বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩, ১০:০৯

স্মৃতির পাতায় চাঁসক সমাজকর্ম বিভাগ

মোঃ রাসেল (পিপিএম)
স্মৃতির পাতায় চাঁসক সমাজকর্ম বিভাগ

আমার জন্ম ১৯৮৪ সালের পহেলা জানুয়ারি চাঁদপুরের হাইমচর থানাধীন চরভৈরবী ইউনিয়নে। আমার শৈশব কেটেছে গ্রামের বাড়িতে। চরভৈরবী উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে জীবনের সোনালি শৈশব কাটিয়েছি। আমার শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে মজার বিষয় হলো ক্লাস ওয়ান থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আমি ক্লাসে প্রথম স্থান দখল করে রেখে ছিলাম।

২০০০ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষে আমি চলে আসি চাঁদপুর সরকারি কলেজে। শুরু হয় নতুন করে পথচলা। এসএসসি পর্যন্ত বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করলেও নিজের ইচ্ছায় আমি মানবিক শাখায় ভর্তি হই। যেদিন থেকে চাঁদপুর শহরে আমি পথচলা শুরু করি সেদিন থেকে আমি একটা কাজ আরম্ভ করি আর তা হলো টিউশন। আমি পারিবারিকভাবে মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও খুব একটা টাকা-পয়সা পেতাম না। এর অন্যতম কারণ আমার বাবা বিশেষ কারণে আমাকে টাকা-পয়সা দিতেন না। তিনি চেয়েছিলেন যেনো আমি নিজের পায়ে দাঁড়াই। তার অনুপ্রেরণায় আমি টিউশনি করি। আমি ক্লাসের অন্য ছাত্র-ছাত্রীর মতো খুব একটা সিরিয়াস ছিলাম না কোন দিন। অনেক আড্ডা দিতাম। তবে সন্ধ্যা নামলে আর কোন আড্ডা আমাকে টানতো না। টিউশনি আর টিউশনি। বাসায় ফিরে একবার হলেও পড়ার টেবিলে চোখ বুলাতাম।

আমার কিছু বন্ধু ছিল, যাদেরকে সবসময় মনে পড়ে। তাদের মধ্যে অন্যতম ফরহাদ, সম্রাট, সালাউদ্দিন, আলী রাশেল, মেহেদী, সবুজ, জিয়া, মোতালেব, মিঠু, রুনা, সাদিয়া, সামিয়া, শিমু, আশু, মৌসুমি, শিল্পি, রত্না, জিনিয়া, বিউটিসহ অনেকে।

সফলতার সাথে এইচএসসি সম্পন্ন করে আমি চাঁদপুর সরকারি কলেজে অনার্স ১ম বর্ষে সমাজকর্ম বিভাগে ভর্তি হই। সে সময় বিভাগীয় প্রধান ছিলেন মোঃ আতিকুর রহমান স্যার। মোঃ আব্দুল্লাহ মাসুদ স্যার, মোঃ আবদুর রহমান স্যার, কৃষ্ণ প্রসাদ সরকার স্যার, পরে মোহাম্মদ ফয়জুল রহমান স্যার, ফাতেমা বেগম ম্যাডাম ও মোহাম্মদ বন্দে আলী হাওলাদার স্যার।

নবীনবরণের দিন মজার দুটি বিষয় ছিলো। তার মধ্যে একটি আতিকুর রহমান স্যার আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমি কোন্ কলেজ থেকে এসেছি। তখন আমি চাঁদপুর সরকারি কলেজ বলার পরে স্যার আমাকে বললো, আমাকে তুমি চিনো। তুমি কোনো দিন আমার ক্লাস করছো? পরে বললাম, চিনি স্যার। বাকি উত্তর আর দিই নাই। কারণ আমি স্যারের ক্লাস করতাম না। পরে মোঃ আব্দুল্লাহ মাসুদ স্যার যিনি আমাদেরকে রুমের ভেতরে টানানো একটি লাইন পড়তে বললেন আর জানতে চাইলেন এর মানে কী? লাইনটা এখনো আমার মনে আছে, শেখার জন্য এসো, সেবার জন্য বেরিয়ে যাও। এই লাইনটা আমার জীবনে অনেক কাজে এসেছে। সমাজকর্ম বিভাগে পড়ার কারণে আমি একজন মা পেয়েছিলাম, যাঁর নাম ফাতেমা বেগম ম্যাডাম। আর যাঁর কথা না বললেই না, তিনি আমার পরমশ্রদ্ধেয় কৃষ্ণ প্রসাদ সরকার স্যার। স্যারের ছেলের নাম রনি আমার ডাক নামও ছিল রনি। যার সুবাদে আমি ছিলাম তার অলিখিত ছেলে। একটা মানুষ ছিল সেখানে খুব সাহায্য করতেন আমাদেরকে। নাম মিজান ভাই। লাইব্রেরি থেকে দুটা বই নেয়ার নিয়ম থাকলেও তিনি আমাকে কত বই যে দিয়েছে তার কোনো হিসাব নাই। এছাড়া সিনিয়র বড় ভাইদের মধ্যে ইসমাইল ভাই, মনির ভাই, বাহার ভাই খুব সাহায্য করেছিলেন পড়াশোনার ব্যাপারে। বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ স্যার আমার বিভাগের না হওয়া সত্ত্বেও মিনাক্ষীর অনুরোধে আমাকে পরিসংখ্যান না পড়ালে হয়ত এতো ভালো রেজাল্ট আমি করতে পারতাম না। পরে আমি সফলতার সাথেই অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করি। ধন্যবাদ সকল স্যারকে। যাঁদের কারণেই আমি সমাজকর্ম বিভাগের অনার বোর্ডে নিজের নাম লেখাতে পেরেছিলাম। ইকোনমিক ডিপার্টমেন্টের নজরুল স্যারের মতো এতো আদর্শবান মানুষ আমি কমই দেখিছি। আমার যখন পুলিশে চাকুরি হয় তখন আমি স্যারের সাথে পরামর্শ করলাম। স্যারকে বললাম, আমি যাবো না। তখন স্যার আমাকে বললেন, কেনো? আমি বললাম, এটা ভালো চাকুরি না। এখানে সবাই খারাপ, তখন স্যার আমাকে এই খারাপের মাঝেই ভালোভাবে থেকে মানুষকে সাহায্য করার পরামর্শ দেন। স্যারের সেই অনুপ্রেরণাকে পাথেয় করে আমার পথচলা। পরে চাকুরিকালীন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বিসিএস নামক পরীক্ষা আর দিতে পারিনি। তারপর আমি মহান আল্লাহ পাকের কাছে চির কৃতজ্ঞ। আমি বাংলাদেশ পুলিশের সব চেয়ে নবীন কর্মকর্তা হিসেবে ২০১৫ সালে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক সেবায় ভূষিত হওয়াসহ মাদার তেরাসা পদক এবং একাধিক পুরস্কার অর্জন করি। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, আমার সহধর্মিণীও একই বিভাগের এবং সেও এখান থেকে অনার্র্স (প্রথম শ্রেণি) এবং মাস্টার্স (প্রথম শ্রেণি) সম্পন্ন করেছে।

আমার জীবনের সবচেয়ে মধুর সময় কেটেছে এই সমাজকর্ম বিভাগে। আমার জীবনের সফলতার পেছনে এই বিভাগের যে ভূমিকা তা বলে শেষ করা যাবে না। চাঁদপুর সরকারি কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সফলতা কামনা করছি।

মোঃ রাসেল (পিপিএম) : পরিদর্শক, ধানমন্ডি মডেল থানা, ডিএমপি, ঢাকা; সাবেক শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ-২০০৩, চাঁদপুর সরকারি কলেজ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়