শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

শিক্ষার্থী সাক্ষাৎকার : আফসানা আক্তার তন্নি

সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতি ছোটবেলা থেকেই প্রবল আগ্রহ ছিলো

সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতি ছোটবেলা থেকেই প্রবল আগ্রহ ছিলো
অনলাইন ডেস্ক

আফসানা আক্তার তন্নি। চাঁদপুর সরকারি কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকে সংস্কৃতি অঙ্গনে তার সরব পদচারণা। স্বীকৃতিস্বরূপ অর্জন করেছেন নানা পুরস্কার। তার সংস্কৃতি চর্চা চাঁদপুরে সমাদৃত।

আফসানা আক্তার তন্নি জাতীয় পর্যায়ে লোকনৃত্যে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন। একক অভিনয়ে অর্জন করেন দ্বিতীয় স্থান। ২০১৪ সালে অর্জন করেন ‘প্রেসিডেন্টস্ স্কাউটস অ্যাওয়ার্ড’। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের একজন ক্যাডেট অ্যাম্বাসেডর সিঙ্গাপুর সফর করেছেন। এছাড়া অর্জন করেন রোটারী ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট-৩২৮২ কর্তৃক আয়োজিত ‘রোটার‌্যাক্ট আইডল’-এ ফার্স্ট রানারআপ পুরস্কার।

সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি আফসানা আক্তার তন্নি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবামূলক বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত রয়েছেন। তিনি চাঁদপুর ড্রামার মহিলা সম্পাদিকা, রোটার‌্যাক্ট ক্লাব অব চাঁদপুর রূপসীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ, কলেজ শাখার সদস্য।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?

আফসানা আক্তার তন্নি : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

আফসানা আক্তার তন্নি : বর্তমানে আমি চাঁদপুর সরকারি কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করি। এ বিদ্যাপীঠে আমি ৭ বছর অধ্যয়ন করি। আর কলেজ জীবন কাটিয়েছি চাঁদপুর সরকারি কলেজের ছাত্রী হিসেবে। আমি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। বরাবরের মতো প্রিয় বিষয় ছিলো জীববিজ্ঞান। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়টিকে পছন্দের তালিকায় ১ম স্থানে রেখেছিলাম। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ আমার ছোট থেকেই। আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রতিটা ক্লাসেই আমি ভালো ফলাফল করে আসছি। ভবিষ্যৎ পথচলায় সকলের দোয়া চাই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার প্রিয় শিক্ষক কে? তিনি কেন প্রিয়?

আফসানা আক্তার তন্নি : প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় অনেকেই আছেন। কারণ এক একজনের কাছ থেকে আমি এক একটি বিষয় আয়ত্ত করতে চেষ্টা করেছি। স্কুলে জীবনে প্রিয় শিক্ষক ছিলেন শাহানাজ পারভিন ম্যাম, আমাদেরকে বাংলা পড়াতেন। খুবই ভালো এবং সুচিন্তন মানুষ। আর কলেজ জীবনে ছিলেন শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. দেলোয়ার হোসেন স্যার। স্যারের সবচেয়ে বড় গুণ ছিলো তিনি সবসময় শিক্ষার্থীদের সাথে মুচকি হাসি দিয়ে কথা বলতেন আর খুব নরম স্বরে বলতেন, মনে হয় যেনো পরম আত্মীয় কেউ বোঝাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছিলেন ড. সুশীল কুমার নাহা স্যার, আমাদের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। স্যার বর্তমানে মুন্সিগঞ্জে কর্মরত আছেন। স্যার এবার চাঁদপুরে এসেছিলেন একটি অনুষ্ঠানে, তখন তিনি আমাকে সকল শিক্ষার্থীর ভিড়েও চিনে ফেললেন। ডাক দিয়ে বললেন, ‘তোমাকে এগিয়ে যেতে হবে, তোমার মা খুব পরিশ্রম করেন। ওনাদের মান রাখবে কিন্তু!’ আমার ওইদিন এতো ভালো লেগেছিলো, স্যার আমাকে স্মরণে রেখেছেন এবং সুন্দর উপদেশমূলক কথা বললেন। তাছাড়া আমার অন্য শিক্ষকদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। কারণ তাঁদের স্নেহ ও ভালোবাসা আমাকে এত দূর পৌঁছতে শক্তি জুগিয়েছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার স্কুলে কী কী সহ-শিক্ষা কার্যক্রম হতো?

আফসানা আক্তার তন্নি : স্কুলে আমি গার্লস গাইড করেছিলাম। সাংস্কৃতিকভাবেও খুব কর্মতৎপর ছিলাম। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে, দুটোতেই ছিলাম বিএনসিসির সাথে সংযুক্ত। রচনা, আবৃত্তি, হামদণ্ডনাত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম এবং পুরস্কারও পেতাম।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি সামাজিক/সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কোন কোন শাখায় চর্চা করেন? সবচেয়ে ভালো লাগে কোন শাখাটি?

আফসানা আক্তার তন্নি : আমি সাড়ে ৪ বছর বয়স থেকে নৃত্য শিখছি। আমার নৃত্যে হাতেখড়ি তন্ময়ী রক্ষ্মিত বুলি ম্যাম। সংগীত নিকেতনের সাথে যুক্ত ছিলাম। পরবর্তীতে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ৪ বছর কোর্স সম্পন্ন করি। আমার ভরতনাট্যম নৃত্যের গুরু শ্রী মধুমিতা পাল ম্যাম। তিনি ভারত থেকে এসে এখানে কর্মশালা করাতেন, তখনই ম্যামের সাথে পরিচয়। আর কত্থক নৃত্যে ১ বছর কোর্স সম্পন্ন করি শ্রদ্ধেয় মুনমুন আহমেদ ম্যামের কাছ থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকাতে। ছোটবেলায় গানও শিখেছিলাম ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। তারপর আর তা প্রতিনিয়ত চর্চা করা হয়নি। থিয়েটারের সাথে যুক্ত আছি, যখন আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন থেকেই। আমার নাট্যদলের নাম চাঁদপুর ড্রামা। আবৃত্তি প্রথমত আমি কোনো একাডেমিক শিক্ষা ছাড়াই করতাম, বিএনসিসির ক্যাম্পেই এর প্রথম যাত্রা। পরবর্তীতে আবৃত্তির প্রতি ভালোবাসা থেকে বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ, চাঁদপুর সংগঠনটিতে যুক্ত হই। শ্রদ্ধেয় মুক্তা পীযূষ ও ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার সাহচর্যে আবৃত্তি শিখছি।

আমি একজন স্কাউটস ও বিএনসিসির ক্যাডেট ছিলাম। সেই সাথে একজন রোটার‌্যাক্টর হিসেবে যুক্ত আছি রোটার‌্যাক্ট ক্লাব অব চাঁদপুর রূপসীর সাথে। সবচেয়ে পছন্দের বললে সবগুলোই। তবে বেশি ভালো লাগতো থিয়েটার অঙ্গন আর নৃত্য। আর আমার ক্যাম্প লাইফটাকে খুব মিস করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সামাজিক/সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রে আপনার বাবা-মায়ের ভূমিকা কেমন?

আফসানা আক্তার তন্নি : সত্যি বলতে, আমার মা-বাবার সমর্থন না থাকলে আমি এতদূর আসতে পারতাম না। আমার মা প্রচুর পরিশ্রম করেছেন, এখনও করছেন। তাদের ভালোবাসায় আর সহযোগিতায় আমাকে এখন অনেক মানুষই চিনেন এবং স্নেহ করেন। বাবা-মায়ের এই ভালোবাসা হচ্ছে আমার মূল শক্তি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : গান, কবিতা, আবৃত্তি, চিত্র প্রদর্শনী, নাটক ইত্যাদির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ কেমন?

আফসানা আক্তার তন্নি : এখন আস্তে আস্তে মানুষের মধ্যে সংস্কৃতির প্রতি অন্যরকম ভালোলাগা জন্মাচ্ছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সংস্কৃতির প্রতিটি শাখাই এখন স্বতঃস্ফূর্ত।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সৃজনশীল/সাংস্কৃতিক চর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ আপনি কী কী পুরস্কার পেয়েছেন?

আফসানা আক্তার তন্নি : জাতীয় পর্যায়ে লোকনৃত্যে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করি। একক অভিনয়ে অর্জন করি ২য় স্থান। ২০১৪ সালে অর্জন করি ‘প্রেসিডেন্টস্ স্কাউটস অ্যাওয়ার্ড’। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের একজন ক্যাডেট অ্যাম্বাসেডর হিসেবে সিঙ্গাপুর সফর করি। রোটারী ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্ট-৩২৮২ কর্তৃক আয়োজিত ‘রোটার‌্যাক্ট আইডল’-এ ফার্স্ট রানারআপ হই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : জাতীয় পর্যায়ে সংস্কৃতি অঙ্গনে আপনি কাদের দেখে অনুপ্রাণিত হন?

আফসানা আক্তার তন্নি : নৃত্য শাখায় আমার পছন্দের ব্যক্তি শিবলী স্যার। আর আসাদুজ্জামান স্যার, হুমায়ুন ফরিদী স্যারের অভিনয় খুবই ভালো লাগে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সামাজিক/সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আপনার সবচেয়ে আনন্দের দিন কোনটি? কেন আনন্দের দিন।

আফসানা আক্তার তন্নি : গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটারের নাটক ‘মধ্যরাতের মোলহেড’ মঞ্চায়িত হয়েছিলো বড় স্টেশন মোলহেডে। এটি মূলত চাঁদপুরে ঘটে যাওয়া গণহত্যার উপর ভিত্তি করে রচিত। এ নাটকে আমার চরিত্রের নাম ছিল ‘ছায়ামূর্তি’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি মহোদয়। তিনি আমার অভিনয় দেখে কেঁদে দিয়েছিলেন। নাটক শেষে যখন সকল কলাকুশলীর সাথে মঞ্চে কথা বলছিলেন, তখন আমাকে উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়ার সময় আচমকা জড়িয়ে ধরলেন এবং দোয়া করলেন। এই দিনটি আমার কাছে সত্যিই আনন্দের ও স্মরণীয়।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অবসর সময়ে কী করেন?

আফসানা আক্তার তন্নি : গান শোনা, মুভি দেখা আর আমার পোষা প্রাণীদের (বিড়াল) সাথে সময় কাটাই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়