রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

শারদীয়ার আবাহনী
অনলাইন ডেস্ক

শ্রাবণের তুমুল দাপট শেষে সাদা মেঘের কোমল শুভ্র সাজে নীল আকাশের পশ্চাৎপট নিয়ে আবির্ভূত হয় শরৎ। নদীর তীর ধরে সারিবাঁধা কাশফুলের সমারোহে সাদা বকের মিলনমেলায় শরৎ হয়ে ওঠে ঋতুর রাজা। শিশিরে সিক্ত ভোরে শিউলির শোভাজুড়ে শরতের শমিত শৌর্যে নিসর্গ হয়ে ওঠে অতুল মোহনীয়। নীলাম্বরী সাজে সজ্জিতা বাঙালি প্রকৃতির মাঝে শরৎ যখন জেঁকে বসলেই শোনা যায় উৎসবের বাদ্যধ্বনি।

পিতৃপক্ষকে অতিক্রম করে দেবীপক্ষের সূচনায় শারদীয়ার আবাহন বেজে ওঠে গ্রাম বাংলায়। এ উৎসবে ধর্মীয় আবহ যতোটুকু তার চেয়ে অধিক হলো মিলনমেলা। প্রতিমায় আচার থাকে যতোটুকু, তার চেয়ে অধিক আচার জড়িয়ে থাকে সম্প্রীতির মোহনায়। কৈলাস হতে যিনি আসেন তাঁর পুত্রকন্যা সমাহারে মর্ত্য,ে তিনি যেনো দেবী নন, তিনি এক আবহমান বাঙালির কন্যা ও মাতৃরূপের মৃন্ময়ী রূপ। বছরে একবার বিবাহিতা নারী তার বাপের বাড়িতে যেমন নায়র আসে, তেমনি শারদীয়া মায়েরও আগমন ঘটে মর্ত্যধামে তাঁর পিতৃগৃহে। তাঁর পুত্রকন্যারূপী যারা আসেন তারাও বাঙালির আকাক্সক্ষার মৃন্ময়ী রূপ। বাঙালি জীবনে ধন-বিদ্যা সকলই কাক্সিক্ষত। কাক্সিক্ষত সিদ্ধি ও আত্মরক্ষা। তেমনি আরো কাক্সিক্ষত সম্মান ও স্বস্তি। এসব কিছুকেই দেবী দুর্গার আবাহনে সমন্বয় করে মমতাময়ী মা রূপে তাঁকে পূজা করা হয়।

মা সর্বদা পূজনীয়া। মায়ের কাছে আশ্রয় ও শরণ যেমন কামনা করে মানুষ তেমনি দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনেও মায়ের হস্তক্ষেপ বাঞ্ছনীয়। মা-কে বরণের মধ্য দিয়ে শুভশক্তির বরণ ও উদ্বোধন প্রকাশিত হয়। বারবণিতা হতে বিপ্রজন- সকলের সম্মিলিত আয়োজন ও অংশগ্রহণে সার্বজনীনতার রূপ লাভ করে উৎসব। বারোয়ারি পূজা বলেই, আনন্দ-উৎসব গৃহে নয়, আঙিনা ও মণ্ডপে মণ্ডপে শোভিত হয়। গলিতে-ঘাটায় ঢাকের বাদ্যে উপচেপড়ে খুশি।

উৎসবের মুখ্য চেতনা হলো সম্প্রীতি। এখানে জ্ঞানের সাথে ধনের যেমন সম্প্রীতি ঘটে তেমনি সনাতনের সাথে আধুনিকতারও সমন্বয় ঘটে। সর্বাধুনিক বিশ্বাস আর সনাতনী বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ নয় বরং প্রীতির বন্ধনে অটুট মানবিকতাকে প্রকট করাই হলো উৎসবের উদ্দেশ্য। আরতির মধ্যে তাই আর ধর্ম মুখ্য থাকে না, তা হয়ে যায় সংস্কৃতি। মা শারদীয়ার উৎসবের মধ্য দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নকেই মুখ্যত প্রস্ফুটিত করা হয়। বাঙালি নারীরা অবলা ও কোমল। নিজেদের জীবনের সিদ্ধান্ত তারা নিজেরা নিতে পারে না। এইসব কোমলপ্রাণ নারীদের মধ্যে শক্তির সঞ্চার করতে শক্তির আধাররূপে মা দুর্গার মর্ত্যে অবতরণ।

কৃষিভিত্তিক বাঙালি সমাজে মায়েরা যেনো দশহাতসম্পন্না। তারা ভোরে অরুণের উদ্বোধন হতে শুরু করে রাতে শয্যাগত হওয়া অবধি দশভুজার মতোই কাজ করে। তাই তাদেরকে তুলনা করা হয় স্বয়ং দুর্গারূপে। দেবী দুর্গার অষ্টোত্তর শতনাম। তিনি সতী, তিনি সাধ্বী। তিনি কন্যা, প্রৌঢ়া এমনকি যুবতী বা কৈশোরি নামেও পরিচিতা। তিনি কুমারী রূপেও বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন নামে পূজিতা হন। তিনি এক বছর বয়সী কন্যারূপে সন্ধ্যা, দুই বছরে সরস্বতী, তিন বছরে ত্রিধামূর্তি, চার বছরে কালিকা, পাঁচ বছরে সুভগা, ছয় বছরে উমা, সাত বছরে মালিনী, আট বছরে কুঞ্জিকা, ন’বছরে কালসন্দর্ভা, দশ বছরে অপরাজিতা, এগারো বছরে রুদ্রাণী, বারো বছরে ভৈরবী, তেরো বছরে মহালক্ষ্মী, চৌদ্দ বছরে পঠিনায়িকা, পনেরো বছরে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে অম্বিকা নামে পূজোপ্রাপ্ত হন। এছাড়াও দেবী দুর্গা শঙ্করের সঙ্গিনী বলে শঙ্করী, দেবতা বা সুরের ঈশ্বরী বলে সুরেশ্বরী, গণেশের মা বলে মহোদরী এবং পাতালে গায়ত্রী নামে পূজিতা। যে নামেই দুর্গাকে ডাকি না কেনো, বাঙালি জীবনে দুর্গা হলো দুর্গতিনাশিনী এবং মহিষাসুর মর্দিনী।

দুর্গা অস্ত্রধারী যেমন তেমনি মঙ্গলধারীও। দুর্গার পূজায় নয়টি উদ্ভিদের পাতার উপকরণ লাগে যা নবপত্রিকা নামে পরিচিত। কলাপাতা, সাদা অপরাজিতা, হলুদ, জয়ন্তী, বেলপাতা, দাড়িম, অশোক, মানকচু ও ধান এই নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে কল্পিত হয়। এই নয় দেবী হলেন রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী, কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা, হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী, বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা, দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা, অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রী চামু-া ও ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী। এই নয় দেবী একত্রে ‘নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা’ নামে পূজিতা হন।

শারদীয়ার আবাহন মূলত আবহমানকালের বাঙালিয়ানারই বহিঃপ্রকাশ যা উৎসবময়তাকে প্রকাশিত করে। বাঙালি সর্বদাই সমাজবদ্ধ জীব। বাঙালির গোষ্ঠীপ্রীতি ও উৎসবপ্রীতি যে কোনো উছিলাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। শারদীয় দুর্গা পূজাও বাঙালির উৎসবপ্রীতির অনন্য নিদর্শন। দেবী দুর্গার আখ্যানে যেমন অসুরের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়, তেমনি বাঙালি সমাজেও কতিপয় সাম্প্রদায়িক অসুরের কুকর্মের নিদর্শন আমরা প্রতিবছর দেখতে পাই। শরতের শুরুতে নির্মীয়মাণ দুর্গা প্রতিমায় আঘাত করে এরা নিজেদের অসুরত্বের পরিচয় তুলে ধরে। এদের অন্তর্চক্ষুতে জ্ঞানের সম্মিলন ঘটিয়ে সম্প্রীতির মঙ্গলময়তায় শতভাগ শুভ হোক শারদীয়ার মর্ত্যাগমন- এই হোক এবারের শারদাবাহনের মূল প্রতিপাদ্য। মহামারি জয় করে জীবনে স্বাভাবিকতা ফিরে আসুক। উৎসব সবার জন্যে বয়ে আনুক আনন্দবার্তা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়