রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

রোবটের নীল চোখে
অনলাইন ডেস্ক

স্যার কী হয়েছে?

-আপনার স্ত্রীর মারাত্মক প্যারালাইসিস হয়েছে। অচিরেই আজীবনের জন্যে পঙ্গু হয়ে যাবে।

এ কথা শুনে আমার স্ত্রী রেগে গেলো। বললো, গায়েবের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না কার ভবিষ্যৎ কেমন। আর কেউ যদি মনে করে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ গায়েব জানে তবে সে শিরকের অন্তর্ভুক্ত হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ শিরক ছাড়া অন্যসকল গুনাহ ক্ষমা করবেন।

-আমি তো শুধু অনুমান করে বলেছি।

-আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, বেশি অনুমান করে কথা বলা উচিৎ নয় মানুষের। হাদিসেও আছে, অনুমানের জন্যেই মিথ্যার জন্ম হয়। কথাগুলো শোনার পর ডাক্তার রেগে গেলেন। আমার কোন কথা না শোনেই তিনি বাসা থেকে চলে গেলেন।

আমি ডাক্তার নিয়ে ভাবলাম না। আমি শুধু ডাক্তারের প্যারালাইসিস শব্দটা নিয়েই পড়ে রইলাম। যদি সত্যই প্রিয়তমার চাঁদনীর প্যারালাইসিস হয়ে যায়! আমি এত যন্ত্রণা কিভাবে সহ্য করবো!

চাঁদনীকে চার বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। কিন্তু সে আমাকে মানসিক, শারীরিক কোনো সুখ দিতে পারেনি। সে বধ্যা নারী। আমি নিঃসন্তান। এটা ভাবতেই আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। প্রতিবেশীরা ভাবে সমস্যা আমার। আমি হাটে হাঁড়ি ভাঙ্গি না। কিন্তু ভিতরে তুষের আগুন সারাক্ষণ জ্বলতেই থাকে।

অনেকে বলে প্রেম করে বিয়ে করলে ভালোবাসা থাকে না। সুখের হয় না। ঝগড়া লেগেই থাকে। আমার মতে, একসকল সমস্যা থাকে না যদি দুজন দুজনকে

ত্যাগ করে যেতে পারে। দুজন দুজনকে বোঝার চেষ্টা করে।

এতোক্ষণ ডাক্তারকে বুঝ দেয়া নারী হঠাৎই কেঁদে উঠে! ডিজিটাল যুগের মানুষ অন্যকে আমল করার কথা বলে। নিজে সেই আমলই করে না। এজন্যেই মানুষ এতো ওয়াজ-নসিয়ৎ শোনার পরও হেদায়েত হয় না। সে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদেই চলছে। আমি সব সহ্য করতে পারলেও কান্না সহ্য করতে পারি না।

সান্ত¡না দিয়ে বললাম, কিছু হবে না তোমার। অতঃপর কপালে চুমো দিলাম।

আরো বললাম, দেখো তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।

-আমি আমার জন্য চিন্তা করছি না। আমি তোমার জন্য চিন্তা করছি। যদি কিছু হয়ে যায়, রান্না-বান্না, তোমার সেবা, আমার সোনার সংসার...

-আহা! রাখো তো। তোমাকে কোন চিন্তা করতে হবে না। আমি দুই একদিনের মধ্যেই রোবট কিনে আনবো। সেই সব কাজ করে দিবে। এমনি তোমার সেবা যন্ত্র করে তোমাকেই সুস্থ করে দিতে পারে।

তাছাড়া তোমার সাথে হাসবে, গাইবে।

অতঃপর বিভিন্ন দেশের বড় বড় কোম্পানির রোবটগুলো দেখেছি। তাদের চাহিদার কথা বলেছি কিন্তু একটা রোবটাও পছন্দ হলো না। পছন্দ না হওয়ার কারণ হলো আমার চাহিদার রোবট নাকি আজও কোনো বিজ্ঞানী বানাতে পারেনি। যারা আজ পর্যন্ত বানিয়েছ তারা শুধু আলাদা আলাদা কাজের জন্য বানিয়েছে। সব কাজে পারদর্শী আজও বানাতে পারেনি।

আর আমার সংসারের উপযুক্ত রোবট নাকি বানানো সম্ভব না। ‘সুফিয়া’কে কথা বলার জন্যে দিতে পারবে বলছে। কিন্তু শুধু শুধু কথা বলার জন্যে এতো টাকা আমি ব্যয় করবো না।

অবশেষে আমি নিজেই একটা সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি যে করেই হোক একটা যন্ত্রমানব বানাবো। যা পৃথিবীর কোনো রোবটের সাথে মিলবে না। যা হুবহু মানুষ হবে।

আমি সব দেশের কোম্পানি আর বিজ্ঞানীদের সাথে আলোচনা করলাম। অনেক ধরে গবেষণা করলাম। তারপর সবদেশের সেরা সেরা রোবটের যন্ত্রগুলো অর্ডার করলাম। যা রোবটের কাঁচামাল হিসাবে ধরা হয়।

দীর্ঘদিন ধরে কায়িকশ্রম আর মেধাশ্রম দিয়ে তৈরি করলাম যন্ত্রমানব।

অধিকাংশ রোবটের একটি চোখ থাকে। ওরা ইহুদি-খ্রিস্টান বলে দাজ্জ্বালের ন্যায় চোখ দেয়। তাই আমি ওদের মতো চোখ দিলাম না। আগেই বলেছি, আমি এমন রোবট বানাবো যা পৃথিবীর কোন রোবটের সাথে মিলবে না। আমি রোবটাকে তিনটি চোখ দিয়েছি। দুটো চোখ মানুষের মতো সামনে। আর একটা ঠিক পিছনে। সেটা নীল চোখ। রোবেটের আসল সুইচ।

রোবটাকে আমি বিদ্যুৎ সংযোগ না দিয়ে ব্যাটারী সিস্টেম করছি। যাতে সব জায়গায় নিয়ে যেতে পারি। এমনকি আমার স্ত্রীর সব সেবা করতে পারে মানুষ হিসাবেই। যদিও আমার খরচটা বেড়ে গিয়েছে।

অতঃপর আমি সুইচটা চাপ দিতে রোবোটের সর্বাঙ্গ সচল হয়ে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তৈরি হয়ে গেল নিঁখুত যন্ত্রমানব। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম, রোবটা ছেলেও নয় আবার মেয়েও না। যদিও আমি রোবটে ছেলের সব অঙ্গই আমি প্রতিস্থাপন করেছি। যদিও যৌনরস দিতে পারেনি। আমার ধারণা এটা দেওয়া সম্ভব না।

ছেলে রূপ দিলে আমার স্ত্রী রেগে যেতে পারে। সে নাকি মেয়েদেরই বেশি ভালোবাসে। তাই আমি রোবটাকে মেয়ে বোঝাতে আলগা চুল লাগালাম। রং কলম দিয়ে রোবটের নাক, ভ্রু, কানে দুল একে দিলাম।

অবশেষে আমি তাকে পরীক্ষা করার জন্য বললাম, আজ থেকে তোমার নাম কল্পনা। যেহেতু তোমার নাম ‘ক’ বর্ণ দিয়ে সেহেতু ‘ক’ দিয়ে আমি একটা শব্দ বলবো। তারপর তুমি ‘ক’ দিয়ে অন্য দুটো শব্দ বলবে। সে হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লো।

আমি বললাম ‘কলি’।

কল্পনা তাৎক্ষণিক বলল, ‘কলম’ ‘কালি’।

হঠাৎ আমার স্ত্রী এসে রোবটাকে এসে বললো, ‘হায়, আমি চাঁদনী’।

সাথে সাথে রোবটাটা চাঁদনীকে ছন্দ মিলিলেই উত্তর দিলো ‘সেটা তো আমি জানি। নতুন কথা বলো...’।

এশুনে আমার স্ত্রী চোখ কপালে তুললো এবং খানিকটা লজ্জ্বাও পেলো। এদেখে আমি হাসি আটকে রাখতে পারলাম না।

হঠাৎ করেই টেলিভিশনে একটা খবর শুনতে পেলাম, বজ্রপাতে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিহতের সংখ্যা বিয়াল্লিশ জন। বিষয়টি আমিও আমার স্ত্রীর খারাপ লাগলো। কিন্তু কল্পনার ভাব কিছুতেই পরিবর্তন হলো না। বিষয়টি আমাকে অবাক করলো। আমার এতোদিনের সাধনা ব্যর্থ হতে দেওয়া যায় না।

অতঃপর বিজ্ঞানীদের নিয়ে আবার মিটিংয়ে বসলাম। অনেকেই জানালেন। আভেগ-অনুভূতি সম্পূর্ণ রোবট বানাতে আরো গবেষণার দরকার আছে। কুরআনের আয়াত ভালো করে বোঝার দরকার আছে। আপনি ধীরে ধীরে কাজ চালিয়ে যান। আমরা আপনাকে সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করবো।

ওদের কথা মতো আমি কিছুদিন রোবটাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমি হাসছি। রোবটাও হা করেও হাসার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সেটা বিরক্তকর আওয়াজই ভেসে আসছিল। আবার আমি কাঁদলাম। সে কাঁদার ভঙ্গি করে অঙ্গাভঙ্গি করার চেষ্টা করছিল।

এখন জুন মাস চলছে। অফিসে প্রচ- কাজের চাপ। সরকারি চাকরীজীবীদের জন্য এটা যন্ত্রণার মাস। এই মাসে চাঁদনীকে আমার বুকে মাথা রাখতে এক মিনিটও সময় দিতে পারি না। অনেক রাতে ছাড়া বাসায় আসতে পারি না। এই নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। সে অভিজ্ঞ। কিন্তু সমস্যাটা হয়েছিল অন্য জায়গায়।

প্রায় প্রতিদিন যখন গভীর রাতে বাসায় ফিরতাম। তখন কল্পনাকে নিয়ে চাঁদনীর বিস্তর অভিযোগ শুনতে হতো। চোখে তখন প্রচ- ঘুম থাকায় আমি কেয়ার করতাম না। সকালে চাঁদনীকে ঘুমে রেখেই অফিসে যেতে হতো।

একদিন চাঁদনী অসময়ে ফোন করে বলল, চাঁদ, কল্পনা আজ আমাকে বিয়ে করতে বলেছে। সে সকালে আমার সাথে অন্যরকম আচরন করেছে। আমার খুব ভয় লাগছে। প্লিজ তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আসো। হঠাৎই চাঁদনীকে তাপ্পর দেওয়ার শব্দ শুনলাম। চাঁদনী চিৎকার দিয়ে সেই চিৎকারের শব্দে যেনো সরকারি চারতলা ভবনটাই কেঁপে উঠছিল!

আমি বিলম্ভ না করেই দোঁড়ে সিড়ি বেয়ে নিচে চলে আসলাম। নিচে আমার ড্রাইভার ছিলো না। আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ড্রাইভিং করতে লাগলাম।

হঠাৎই চাঁদনীর সেই অভিযোগুলো মনে পড়তে লাগলো। কখনো বলছিল, চাঁদনী তোমার সাইন্স ফিকশন, যন্ত্রমানব, রোবট বিজ্ঞানের বই পড়ছে। কখনো বলতো, আজ কল্পনাকে দেখেছি কুরআন শরীফের পৃষ্ঠা উল্টাতে। কখনো বলতো, আজ কল্পনাকে দেখেছি ডায়েরি লিখতে।

কখনো বলতো, আজ চাঁদনীকে কল্পনা কবিতা শুনিয়েছে। এই অদ্ভূত ধরনের প্রেমের কবিতা আমি জীবনেও শুনেনি।

অন্যদিকে আমি ভাবতাম চাঁদনীর অসুখটা বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া আমি সময় দিইনি বলে সে সে দিন ডিপ্রেশনে পড়ে আবোল তাবোল বলছে। আর কবিতাগুলো তো আমারই। চাঁদনীকে আমি এই কবিতাগুলো শোনাইনি এজন্যেই হয়তো সে এমন কথা বলছে।

কথাগুলো যতো মনে পড়তে লাগলো। ততোই আমার দুঃচিন্তা বেড়েই যাচ্ছিল। আমি এসি গাড়ির মধ্যেও ঘামছিলাম!

আমার তখনো একটা কথাই মাথায় আসছিলো না। ওর লিঙ্গে আমি মেডিসিন প্রয়োগ করিনি। আর যার মেডেসিন নেই, মানুষের মতো জৈবিক তাড়না নেই সে কিভাবে বিয়ের কথা বলতে পারে!

অবশেষে আমি বাড়ির দরজায় আসলাম। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। দরজা ভিতর থেকে লক করা ছিল। হঠাৎই ভিতরে থেকে ভাঙ্গা-চূড়া করার আওয়াজ আসছিল। আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে, ভিতরে ভয়াবহ কিছু হতে চলেছে।

আমি দৌড়ে চলে গেলাম। পিছনের দরজার দিকে। সেটা খোলাই ছিলো। সেই রুমটা ছিলো কল্পনার। আমি ড্রয়ার থেকে রিভালবারটি নিতে গিয়ে টেবিলের উপর দেখতে পেলাম, কল্পনার নিজ হাতের লেখার ডায়েরী!

শিরোনাম দেখেই আমি আঁতকে উঠলাম।

চাঁদ ও চাঁদনী হত্যার রহস্য! ইতিমধ্যেই ‘ব্যাটারী লো’-এর শব্দ শুনলাম। এটাই আমার জন্য বড় সুযোগ।

আমি দোঁড়ে কল্পনার রুমে গেলাম। দেখি ওকে উলঙ্গ বেঁধে রাখা হয়েছে। টেলিভিশনে হিন্দি সিনেমার নগ্ন নাচ চলছে। আর কল্পনা একবার বাম উপরের দিকে, আরেকবার ডান পা উপরের দিকে উঠিয়ে নাচার ভঙ্গি করেছে।

আমি কল্পনার নীলচোখে তিন-চারটা গুলি করলাম। কিন্তু সে ঘুরে আমাকে মারার জন্য তেড়ে আসলো। আমাকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিবে এমন সময়ই ‘সিস্টেম সাটারডাইন হয়ে সে মোমের মতো গলে হাঁটু ভেঙ্গে পড়ে রইলো। আমি আমার রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে একটা হামড়া দিয়ে তাকে আঘাতে আঘাতে চুরমার করে দিলাম।

অতঃপর দুইজনেই জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলাম। কিন্তু স্ত্রী যখন ডায়েরী পরে জানতে পারলো যে, কল্পনা কুরআনের আয়াত পড়ে নিজেই নিজের লিঙ্গে কৃত্রিম জৈবিক রস প্রতিস্থাপন করেছিল। তাই সে আভেগ-অনুভূতি সম্পূর্ণ রোবট তৈরি হয়েছিল।

সে খারাপ ছবি দেখলেই তার যন্ত্রগুলো গরম হতে থাকতো। ফলে তার মানুষের মতো জৈবিক তাড়না সৃষ্টি হতো।

আমার স্ত্রী চাঁদনী আফসোস করতে থাকলো এই ভেবে যে, তার জন্য পৃথিবীর একমাত্র আবেগ-অনুভূতিসম্পন্ন রোবটটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সে মারা গেলে কী এমন হতো?

আমি তখন চাঁদনীকে বললাম, ভালোবাসা ছাড়া আমরা যা কিছু করছি তার সবই অর্থহীন। ভালোবাসার চেয়ে বড় বস্তু নেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়