রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার প্রেক্ষিত ও তা ঠেকাতে করণীয়
অনলাইন ডেস্ক

কোভিড-১৯ অতিমারির প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে বন্ধ ছিলো শিক্ষাঙ্গন। সংক্রমণ সন্তোষজনক হারে কমে আসার প্রেক্ষাপটে টানা দেড়বছর বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ থেকে খুলেছে শিক্ষাঙ্গন। তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো অনেক শিক্ষার্থী আসছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সরকারি তথ্য বলছে, সরকারি প্রাথমিকে ৮০ শতাংশ ও মাধ্যমিকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকছে। তবে বাস্তবে উপস্থিতির হার এর চেয়ে কম বলে গণমাধ্যমে খবর আসছে।

দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক পরিবারেই দারিদ্র্য বেড়েছে। অনেকেই শিশুশ্রমসহ অন্যান্য কর্মসংস্থানে যুক্ত হয়েছে। মেয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে অনেকে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হার সবচেয়ে বেশি কিন্ডারগার্টেন ও স্বঅর্থায়নে পরিচালিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে দেশের ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে ৮০ লাখ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করলেও বর্তমানে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। উপস্থিতির হার মাত্র ৩০ শতাংশ বলে জানা গেছে কিন্ডারগার্টেনের বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যসূত্রে। শিক্ষার্থী সংকটে অনেক কিন্ডারগার্টেন এখনো খুলছে না।

ঝরে পড়ার উদাহরণ রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ের সরকারি তথ্যে। প্রতি বছর সরকারি-বেসরকারি শিক্ষার্থীর সংখ্যা হিসেব করেই প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যের বই ছাপানো হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষে সরকার ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ পাঠ্যবই ছেপে বিতরণ করেছে। আগামী ২০২২ শিক্ষাবর্ষে ৩৫ কোটি ১৬ লাখ ১৯ হাজার ৩১৩ কপি পাঠ্যবই ছাপার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেই হিসেবে ২০২২ শিক্ষাবর্ষে ৭৭ লাখেরও বেশি পাঠ্যবই কমছে। অথচ, স্বাভাবিক সময়ে সাধারণত প্রতি বছরই শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ে। শিক্ষার্থী বাড়ার কারণে বছরে গড়ে আড়াই শতাংশ পাঠ্যবই বাড়ে। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে এর উল্টোচিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক জরিপে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতির আগে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিলো ২০.৫ শতাংশ। তবে করোনাকালে এই হার বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। গত ২ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জরিপটি চালানো হয়। দারিদ্র্যের মুখোমুখি ৫৬ শতাংশ পরিবার দাবি করেছে, করোনার সময়ে তাদের আয় কমেছে। ধার করে, সঞ্চয় ভেঙে এবং খাদ্য ব্যয় কমিয়ে এই সংকট মোকাবেলা করেছে তারা। যেখানে ধার করে সংসার চালাতে হচ্ছে, সেখানে দরিদ্র পরিবারগুলো শিক্ষার ব্যাপারটি মাথায়ই রাখতে পারছে না। এসব দরিদ্র পরিবারের অনেক সন্তান শিশুশ্রমে যুক্ত হয়েছে, যারা আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নাও ফিরতে পারে।

শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া ঠেকাতে করণীয়

শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া ঠেকাতে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অভ্যন্তরীণ ঝরে পড়ার কারণ ও প্রতিকার অন্বেষণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধানকে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার কারণসমূহের একটি প্রতিবেদন উপজেলা/জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেই বয়সী শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার প্রবণতা বেশি তাদেরকে বিশেষ কাউন্সেলিং প্রোগ্রামের আওতায় আনা জরুরি। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়াও সরকারের বিদ্যমান ব্যবস্থাপনা যেমন, বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, শিক্ষাবৃত্তি কর্মসূচির পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রণোদনাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে, যেনো দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের পড়াশোনার খরচকে কোনোভাবেই বোঝা মনে না করে।

প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অভিভাবক সমাবেশ করে শিক্ষা বিষয়ক কাউন্সেলিং জোরদার করতে হবে। শ্রেণিকার্যক্রমে শিক্ষকদের আরো আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেহেতু দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে শ্রেণীকার্যক্রমের বাইরে, তাই কঠোরতা পরিহার করে আনন্দদায়ক শিখন-শেখানো পদ্ধতি অনুসৃত হওয়া বাঞ্ছনীয়। পাঠের বিষয়বস্তু সহজবোধ্য ও উপভোগ্য করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের মাঝে নিরস ও একঘেঁয়ে ভাব অনুভূত না হয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কার্যক্রমের ওপর জোর দিতে হবে। যে সকল শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে পারছে না তাদেরকে বৃত্তিমূলক কারিগরি শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হোম ভিজিট কার্যকর করতে হবে। মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শিক্ষার্থীদের সরকারি প্রাথমিকের অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে। সর্বোপরি, শিক্ষাব্যবস্থা যাতে ভীতিকর না হয়ে আগ্রহের বিষয় হয় সেদিকে শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

লেখক : মোহাম্মদ আরিফ ইমাম, প্রভাষক (ইংরেজি), বেলচোঁ কারিমাবাদ ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর; দপ্তর সম্পাদক, বাংলাদেশ মাদরাসা জেনারেল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমজিটিএ), কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়