বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৪১

*মতলবে ২৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ।। পাঠদান ব্যাহত*

রেদওয়ান আহমেদ জাকির
*মতলবে ২৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ।। পাঠদান ব্যাহত*

ক্যাপশন: ভানুরপাড় সপ্রাবির ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষ।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে থাকলেও বাধ্য হয়ে পরিচালিত হচ্ছে কোমলমতি শিশু-শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম।

বুধবার (১২ নভেম্বর ২০২৫) সরেজমিনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো দেখান।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণের পরিদর্শনে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ দেখানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ২৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে—১২৩ দিঘলদী সপ্রাবি, ২৮ উত্তর বাকরা সপ্রাবি, ভানুরপাড় সপ্রাবি, নাউজান সপ্রাবি, উত্তর দৌলতপুর সপ্রাবি, পশ্চিম নাগদা সপ্রাবি, তুষপুর সপ্রাবি, ১৭৬ ধলাইতলী সপ্রাবি, ১৫ কোটরবন্ধ সপ্রাবি, দক্ষিণ খিদিরপুর সপ্রাবি, পশ্চিম আঁচলছিলা সপ্রাবি, উত্তর নওগাঁও সপ্রাবি, বকচর সপ্রাবি, বিশ্বাসপুর সপ্রাবি, পশ্চিম আশ্বিনপুর সপ্রাবি, শাহপুর সপ্রাবি, কালিকাপুর সপ্রাবি, ১৫৬ কাশিমপুর সপ্রাবি, ডাটিকারা সপ্রাবি, উপাদী সপ্রাবি, মুন্সিরহাট সপ্রাবি, দক্ষিণ দিঘলদী সপ্রাবি ও চরমুকুন্দি সপ্রাবি। প্রথমদিকের ১২টি বিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। এভাবে বছরের পর বছর জরাজীর্ণ স্কুলগুলোতে চলছে পাঠদান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়গুলোর ভবনের চারদিকে কোথাও খসে পড়ছে পলেস্তারা, কোথাও আবার মাথার ওপর থেকে ঝরে পড়ছে ইট আর চুন-সুরকি। ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে বেরিয়ে আছে রড। বৃষ্টিতে ছাদ বেয়ে পড়ে পানি। কিছু বিদ্যালয়ের পেছনের অংশ হঠাৎ তাকালে মনে হবে ভূতের বাড়ি। অনেক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ স্টোররুমে পরিণত হয়েছে।

দিঘলদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের স্কুলটি ভাঙ্গাচুরা। বৃষ্টি এলে পানি পড়ে। মাঝেমধ্যে পলেস্তারা খসে পড়ে। আমরা ঝুঁকির মুখে পড়ালেখা করি। আমাদের অনেক ভয় হয় এ স্কুলে। বৃষ্টির সময় স্কুলে আসতে কষ্ট হয়। আমরা একটি সুন্দর স্কুল চাই।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা জানান, তারা অত্র স্কুল থেকে ২০২২ সালে ৫ম শ্রেণি পাস করেছেন ও বৃত্তি পেয়েছেন। তখন থেকেই বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ। বর্তমানে এতোটাই জরাজীর্ণ যে, ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করতে আগ্রহী নয়। দেখা যাচ্ছে, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করলেও তারা দুর্ঘটনার ভয়ে বিদ্যালয়ে আসে না। আমাদের এ গ্রামে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় কোনো কেন্দ্র নেই। আমরা চাই আমাদের বিদ্যালয়টি সাইক্লোন সেন্টার হিসেবে নতুন ভবন করা হোক।

পশ্চিম নাগদা সপ্রাবির অভিভাবক মো. মামুন মিয়া, ভানুরপাড় সপ্রাবির আমেনা বেগম ও মহসিন হোসেন বলেন, বাচ্চারা ভয়ে যেতে চায় না স্কুলে। স্কুলের ছাদ ভেঙ্গে পড়ে ঘটেছে দুর্ঘটনা। ওদের স্কুলে পাঠিয়ে থাকতে হয় আতঙ্কে।

ভানুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হোসনেয়ারা বেগম বলেন, আমার দেখা এমন ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এ উপজেলায় একটিও নেই। সরকারি চাকরি করি, এজন্যে পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান দিতে হচ্ছে। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চায় না।

ভানুরপাড় সপ্রাবির প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মনোয়ারা বেগম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ আছে। পাঠদানের কোনো পরিবেশ নেই। দেয়াল ও ছাদের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। কিছুদিন আগে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে, শিক্ষার্থী আহতও হয়েছে।

এদিকে দিঘলদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমি ২০১৮ সালে এ বিদ্যালয়ে যোগদান করতে এসে দেখি জরাজীর্ণ। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ভবন একেবারে ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত হওয়ার পরও কষ্ট করে এই শ্রেণিকক্ষেই পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মামুন মিয়া বলেন, অত্র উপজেলার ২০ থেকে ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন আছে খুবই জরাজীর্ণ। যেখানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত পাঠদানের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের ভবনের জন্যে আবেদন করা আছে। বরাদ্দ পেলেই নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাজমুন নাহার বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছি, যেন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

IMG-20251112-WA0025-1

ক্যাপশন: মতলব দক্ষিণের ১২৩ নং দিঘলদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়