চাঁবিপ্রবিতে শীতের আলাপন ও পিঠা উৎসব

ঋতুর রঙে মিশুক ঐতিহ্যের স্বাদ, প্রাণের মেলায় জ্বলুক জ্ঞানের প্রদীপবাদ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চাঁবিপ্রবি)-এর উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বর্ণাঢ্য বইমেলা, শীতের আলাপন ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উদ্দীপনা ও আনন্দের সঞ্চার করে।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি ২০২৫) বেলা ১২টায় প্রধান অতিথি চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. পেয়ার আহম্মেদ এই আয়োজনের উদ্বোধন শেষে তিনি পিঠা ও বইয়ের স্টল পরিদর্শন করেন এবং ১৫০জন অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন।

পিঠা উৎসবে বাহারি পিঠা প্রদর্শনীর আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। দিনব্যাপী পিঠা মেলার পাশাপাশি বই মেলার আয়োজন করা হয়। ইতিহাস ঐতিহ্যের নানা বিষয় ফুটে উঠে স্টলগুলোতে। স্টলগুলোর মধ্যে ছিলো মৌ-পুলি, ইঞ্জিনিয়ারিং পিঠা ঘর, বাণিজ্য পিঠা ঘর, ঢেঁকির বৈঠকশালা, পিড়া যাবে পেটুক বাড়ি, কোডার বাইটস, পিঠার আড্ডা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বিভাগ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি এবং ব্যবসায় প্রশাসন এই আয়োজনে একটি করে স্টল নিয়ে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নামে একাধিক স্টল স্থাপন করা হয়।

রসনাবিলাসী প্রিয় পিঠাপুলির মধ্যে ছিলো মুগ পাকন, নারিকেল নাড়ু, মতিচুর, শামুক পিঠা, বুটের বরফি, ক্ষীর পাটিসাপটা, লাড্ডু, অন্নদা, পুডিং, জামাই পিঠা, বউ সুন্দরী পিঠা, ভাজা পুলি, চমশম পিঠা, নুনের পিঠা, গাজরের পিঠা প্রভৃতি।

উৎসবের মূল আকর্ষণ ছিলো বইমেলা, যেখানে বিভিন্ন প্রকাশনা ও বিভাগের নিজস্ব প্রকাশনা প্রদর্শিত হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের বই সংগ্রহের সুযোগ পায় এবং সাহিত্য, প্রযুক্তি ও ব্যবসা সংক্রান্ত বই নিয়ে আলোচনা করা হয়।

পুরস্কার ও চ্যাম্পিয়ন স্টল ঘোষণা

প্রতিযোগীদের মধ্যে একটি স্টলকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় এবং সব স্টলের জন্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়।

বইমেলা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিএসই বিভাগের প্রভাষক মোস্তাফিজ আহমেদ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই বইমেলা ও উৎসব আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি করবে এবং আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে আরো শক্তিশালী করবে। ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন নিয়মিতভাবে হবে বলে আমি আশা করি।

দিনব্যাপি এমন আয়োজন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. পেয়ার আহম্মেদের উপস্থিতি, প্রিয় শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস, তিন বিভাগের সম্মানিত চেয়ারম্যান মণ্ডলী, শিক্ষকগণ, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এবং অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সকল কমিটি, পিঠা উৎসব বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক খাদিজা খাতুন টুম্পা ও সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ সবুজ, বইমেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মোস্তাফিজ আহমেদ ও সদস্য সচিব জারাফাত ইসলাম, শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদুল ইসলাম ও সদস্য সচিব মো. নাসিম উদ্দিনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে। এই আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন এবং ফলে আয়োজনটি মিলনমেলায় পরিণত হয়। আয়োজনটি শুধুমাত্র জ্ঞানচর্চা ও পঠন-পাঠনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো না। বরং এটি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মিলনমঞ্চ হয়ে উঠে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এমন আয়োজন শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি ও মননশীল চর্চাকে আরো উৎসাহিত করবে বলে আশা করছেন পর্যবেক্ষকগণ'।