প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:৩৯
কুমিল্লায় যুবককে গলা কেটে হত্যার পর মহাসড়কের পাশে বালু চাপা
ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামীকে আটক করলো র্যাব

গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানাধীন মোস্তফাপুর এলাকায় বালুর নীচ থেকে আমিনুল ইসলাম (২২) নামে এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ভিকটিম আমিনুল ইসলাম কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট ও দেবীদ্বার এলাকার বন্ধুদের সাথে সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে গত ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টায় নিজ বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর সর্বশেষ গত ১০/০৯/২০২৫ তারিখ বিকেল আনুমানিক ৫টা ২৫ মিনিটে ভিকটিম তার পিতা আলী আজ্জম (৪৮)-এর সাথে মোবাইলে কথা বলে। পরবর্তীতে গত ১১/০৯/২০২৫ তারিখ দুপুর ১টা ৫ মিনিটে সদর দক্ষিণ থানা এলাকার জনৈক ফরিদ উদ্দীন ঘটনাস্থল হুমায়ুন এন্টারপ্রাইজের মালিকানাধীন বালু ভরাট করা উঁচু জমি দিয়ে তার ফসলি জমিতে যাওয়ার সময় বালুতে রক্ত এবং কিছু একটা বালু চাপা দেয়া অবস্থায় দেখে সন্দেহ হলে তৎক্ষণাৎ তিনি ৯৯৯ এ সংবাদ দেন। সংবাদ পাওয়ার পর কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বালু চাপা দেয়া অবস্থা থেকে ভিকটিমের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার মামলা নং-২১, তারিখ-১২/০৯/২০২৫ ইং, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। এ খুনের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। আলোচিত এই খুনের ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
|আরো খবর
এরই প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা নজরদারি, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও প্রাপ্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাতে র্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানাধীন কুতুপালং এলাকা হতে এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত প্রধান আসামী মো. সিরাজুল ইসলাম (২৭), পিতা-মফিজুল ইসলাম, মাতা-তাহেরা বেগম, সাং-মোহনপুর, থানা-দেবিদ্বার, জেলা-কুমিল্লাকে গ্রেফতার করে। এ সময় আসামীর হেফাজত থেকে ২টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডে জড়িত গ্রেফতারকৃত প্রধান আসামী মো. সিরাজুল ইসলাম (২৭) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন চাকুরিচ্যুত সদস্য। সে ৫ বছর সেনাবাহিনীতে চাকরি করার পর চাকরিস্থল থেকে ২০২১ সালে পলায়ন করে। আসামী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় নিজেকে সেনাবাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আসামী সিরাজুল চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভিকটিম আমিনুল ইসলামের (২২) নিকট থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রতারণামূলকভাবে নগদ প্রায় ১০ লক্ষ টাকা নেয়। ধৃত আসামী সিরাজুল ভিকটিমকে চাকুরি না দিয়ে বিভিন্নভাবে টালবাহানা করতে থাকে। যে কারণে ভিকটিম তার পাওনা টাকা ফেরত দেয়ার জন্যে আসামী সিরাজুলকে চাপ প্রয়োগ করলে ভিকটিম ও আসামী সিরাজুলের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ভিকটিম আমিনুল আসামী সিরাজুলকে হুমকি দিয়ে বলে যে, 'তোমার থেকে টাকা আদায় করতে আমার শনি-মঙ্গলবার লাগে না।' এই কথা শোনার পর আসামী সিরাজুল ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ০৯/০৯/২০২৫ তারিখ রাতে ভিকটিম সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে ধৃত আসামী সিরাজুলসহ অন্য আসামীদের সাথে দেখা করার পর ভিকটিমকে নিয়ে পদুয়ার বাজারস্থ পদ্মা আবাসিক হোটেলে রাখে এবং আসামী সিরাজুল অন্য আসামীদের নিয়ে পদুয়ার বাজারস্থ বিসমিল্লাহ আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই রাতেই আসামী সিরাজুল অপর আসামী সজিব ও সুমনদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমকে হত্যার পর পুঁতে রাখার জন্যে বালুতে একটি গর্ত খুঁড়ে পুনরায় তারা বিসমিল্লাহ হোটেলে চলে আসে। পরবর্তীতে গত ১০/০৯/২০২৫ তারিখ রাতে ধৃত আসামী সিরাজুলসহ অন্য আসামীরা পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ভিকটিমকে নিয়ে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানাধীন মোস্তফাপুর এলাকায় বালু ভরাট করা উঁচু জমিতে নিয়ে ভিকটিমের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে আসামীরা ভিকটিমকে পিছন দিক থেকে গলায় কুপিয়ে ও জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বালু চাপা দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে আসামীরা গ্রেফতার এড়ানোর জন্যে আত্মগোপন করে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে সে উক্ত হত্যাকাণ্ডের সাথে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।