প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৩১
নির্মাণাধীন ভবনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট শ্রমিকের মৃত্যুতে আহাজারি পরিবারে

ছোট্ট শিশু মিম একদিকে বাবার লাশের পাশে বসে একনাগাড়ে কেঁদে চলছে। অন্যদিকে কিছুক্ষণ পরপর তার ছোট অপর দুটি অবুঝ ভাই-বোনের চোখ মুছে দিচ্ছে। আবার আগের ঘরের সন্তান নিপা এতোদিন বাবাকে কখনো কাছে পেয়ে ডাকতে পারেনি নানার বাড়ি থাকার কারণে। কিন্তু আজ বাবার মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে এসে কোনোক্রমেই নিজেকে সামলাতে পারছে না কান্না থেকে। হয়তো তার কানে সেই গানটি বাজছিলো ‘মন্দ হোক ভাল হোক বাবা আমার বাবা’। পুরো বাড়ি জুড়ে কান্নার রোল। ছেলেকে হারিয়ে বাবা, স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী, গর্বের ধন বাবাকে হারিয়ে ৪ সন্তানসহ আত্মীয় স্বজন সকলেরই মুখে হাহাকার ও আহাজারি। বুধবার (১৯ নভেম্বর ২০২৫) সকালে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চররাঘব রায় গ্রামের খান বাড়িতে এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেছে। এর আগে ফরিদগঞ্জে একটি নির্মাণাধীন বহুতলবিশিষ্ট ভবনের রড ওঠানোর সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মো. মমিন খান (৪০) নামের এ নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
|আরো খবর
বুধবার (১৯ নভেম্বর ২০২৫) সকালে ফরিদগঞ্জ পৌর সদর এলাকার কালিরবাজার চৌরাস্তা নামক স্থানে এই ঘটনা ঘটে। পরে অচেতন অবস্থায় তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক মো. মমিন খানকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি একই উপজেলার গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চররাঘবরায় গ্রামের মাকসুদ খানের ছেলে।
মৃতের বাবা জানান, আমার ছেলে প্রতিদিনের ন্যায় সকালে কাজে গিয়ে ছিলো ঘটনাস্থলে। সেখানে ছাদের নিচ থেকে রড ওঠানোর সময় পাশ দিয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে আমার ছেলের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় কাউকে অভিযুক্ত করছি না, তবে তার স্ত্রী ও ৪ জন সন্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে টেনশন হচ্ছে।
আগের সংসারের মেয়ে নিপা বাবার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে এসেছেন। ছোট বেলা মায়ের সাথে নানার বাড়ি চলে গিয়েছিলো। কতোবার মনে করেছিলো বাবাকে জাড়িয়ে ধরে বাবা বলবে। কিন্তু তা হয়নি। আজ বাবার মৃতদেহের সামনে এসে নিজেকে আর সামলাতে পারছিলো না সে।
ছোট্ট মেয়ে মিম বাবার লাশের পাশে বসে শুধুই কাঁদছে। স্বজনরা বারবার এসে বাবার লাশের পাশ থেকে তাকে নিয়ে গেলেও আবারো এসে বাবার লাশের পাশে বসে শুধুই কাঁদছে সে।মমিন খানের স্ত্রী জানান, তার এখন কী হবে? সন্তানদের নিয়ে তিনি কী করবেন? কীভাবে সংসার চলবে? ভাঙ্গাচুরা একটি দোচালা টিনের ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই। এদিকে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে মো. মমিন খানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিবার, স্বজন ও প্রতিবেশীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ভবনের কাজের ঠিকাদার নজরুল ইসলাম জানান, গত দুবছর ধরে এই ভবনের কাজ চলছে। আমরা সকল কাজই সাবধানে করছিলাম। আজকে মমিন খান অসাবধানতাবশত ভুল স্থান দিয়ে রড ওপরে ওঠাতে গিয়ে নিজে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তার পরিবার যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমি এর সাথে একমত। পাটওয়ারী প্লাজার মালিক পক্ষের একজন ফরহাদ পাটওয়ারী জানান, আমাদের সাততলা ভবনের ওপরের উঠানোর সকল কিছুই পশ্চিম পাশ দিয়ে করা হয়। মৃত মমিন খান নিজেই সর্বদা এই বিষয়ে সতর্ক ছিলেন। কিন্তু আজ নিজেই দুর্ঘটনার শিকার হন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহআলম বলেন, শ্রমিকের কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি জেনেছি। কারো কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ দাফন করা হয়েছে।








