস্কার (২০০২), মওলানা ভাসানী স্মৃতিপদক (২০০২), ভাষা শহীদ স্মৃতি পদক (২০০৫), ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস পদক (২০০৫), ওয়ার্ল্ড কোয়ালিটি কমিটমেন্ট স্বর্ণপদক (২০১০), সিআইপি পদক (২০১৩), এশিয়া’স মোস্ট ইনস্পায়ারিং ন্যাশন বিল্ডার অ্যাওয়ার্ড (২০১৩), ওয়ার্ল্ড কোয়ালিটি কংগ্রেস অ্যাওয়ার্ড (২০১৩), লাইট অব এশিয়া অ্যাওয়ার্ড, ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব আইটি (ডব্লিউসিআইটি)-২০১৭ মেরিট অ্যাওয়ার্ড, উইটসা অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট আইসিটি এন্টাপ্রেনিউর, দ্য ডেইলি স্টার আইসিটি বিজনেস পারসন অব দ্য ইয়ার-২০১৮, ফাইন্যান্সিয়াল মিরর বিজনেস পুরস্কার, সাউথইস্ট ব্যাংক-দ্য ইন্ড্রাস্ট্রি পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। ভারতের কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি তাঁকে সম্মানসূচক ডি লিট এবং কিরগিজস্তানের আলা-তো ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি তাঁকে সম¥ানসূচক পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে।

সবুর খান নিজে যেমন সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন, তেমনি তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতেও তিনি কাজ করছেন নিরলস। পাশাপাশি করছেন লেখালেখিও। তাঁর প্রকাশিত বইগুলো হলো : হ্যান্ডবুক অব এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট, উদ্যোক্তা উন্নয়ন নির্দেশিকা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও ব্যবসায় নির্দেশিকা এবং আর্ট অব ইফেক্টিভ লিভিং এবং আ জার্নি টুওয়ার্ডস এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ।

সবুর খান প্রতিবছর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার ও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

সূত্র :

১. গলি থেকে রাজপথে মো. সবুর খান, হিটলার এ. হালিম; বাংলা টিব্রিউন, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।

২. ড্যাফোডিল গ্রুপ : কর্তার অর্থকথা; ডিবিসি টেলিভিশন, ১১ নভেম্বর ২০১৭।

৩. প্রতিটা ব্যর্থতাই একেকটা শিক্ষা : সবুর খান, সাক্ষাৎকার গ্রহণে : মোঃ সাইফুল্লাহ, প্রথম আলো, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯।

৪. সবুর খান, ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়