রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   বয়ারচর সংযোগ ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন
  •   জার্মানিতে কঠিন হচ্ছে রাজনৈতিক আশ্রয়
  •   ইতালির দ্বীপে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ২১
  •   অভিভাবকহীনতায় দিশেহারা চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা
  •   আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৪, ২১:০৮

কোটা বিরোধী আন্দোলনে চাঁদপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ব্যাপক সহিংসতা

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥
কোটা বিরোধী আন্দোলনে চাঁদপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ব্যাপক সহিংসতা

কোটা সংস্কার বা কোটা বিরোধী আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। সে আন্দোলন আওয়ামী লীগ-বিএনপি সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মতো চাঁদপুর জেলায়ও আওয়ামী লীগ-বিএনপি সহিংস সংঘর্ষ ঘটেছে। চাঁদপুর জেলার মধ্যে হাজীগঞ্জ ও চাঁদপুর শহর ছিল সংঘর্ষ সহিংসতায় উত্তাল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অফিস ভাংচুর, জেলা বিএনপি সভাপতির বাসায় অগ্নিসংযোগ, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির ব্যবসায়িক অফিস, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ইব্রাহিম কাজী জুয়েলের হোটেল ও ব্যবসায়িক অফিস ভাংচুর, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল গাজী বাহারের বাসায় হামলা এবং পুলিশ, আন্দোলনকারী তথা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় চাঁদপুর শহর ও হাজীগঞ্জ। টানা চারদিনের এসব ঘটনায় চাঁদপুর জেলায় অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছে। মামলা হয়েছে প্রায় হাফ ডজন এবং আটক হয়েছে ৩৫ জন। তবে এসব ঘটনায় চাঁদপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে বলে সচেতন মহলের অভিমত। যার কারণে বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

গত সপ্তাহে রাজধানী ঢাকায় শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী তথা কোটা বিরোধী আন্দোলন ক্রমান্বয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। চাঁদপুর জেলায়ও এই আন্দোলন শুরু হয়। চাঁদপুরে গত মঙ্গলবার থেকে আন্দোলন দৃশ্যমানভাবে দেখা যায়। এরপর অন্যান্য উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন আর তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে নি। এটি সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলনকারীদের ভেতর ছাত্রদল ও শিবির ঢুকে পড়ায় এটি সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয় বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। আর তখনই আওয়ামী লীগ-বিএনপি অফিস ভাংচুর, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির অফিস ভাংচুর এবং জেলা বিএনপি সভাপতির বাসভবনে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এদিকে কোটা বিরোধী এই আন্দোলনটি যখনই সরকার বিরোধী আন্দোলনের দিকে চলে যায় এবং আওয়ামী লীগ-বিএনপি তথা ছাত্রদল-ছাত্রলীগ-শিবিরের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষের দিকে চলে যায়, তখন আন্দোলনের মাঠ থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পিছু হটতে থাকে।

বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চাঁদপুর শহরে সরকার দলীয় সংগঠনগুলোর সাথে সরকার বিরোধী সংগঠন ছাত্রদল-যুবদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আর এ সময়ই আওয়ামী লীগ-বিএনপি অফিস ভাংচুর, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির ব্যবসায়িক অফিস ভাংচুর এবং জেলা বিএনপি সভাপতির বাসভবন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রধান সড়কে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে সেখানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী একত্রিত হয়। অভিযোগ রয়েছে, তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভেতর ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের অনেক নেতা-কর্মী ঢুকে পড়ে। সেখানে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির বর্তমান এক সহ-সভাপতির নেতৃত্বে ছাত্রদল, যুবদল ও ছাত্রশিবিরের নেতৃস্থানীয় বেশ ক’জন সরাসরি উপস্থিত থেকে কোটা বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তাদের উস্কানিতেই অহিংস এ আন্দোলনটি সহিংসতায় রূপ নেয়। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তখন বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা নীরব থেকে কৌশলী ভূমিকা নেয়। যদিও আন্দোলনকারীরা ক্ষণে ক্ষণে পুলিশকে লক্ষ্য করে বিদ্রƒপাত্মক মন্তব্য করে পুলিশকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ তখন চরম ধৈর্যের পরিচয় দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। এদিকে আন্দোলনটি যখন ছাত্রদল, যুবদল ও ছাত্রশিবিরের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠ থেকে আস্তে আস্তে সরে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যার পর ছাত্রদল, যুবদল ও ছাত্রশিবিরের বেশ কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতা-কর্মী প্রথমে শহরের মিশন রোড মোড়ে অবস্থিত জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ জহির উদ্দিন মিজির ব্যবসায়িক অফিসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। পরে তারা জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালায়। তারা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে থাকা দলের দুটি পাতা স্ট্যান্ড ভেঙ্গে ফেলে এবং অফিসে ঢোকার প্রধান ফটকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। তবে এ সময় ফটকটি ভেতর থেকে লাগানো থাকায় হামলাকারীরা ভেতরে ঢুকতে পারে নি।

এদিকে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির অফিস এবং আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা ও ভাংচুরের পর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা একত্রিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুললে তখন উভয় পক্ষ সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রবল প্রতিরোধের মুখে ছাত্রদল, যুবদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা এক পর্যায়ে পিছু হটে। এরপর জেলা বিএনপি অফিস এবং জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসভবনে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় দফা রাত প্রায় সাড়ে নয়টার দিকে জেলা বিএনপি সভাপতির বাসভবনে পুনরায় হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। আগুনে তার বাসার নিচতলার আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে চক্ষু হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ইব্রাহিম কাজী জুয়েলের হোটেল ও তার ব্যবসায়িক অফিসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয় এবং শহরের গুয়াখোলায় জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল গাজী বাহারের বাসায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।

এ ঘটনায় সেই রাত এবং পরদিন পুরো শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। পরদিন শুক্রবার জুমার নামাজের পর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ শহরে জোরালো অবস্থান নেয়। এদিন জেলা বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি থাকলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। এদিকে শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে হাজীগঞ্জে সরকার দল ও বিরোধী দলের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলতে থাকে। হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ ছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকে নেয়া পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ হাজীগঞ্জে অবস্থান নেয়। সরকার বিরোধীদের সাথে পুলিশেরও সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ চিরাচরিতভাবে হাজীগঞ্জ বাজারের পূর্ব অংশ ও পশ্চিম অংশে বিএনপি-আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। রাতভর এবং পরদিনও থেমে থেমে সংঘর্ষ চলতে থাকে। অবশেষে শনিবার থেকে কারফিউ জারি হওয়ার পর আস্তে আস্তে পরিবেশ শান্ত হতে থাকে।

এদিকে রোববার দেশের সর্বোচ্চ আদালত কোটা সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বাতিল করে মেধার কোটা ৯৩% করার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়। এ রায়ের দ্বারা বৈষম্যবিরোধী তথা কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি আশাতীতভাবে পূরণ হওয়ায় তারা তাদের শাট ডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়। গতকাল মঙ্গলবার সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপর থেকেই পরিস্থিতি চাঁদপুরসহ সারাদেশে স্বাভাবিক হয়ে যায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়