প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫০
ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি
চাঁদপুর-ঢাকা নৌরুটে ডুবোচরের কারণে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনা

দক্ষিণে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী থেকে উত্তরে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার হচ্ছে চাঁদপুরের নৌ-সীমানা। এ সীমানার পদ্মা-মেঘনার চ্যানেল দিয়ে চাঁদপুর- ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ছোট-বড় প্রায় অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে।
এছাড়াও এ রুটে সবচেয়ে বড়ো যাত্রীবাহী নৌযান হচ্ছে
দক্ষিণাঞ্চলের শতাধিক লঞ্চ।
চাঁদপুর-ঢাকা রুটে নৌ-সীমানায় প্রতিবছর শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে প্রায়ই যাত্রীবাহী লঞ্চ, লাইটার জাহাজ ও মালবাহী ট্রলারসহ বিভিন্ন নৌযান জেগে ওঠা ডুবোচরে আটকা পড়ে। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে এ সমস্যা অব্যাহত থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
চাঁদপুরের মেঘনা নদীর পশ্চিম পাশে রয়েছে প্রায় ৩৫টির বেশি চর। শীত এলেই চরের মধ্যে লঞ্চগুলো আটকা পড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। অথচ অপরিকল্পিতভাবে বিগত সময়ে চাঁদপুরের এসব বিঘ্ন সৃষ্টিকারী চরের বালি উত্তোলন না করে ডিজাইন বহির্ভূত স্থান থেকে নদীর বালি উত্তোলন করায় শহর রক্ষা বাঁধ হুমকিতে পড়েছে। এছাড়া জীববৈচিত্র্যেরও ক্ষতি হচ্ছে।
নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং প্রসঙ্গে
লঞ্চ মালিক পক্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিনিধি
বলেন, নৌরুটগুলোতে নাব্যতা সংকট হলে সাধারণত লঞ্চের মাস্টার ও জাহাজগুলোর ক্যাপ্টেন বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সওজ বিভাগকে অবহিত করেন। তারাই সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। এদিকে নদীতে বর্তমানে এতো বাল্কহেড চলছে যে, এই বাল্কহেডের ধাক্কায় প্রায়ই বাতিসহ এর যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে। ডুবোচরের কারণে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে লঞ্চ ও যাত্রীরা।
এ বিষয়ে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, মেঘনা নদীর ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পেতে নদীর নাব্যতা রক্ষা করা জরুরি প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে নদীর ড্রেজিং প্রয়োজন। এতে নদীর ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে নদীর পাড়ের জনগণ।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন গবেষক বলেন, মেঘনা নদী একসময় ইলিশের জন্যে বিখ্যাত থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন ডুবোচর বা নদীর নাব্যতা না থাকায় প্রজনন মৌসুমে পর্যাপ্ত মা ইলিশ প্রবেশ করছে না। ফলে বর্তমানে মেঘনায় ইলিশ সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে।
তিনি আরো বলেন, শুধুমাত্র ডুবোচরের জন্যে যে নদী খনন বা ড্রেজিং প্রয়োজন তা নয়, ইলিশ সম্পদ রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং প্রয়োজন। আমরা দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত এ বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে আসছি। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।। ফলে ইলিশ সম্পদ রক্ষা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে।
বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর অফিসের নৌপথ সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলার একলাশপুর ও মোহনপুর এলাকায় বেশ কিছু ডুবোচর রয়েছে। মেঘনা নদীর নৌ রুটে আরো কিছু ডুবোচর রয়েছে। সেগুলো চিহ্নিত করে এবং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যে নদী পথ সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছে।
বাংলাদেশ নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক শরীফ আহাম্মদ মাহফুজ উল আলম মোল্লার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, চাঁদপুর-ঢাকা নৌরুটের নাব্যতা রক্ষায় ডুবোচরগুলোর ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থাগ্রহণ করার জন্যে আমরা গত সপ্তাহে চাঁদপুর থেকে একটি চিঠি পাঠিয়েছি। আশা রাখি শীঘ্রই কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবে।