বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ২১:৪০

যাপনের গান

জান্নাতুল নাঈম
যাপনের গান

প্রাণের চাঁদপুর নিয়ে লিখতে গেলে নানা স্মৃতি মাথায় আসে। আমাদের সবার বেড়ে ওঠার সাথে স্মৃতি থাকে। তেমনি যদি লিখতে চাই তাহলে আমাদের গ্রামের নামটা প্রথমে আসে। আমাদের গ্রামের নাম দামোদরদী। এটি চাঁদপুর সদর উপজেলায় বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে অবস্থিত একটি গ্রাম। আমাদের গ্রামের সাথেই ধনাগোদা নদী। তার তীরে মিঞাবাজার। প্রতি রবিবার আর বৃহস্পতিবার বিকেলে হাট বসতো। এছাড়া বিভিন্ন ঋতুতে হাটের দিন ব্যবসায়ীরা নৌকা করে ফল নিয়ে আসতো। আম, কাঁঠাল, তরমুজ নিয়ে দূরের ব্যবসায়ীরা নদীপথে আসতো। প্রতি রবিবার আর বৃহস্পতিবার বিকেলে বাজারে মানুষে গিজ গিজ করতো। একটা উৎসবমুখর আমেজ লেগে থাকতো। সেই মিঞাবাজার এখন বিলীন। এখন বাজার নির্জনতায় কাটে। এখন আর হাটবাজার বসে না। বউবাজার (মদিনাবাজার) চালু হওয়ার থেকে চিরাচরিত বাজার বিলুপ্ত। মিঞাবাজার এখন আর রবিবার আর বৃহস্পতিবারে মানুষের গিজ গিজ শব্দতে মুখরিত হয় না। বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। হাতে গোনা কয়েকটি দোকান আছে। তা-ও সেখানে মানুষের পদচারণা কম। বাজারের পাশেই একটা রাইস মিল মেশিন ছিল। বাজার না বসাতেই এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে।

মিঞাবাজারের সাথে একটা বিল। সেই বিলে কোনো বাড়ি-ঘর ছিলো না। বিলের মধ্যখানে সেচের পানি যাওয়া-আসা করতো। আমরা বাজারে যাওয়ার পথে লুকিয়ে লুকিয়ে পা ডুবিয়ে দিতাম। কী যে আনন্দ লাগতো! এখন বিলে বাড়ি, ঘর, রাস্তাঘাট হয়ে মিঞাবাজার দূর থেকে দেখা যায় না। দক্ষিণের বিল তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে। বর্ষার সৌন্দর্য এখন আর উপভোগ্য নয়। বিলটা খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে।

মিঞাবাজারের সাথে তীরঘেঁষে ধনাগোদা নদী দিয়ে প্রতি রবিবার, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা বাজলেই ইঞ্জিনচালিত নৌকা মতলবে যেতো। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় উঠে আমি জানালা দিয়ে দূরের বাড়িঘর দেখতাম। কুচুরিপানা দোলা খেতো আমি মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকতাম। ছোট্ট নদীর দুপাশের ধানক্ষেত, গৃহিণীর ধালাবাসন ধোয়া, বালিকাদের সাঁতার কাটা, ছোট ছোট ডিঙি নৌকার বসে মাছ ধরা এসব দেখতে দেখতে বিস্ময়ে সময় চলে যেতো। কিন্তু এখন অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে সড়কপথে যাতায়াত করায় কারণে সব কয়টা ইঞ্জিনচালিত নৌকা বন্ধ হয়ে গেছে। একটি যা-ও চলে সেখানে যাত্রী পাওয়া যায় না।

সভ্যতা পাল্টেছে। অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে। বহুবছর ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ওঠা যায় না। এখন যাতায়াতের সুবিধা হওয়াতে মানুষ সরাসরি চাঁদপুর চলে যায়। এখন মিঞাবাজারে সেই হাট, মানুষের গিজ গিজ শব্দ, ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বিলের ঢেউ খেলানো ধানের ডগার দিনে ফিরে যেতে মন চায়। শৈশবের সেই দিনগুলোতে এখনো মনে লেগে আছে। কিন্তু পাল্টায় সভ্যতা পাল্টায় এটা যে মানতেই হয়! তবু মন এই ভেবে আনন্দ পায় কালের সাক্ষীতে আমাদের স্মৃতি আছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়