প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:৫০
চাঁদপুরে বড় ইলিশের সংকট, বাজার ভরছে ৯০ ভাগ ছোট ইলিশে

চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনায় মিলছে না বড় ইলিশ। যা পাওয়া যাচ্ছে, তার ৯০ ভাগই ছোট ইলিশ। ইলিশের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে বড় সাইজের ইলিশের দেখা মিলছে না বললেই চলে। যে পরিমাণ মাছ ধরা পড়ছে, তার মধ্যে ছোট ইলিশই বেশি—যা চাঁদপুরের বিভিন্ন বাজারে স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ তথ্য দিয়েছেন নদী পাড়ের জেলে ও ব্যবসায়ীরা।
|আরো খবর
তাদের মতে, বড় ইলিশের দেখা কম মিলছে এবং জেলেদের জালে ছোট ও মাঝারি আকারের ইলিশই বেশি ধরা পড়ছে। ছোট মাছ বেশি ধরা পড়ার ফলে বড় ইলিশের সরবরাহ কমে গিয়ে বাজারে দামের ওপরও প্রভাব পড়েছে।
নদীতে নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও কাঙ্ক্ষিত বড় মাছ না পাওয়ায় বাজারে এখনো ছোট ইলিশই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে বড় ইলিশের দেখা মিলছে মাত্র ১০ ভাগের মতো।
গত ১ ডিসেম্বর শহরের বড় স্টেশন ইলিশ মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশই ছোট আকারের ইলিশ। মৎস্য আড়ত থেকে বিভিন্ন ছোট বাজারে ২০০ গ্রাম থেকে ৪০০–৫০০ গ্রামের ইলিশই বেশি আমদানি হচ্ছে।
এর কারণ হিসেবে জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়াসহ নানা কারণ। এতে প্রাণীজগতের জৈবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পানির তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মাছের আকার ও পরিপক্বতায় পরিবর্তন দেখা দেয় বলে সংশ্লিষ্ট গবেষণা কর্মকর্তারা জানান। তারা বলেন, আকারে ছোট হলেও মাছের পরিপূর্ণতা রয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে ১০–২৫ সেন্টিমিটার ইলিশ ঝাটকা হিসেবে পরিচিত। এই ঝাটকাই একসময় বড় হয়ে পরিপূর্ণ ইলিশে পরিণত হয়। ছোট মাছ ধরা পড়ার অন্যতম কারণ হলো নিষিদ্ধ সময়ে অবৈধ কারেন্ট জাল বা ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার। পাশাপাশি শীতকালে এক শ্রেণীর অসাধু জেলেদের সংঘবদ্ধ চক্র জাটকা নিধনের জন্য চাঁদপুর অঞ্চলে আসে, যা ছোট ইলিশের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেয়।
এছাড়া প্রাকৃতিক কারণ—যেমন নদীতে পানির পরিমাণ কমে যাওয়া—জেলেদেরকে ছোট মাছ ধরতে বাধ্য করে। নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের অভিযান থাকা সত্ত্বেও কিছু অসাধু জেলে অবৈধ মাছ ধরা থেকে বিরত থাকে না। নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে অনেক সময় ডিমওয়ালা ইলিশও ধরা পড়ে, যা ভবিষ্যৎ বংশধরদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
জেলে মোবারক জানান, “বড় মাছ দক্ষিণাঞ্চলের জেলেরা ধরে ফেলে। তাই আমাদের এখানে বড় মাছ পাওয়া যায় না। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ও আছে।” তার ভাষ্য, অনেক জেলে টনিক জাল ব্যবহার করে ঝাটকা নিধন করছে।
ইলিশ ব্যবসায়ী ও মৎস্য বনিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ বন্দুকসী জানান, “আগে অর্ধেক ছোট অর্ধেক বড় ইলিশ পাওয়া যেতো। শতকরা ৫০ ভাগ ছোট ও ৫০ ভাগ বড় ইলিশ এই ঘাটে উঠতো। এখন ১০০ ভাগের মধ্যে ১০ ভাগও বড় ইলিশ পাওয়া যায় না। ৯০ ভাগই ছোট।”চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু কাওসার দিদার বলেন, “ওয়াটার টেম্পারেচার হাই হলে মাছের পরিবর্তন আসে। কিছু মাছ আগেভাগে পরিপক্ব হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে। তাছাড়া নদীর পানি দূষণ, বর্জ্য এবং স্রোতের গতি পরিবর্তন হওয়াও অন্যতম কারণ।”
ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, “আজকের ঝাটকা আগামী দিনের বড় ইলিশ। কিন্তু আমরা ছোট ইলিশকে বড় হওয়ার সুযোগ দিচ্ছি না। সংরক্ষণ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা জরুরি।” তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর পানি দূষণ, অক্সিজেন সংকট, গতিপথ পরিবর্তন ও জাটকা নিধন ইলিশের সুষম অবস্থার জন্য বড় হুমকি। সূত্র : আলোকিত বাংলাদেশ।








