বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫, ০০:০২

ফরিদগঞ্জে কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি

সমিতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে এলজিইডি, ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

এমরান হোসেন লিটন
সমিতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে এলজিইডি, ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

ফরিদগঞ্জে কাগজে-কলমে পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি থাকলেও বাস্তবে নেই এর কোনো অস্তিত্ব। অভিযোগ রয়েছে, প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রতিটি সমিতি অডিট সম্পন্ন করে থাকে সমবায় অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা। সমবায় অফিসের টাকার বিনিময়ে দেয়া প্রতিবেদন দেখিয়ে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় একটি অসাধু চক্র। যে চক্রের মূল হোতা সমবায় ও এলজিইডির অসাধু কর্মকর্তারা। সমবায় অফিসের কর্মকর্তাদের সমিতির অফিসে গিয়ে অডিট সম্পন্ন করার নির্দেশনা থাকলেও তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অফিসে বসে দায়সারা অডিট রিপোর্ট দিয়ে থাকেন। এতে লাখ লাখ টাকা চলে যায় একটি অসাধু চক্রের হাতে। এই অসাধু চক্র ২০০৮ সাল থেকে সরকারের লাখ লাখ টাকা পানি ব্যবস্থার উন্নয়নের নামে লুটপাট করে আসছে।

এমনই ঘটনা ঘটেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসের নিয়ন্ত্রণাধীন পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতিগুলোর মধ্যে। বাস্তবে ফরিদগঞ্জের উপজেলা সমবায় অফিসের নিয়ন্ত্রণাধীন পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির কোনো ধরনের অস্তিত্ব সরজমিনে পরিলক্ষিত হয়নি। সমিতিগুলোর ব্যবহৃত ঠিকানায় গিয়ে দীর্ঘদিনেও মিলেনি কোনো তথ্য। সমিতির কার্যকরী পরিষদের ব্যক্তিদের ঠিকানায় গিয়ে জানা যায় তারা সবাই পারিবারিক সদস্য। তাদের মধ্যে আবার কেউ মৃত, অনেকে দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে অবস্থান করছেন।

পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির নীতিতে বলা হয়েছে, 'পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি', যার উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কোনো উপ-প্রকল্প অথবা স্কীমের মাধ্যমে এর এলাকাভুক্ত উপকারভোগীদের সমবায় সমিতির সদস্যভুক্ত করিয়ে সেবা বা সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন'। কিন্তু ফরিদগঞ্জের পানি ব্যবস্থাপনা সমিতিগুলোর এমন নীতিমালা কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে পারিবারিক কমিটি মাত্র।

সমবায় অফিসের দেয়া তথ্য মতে, চৌধুরী মিজি খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি., সাং- লক্ষ্মীপুর, পোঃ লক্ষ্মীপুর উপজেলা : ফরিদগঞ্জ, জেলা : চাঁদপুর, রেজি. ৯১৫/চাঁদ/০৮, তাং ১৯/০৩/২০০৮; শ্রীকালিয়া খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি., সাং- শ্রীকালিয়া, পোঃ গল্লাক বাজার, উপজেলা : ফরিদগঞ্জ, জেলা : চাঁদপুর, রেজি. ৯১৬/চাঁদ/০৮, তাং ১৯/০৩/২০০৮; সুবিদপুর খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি., সাং- সুবিদপুর, পোঃ সুবিদপুর, উপজেলা : ফরিদগঞ্জ, জেলা : চাঁদপুর, রেজি. ৩০/চাঁদ/১৪, তাং ১০/১২/২০১৪;

আইচারবাগ খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি., সাং- আইচারবাগ, পোঃ লক্ষ্মীপুর, উপজেলা : ফরিদগঞ্জ, জেলা : চাঁদপুর, রেজি. ০১/ফরিদ/০৮, তাং ৩১/০৩/২০০৮; মনতলা চালিয়াপাড়া খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সঃ লি., সাং- চালিয়াপাড়া, পোঃ মনতলা উপজেলা : ফরিদগঞ্জ, জেলা : চাঁদপুর, রেজি. ৪২/চাঁদ/১৫, তাং ২০/১১/২০১৫। এই ৫টি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে এদের কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ এই সমিতিগুলোর নামে প্রতি বছর খাল কাটা ও ড্রেন মেরামতের জন্যে লাখ লাখ টাকা এমনকি কোনো কোনো বছর কোটি টাকার উপরে বরাদ্দ এনে আত্মসাৎ করে একটি অসাধু চক্র।

বিষয়টি নিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসের সহকারী পরিদর্শক শাহাবুদ্দিন বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা ও রাজনৈতিক নেতাদের অতিরিক্ত চাপের কারণে সমিতিগুলোর নিয়ম-কানুন ও কাগজপত্র সঠিকভাবে যাচাই বাছাই করতে পারিনি। মূলত এই সমিতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করে এলজিইডি অফিস, তাদের নিয়ম মতোই আমরা কাজগুলো করে দিতে হয়। তারাই সমিতির নামে বরাদ্দ এনে কাজ করায়। আমাদের কাছে শুধু ফাইল আসে।

এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় অফিসার দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি, কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা সমবায় কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন বলেন, অডিট মূলত সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে করার নিয়ম। ফরিদগঞ্জ অফিস অস্তিত্বহীন সমিতির কীভাবে অডিট করলো তা তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়