প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
অদৃশ্য ভাইরাস করোনা মানুষের জীবনকে আতঙ্কিত করে দিয়েছে। করোনাভাইরাসে কত বাবা-মা হারিয়েছে প্রিয় সন্তানকে, সন্তান হারিয়েছে প্রিয় বাবা-মাকে। মানুষ মানুষের প্রতি যে ভালোবাসার বন্ধন ছিলো তা এ করোনা কেড়ে নিয়েছে। না-ফেরার দেশে চলে গেছে কতশত তাজাপ্রাণ। ভাবলে কষ্ট হয়। হয়তো আমিও চিরতরে এ সুন্দর পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যেতে হবে।
আমরা এখনো সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করতে পারছি না! আর না চলার কারণ হচ্ছে মনের ভেতরে থাকা গোরামি আর কুসংস্কার। করোনা প্রতিরোধক হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ভ্যাকসিন নেয়া জরুরি এবং মাস্ক ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এবং তাই দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে গ্রাম-শহরে বেশি উদাসীন নি¤œ-আয়ের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। আবার জ্ঞানসম্পন্ন অনেক ব্যক্তিও মাস্ক ব্যবহার করতে উদাসীন ভাবে চলছেন! করোনায় মৃত্যুর মিছিল থেমে নেই। তবুও আমরা খুব বেশি সচেতন হতে পারছি না।
হাসপাতালগুলোতে একটা সময় যে কোনো রোগীর অপারেশন চলাকালে চিকিৎসকসহ অপারেশন টিমের সদস্যদের মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক পরতে দেখা যেতো। অবশ্য চিকিৎসকগণ অপারেশন থিয়েটার ছাড়া বা জটিল রোগীর কাছে আসা ছাড়া মাস্ক পরতেন না। ডাক্তারের কাছে হাসপাতাল বা চেম্বারে কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী আসলেই অনেক চিকিৎসক মাস্ক ব্যবহার করতেন। কখনোই জেলা শহরে কিংবা গ্রাম-গঞ্জে কোনো মানুষকে মাস্ক পরতে দেখা যায়নি বরং মাঝে মধ্যে কিছু শৌখিন মানুষকে রোমাল ব্যবহার করতে দেখা যেতো। বাইরে বের হলে ধূলোবালি উড়ার কারণে শ্বাসতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে রোমাল দিয়ে অনেককে নাক-মুখ চাপ দিয়ে ধরে রাখতে দেখা যেতো। এছাড়াও বিশেষ করে কলেজের ছাত্ররা ফ্যাশন হিসেবে রোমালই বেশি ব্যবহার করতে দেখা যেতো। করোনাকাল শুরুর কয়েক বছর আগ থেকেই ঢাকাসহ জেলা শহরগুলোতে কাপড়ের মাস্ক বিক্রি করতে দেখা যায়। একসময় যাত্রীবাহী বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও ফুটপাতে হকাররা রোমাল বিক্রি করতো, আর এখন বিক্রি করে মাস্ক। কিন্তু ২০ টাকা খরচ করে কেউই মাস্ক কিনে পরতে দেখা যায়নি। মাঝে মধ্যে সচেতন ব্যক্তিবিশেষ মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়।
মহামারি করোনা আতঙ্ক নিয়েও গ্রাম-শহরে অনেক মানুষকে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। বরং মাস্ক পকেটে বা থুতনির নিচে রেখে চলতে দেখা যায়। সরকার লকডাউন দিয়ে অন্তত মানুষকে সচেতন করতে পেরেছে। তবুও বহু মানুষ অসচেতনভাবে ঘুরাফেরা করতে দেখা যায়! তাদের চলাচল এমন যেনো করোনা আবার কি! করোনায় গরিব মরে না ইত্যাদি কথা-বার্তা চলছে। গ্রামের হাট-বাজারগুলোর অবস্থা আরো নাজুক।
আমরা দেখেছি, করোনাকালে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবকমূলক সংগঠন, অর্থ-বিত্তশালী ব্যক্তিগণ ফ্রি মাস্ক বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। মানুষের জীবন রক্ষায় মাস্ক এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বহুদিন তথা চীন থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্যে প্রথমেই মুখে মাস্ক পরতে বলে আসছে। যে সকল মানুষ টিকা নিয়েছেন তাদেরও মাস্ক পরে বের হতে হবে। শুধু করোনার জন্যেই নয়, মানুষের ফুসফুসে ভাইরাস অনুপ্রবেশ থেকে রক্ষায় মুখে মাস্ক পরার কোনো বিকল্প নেই। পানির অপর নাম জীবন, তেমনি করোনা থেকে মুক্তি পেতে জীবন বাঁচাতে মাস্ক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। এ মুহূর্তে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে মাস্ক পরতে হবে।
করোনা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে গণজমায়েত ও ভিড় এড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। যতো দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন নিতে হবে, টিকা নেয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সচেতন হতে হবে এবং সম্মিলিত উদ্যোগেই এ মহামারী দুর্যোগ থেকে রক্ষায় মোকাবিলা করতে হবে।