প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৩, ১৯:০০
নিষেধাজ্ঞা শেষে চাঁদপুরে ইলিশ ধরা পড়ছে কম, দামও বেশি
টানা দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর মেঘনা-পদ্মা নদীতে আবারো ইলিশ আহরণে নেমেছেন চাঁদপুরের জেলেরা। ১ মে,সোমবার থেকে নদীতে মাছ ধরা শুরু হলেও প্রত্যাশিত মাছ পাচ্ছেনা বলে জেলেরা জানিয়েছেন। তবে নদীর চারদিক থেকে স্বল্প পরিমাণে ইলিশ সহ অন্যান্য মাছ ঘাটে আসায় চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটের ছোট বড় আড়তগুলো আবরো কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে।পূর্বের ন্যায় মাছ ক্রয় বিক্রয় কাজে নেমে পড়েছেন ইলিশ ব্যাপারি ও মৎস্য আড়তদাররা । যদিও প্রথমদিন নদীতে কাঙ্খিত ইলিশ না পাওয়ায় মাছঘাট ছিল প্রায় ইলিশশূন্য।হাতেগোনা দুই- চার মন ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে বলে ঘাটের ইলিশ বিক্রেতারা জানান। তবে মাছ ধরা শুরুর এক দুই দিন পর ঘাটে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ। গত দুইদিন ধরে ঘাটে ৩০০ থেকে ৪০০ মণ ইলিশ আসছে বলে জানান আড়তদাররা।যার মধ্য লোকাল নদীর মাছ খুবই কম।চাঁদপুর পাইকারি আলোতে এখন যে পরিমাণ ইলিশ আসছে তার সিংহভাগই নোয়াখালী লক্ষীপুর অঞ্চলের নদী ও সাগরের ইলিশ বলে জানা যায়। ইলিশের আমদানি কম হওয়ায় মাছের দামও অনেক বেশি বলে দাবি ক্রেতাদের।
|আরো খবর
বৃহস্পতিবার সকালে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাট ঘুরে দেখা যায়,নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ঘাটে ইলিশ সহ বিভিন্ন ধরনের মাছের সরবরাহ বাড়ায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে ঘাটে। আড়তদারদের হাঁকডাকে মুখরিত ঘাট এলাকা। আবার শ্রমিকরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন প্যাকেজিংয়ের কাজে। তবে এ দৃশ্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এরপরে প্রায় ফাঁকা থাকছে আড়ত। ক্রেতাদের দাবি, এখনো দাম হাতের নাগালের বাইরে। এতে মাছ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ক্রেতারা বলছেন, অভিযানের পর এখন ঘাটে মোটামুটি মাছ দেখা যাচ্ছে। তবে মাছের দাম স্বাভাবিক না। আর আড়তদাররা বলছেন, যখন বেশি মাছ ধরা পড়বে তখন দাম কমবে। মাছঘাটের কয়েকজন বিক্রেতা জানান, চাঁদপুরের এক কেজি সাইজের লোকাল ইলিশের দাম ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা। আর একই ওজনের দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা ইলিশের দাম ১৬০০ টাকা। প্রতিটি ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম সাইজের ইলিশের কেজি পড়ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা। আর চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ হলে তা ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা। আর ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ এক হাজার টাকা ও চাঁদপুরের লোকাল ইলিশ হলে তা ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে গতকাল মাছঘাটে বড় সাইজের ইলিশের পরিমাণ ছিল একেবারেই কম। চাঁদপুরে বাড়ি ঢাকায় ব্যবসা করেন জব্বার মিয়া নামে এক ক্রেতা বলেন, ঘাটে আসলাম ইলিশ নেওয়ার জন্য। কিন্তু যে দাম তাতে মাছ কেনা সম্ভব না । দেখি পরে আবার আসবো। যদি এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম এক হাজার টাকার মধ্যে আসে তখন নেবো।
ঘাটের আড়তদার সুমন বলেন, প্রথমদিনের তুলনায় এখন মাছের সরবরাহ কিছু বেশি এবং ক্রেতাও বাড়ছে। চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর মাছও কিছুটা এসেছে। তবে পরিমাণ অনেক কম। আর নোয়াখালী, সন্দীপ ও হাতিয়ার মাছ একটু বেশি এসেছে। ঘাটে আসা ইলিশের বেশির ভাগ ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের। বড় ইলিশের পরিমাণ কম। সম্রাট নামে আরেক আড়তদার বলেন, বর্তমানে সবকিছুর দাম বাড়তি, জেলেদের খরচ বেড়েছে। যার কারণে মাছের দাম বাড়তি। তাছাড়া আমাদের চাঁদপুরে ইলিশের যে চাহিদা রয়েছে তার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম হওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে দামে। চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শবেবরাত সরকার বলেন, গত মঙ্গলবার ও বুধবার চাঁদপুরে মাছের সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও এখন কম। আজকে (বৃহস্পতিবার) প্রায় এক থেকে দেড়'শ মণের কাছাকাছি ইলিশ ঘাটে এসেছে। তিনি বলেন, ইলিশ প্রাপ্তির মৌসুম হলো আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস। তখন জেলেদের জালে অনেক ইলিশ ধরা পড়বে। তবে আমরা আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হলে নদীতে পানি বাড়লে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার ইলিশ বেশি ধরা পড়বে। তখন সরবরাহ বাড়লে মাছের দাম কমবে বলে ধারণা করছি। এদিন ইলিশের পাশাপাশি লোকাল নদীতে ধরা পড়া বড় বড় কিছু আইড় মাছ ঘাটে দেখা গেছে।
মাছ ঘাটের মৎস্য আড়তদার ইউসুফ বন্ধকে বন্দুকশী জানান, দুই মাসের অভিযান দিয়ে লাভ কি? অভিযানের সময় জেলেরা জাটকাসহ অনেক মাছ ধরেছে।এখন দেখার অপেক্ষা ভরপুর সিজনে ইলিশ ধরা পড়ে কিনা। চাঁদপুর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার জাটকা রক্ষায় চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা শিকার করার অপরাধে পহেলা মার্চ থেকে 30 এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাসে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্সের অভিযান ৮১৪টি অভিযান পরিচালনা ও ৩৪৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও ১৬২টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ৮৫ লাখ মিটার কারেন্ট জাল ও ৩৮ মেট্রিকটন জাটকা জব্দ করা হয়েছে । ৩৪৭টি মামলায় আটক ৩৭১ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে জেলে প্রেরণ করা হয়। যা বিগত বছরের অভিযানের চেয়ে বেশি। অপরদিকে পর্যবেক্ষক মহলের মতে, এবছর জাটকার উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।নদীতে বেশি পরিমাণে থাকে দেখে লোভ সামলাতে পারেনি চাঁদপুর-শরীয়তপুর ও মুন্সিগঞ্জের জেলেরা। নিষেধাজ্ঞা সময় বহু জেলে নদীতে গেছেন এবং জাটকা সহ অন্য মাছ ব্যাপক ধরেছে। আবার প্রশাসনের অভিযানে পাচারকালে বিপুল পরিমাণ জাটকা চালান জব্দ করা হয়।এইসব জাটকা নদীতে বাঁচানো যেতো সামনের ইলিশ মৌসুমে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেত।