শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২২, ২২:৩৫

চাঁদপুর সদর উপজেলা মডেল মসজিদ : শুরুতেই ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

গণপূর্তের সাথে কথা বলার পরামর্শ জেলা প্রশাসকের

গোলাম মোস্তফা
চাঁদপুর সদর উপজেলা মডেল মসজিদ : শুরুতেই ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ

চাঁদপুর সদর উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণে শুরু থেকেই ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একেবারেই নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করা হচ্ছিল। বিষয়টি স্থানীয় জনগণের চোখে পড়লে এটি ফাঁস হয়ে যায়। এ সংক্রান্ত ভিডিও ভাইরাল হয়। পরে ঠিকাদার রাতের আঁধারে চুপিসারে নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে ফেলে।

সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে সরকারিভাবে প্রতিটি উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় চাঁদপুর সদর উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে পৌরসভার ১৩নং ওয়ার্ডস্থ গাছতলা ব্রীজ ও নির্বাচন অফিস সংলগ্ন পানির ট্যাংকি মোহনা নামক স্থানে। বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই মসজিদ নির্মাণ কাজ চলছে।

সরজমিনে দেখা গেছে যে, একেবারেই নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে শুরু করে মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ। শুরু থেকেই অনিয়মের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রথমে সিটু পাইলিং কাজ করেছে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে। নিচের পিলারে পাথরের পরিবর্তে দেয়া হয়েছে নিম্নমানের ইটের কণা দিয়ে ঢালাই। ফলে কাজের শুরুতে ব্যাপক অনিয়ম নিয়ে এলাকাবাসীর রয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ। গত কদিন আগে নির্মাণ কাজে ব্যবহারের জন্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যে পাথর এনেছে তা দেখতে অবিকল পাথর মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে এগুলো মাটি ও কয়লা। শুধুমাত্র মাটি ও কয়লার উপরে পাথরের আবরণ (রং) দিয়ে পাথর বলে চালিয়ে দেয়া ও নিম্নমানের খোয়া দিয়ে প্রতারণা করছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের পক্ষ থেকে চাঁদপুর পৌরসভার ১৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হক গাজী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর সদর উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মডেল মসজিদটি চাঁদপুর পৌরসভার ১৩নং ওয়ার্ড নির্বাচন অফিস ও চাঁদপুর মোহনা কালেক্টরেটর হাউজিং সংলগ্ন স্থানে নির্মাণের জন্যে স্থান নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সদর উপজেলা মডেল মসজিদটি নির্মাণের কাজ পায় একটি অসাধু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করে আসছে।

তিনি আরো জানান, আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত পাথরগুলো দেখতে পাথর মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে এগুলো মাটি ও কয়লার উপর পাথরের ন্যায় রং করা, যা দেখে হতভম্ব আমি ও এলাকার সচেতন মহল। এই নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করলে যে কোনো সময় মসজিদটি ভেঙ্গে পড়তে পারে। এতে মানুষ হতাহতসহ সরকারের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এতে দলের ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। তিনি আরো বলেন, আমি গোপন সূত্রে জেনেছি চাঁদপুর জেলার একটি উপজেলার শীর্ষ একজন জনপ্রতিনিধি এই মসজিদ নির্মাণ কাজের ঠিকাদার। শুধু তাই নয়, তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি ইউনিট বা উপজেলার নেতৃত্ব দেন। তিনি যদি এমন নিম্নমানের কাজ করেন তাহলে দলের ও সরকারের ভাবমূর্তি দেখবে কে? আমরা চাই কাজের গুণগতমান ঠিক রেখে উন্নতমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে আল্লাহর ঘর মসজিদটি নির্মাণ করা হোক এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নির্মাণ কাজে চরম দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তপূর্বক তাকে আইনের আওতায় আনা হোক।

এদিকে এলাকাবাসী পাথরের বিষয়ে অভিযোগ, মানববন্ধন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোর পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উক্ত পাথরগুলো রাতের আঁধারে ট্রাকে করে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে ফেলে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পার্টনার হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে কাজ করার অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা পাথরের অর্ডার দেয়ার পর তা কাজের সাইটে পাঠানো হয়। পরে নিম্নমানের অভিযোগ শুনে তাৎক্ষণিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে বলেছি পাথর ফেরত নেয়ার জন্যে, তারা পাথর ফেরত নিয়েছে। এর বাইরে তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তর চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রকিবুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যে পাথর এনেছে। এ বিষয়ে কাজের তদারকি কর্মকর্তা আমাকে জানানোর পর পরই আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাথর পরিবর্তনের নির্দেশ দেই। তাৎক্ষণিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাথর পরিবর্তনের জন্যে পাঠিয়েছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোনো অবস্থাতে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ করতে দেয়া হবে না। এর বাইরে তিনি আর কোনো কথা বলতে রাজী হননি।

এদিকে নিম্নমানের পাথরের বিষয়টির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে এটি চাঁদপুর কণ্ঠের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের নজরে আনা হয়। জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে পিডব্লিউডির সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। জেলা প্রশাসক যেহেতু জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতি, সেজন্যে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নিবেন বলে তাঁর কাছে প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়