রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

মুজিব শতবর্ষে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষা-ভাবনা
অনলাইন ডেস্ক

একটি দেশের শিক্ষানীতি অনুধাবন করতে হলে সে দেশের শিক্ষার ইতিহাস ও রূপান্তর এবং শিক্ষার সঙ্গে তৎকালীন রাজনীতির সম্পর্কগুলোও বিবেচ্য। শিক্ষা সে সমাজব্যবস্থা ও শাসনব্যবস্থার বাইরে কিছু নয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সরকার যে কোনো সময়ে প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষা কমিশন বা কমিটি গঠন করে থাকে। কমিশন বা কমিটি তাদের প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেয়ার পর যখন সেটি রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত হয়, তখনই কেবল সেটিকে নীতি বলা যাবে, এর পূর্বে সেটিকে কেবলই কমিশন বা কমিটির প্রতিবেদন হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

শিক্ষানীতির আনুষ্ঠানিক যে রূপের সঙ্গে আমরা বর্তমানে পরিচিত, ভারতীয় উপমহাদেশে তার প্রাথমিক ভিত্তি ঘটে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মূলত কোম্পানির কাজের জন্য সহায়ক জনগোষ্ঠী তৈরির প্রাথমিক উদ্দেশ্যে নিয়েই তারা উপমহাদেশে শিক্ষার বিস্তারে উদ্যোগ নেয়। কোম্পানির শাসনামলে ১৮১৩ সালে প্রথমবারের মত কোম্পানি সনদ আইন বা চার্টার অ্যাক্টের মাধ্যমে একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় শিক্ষার গোছানো প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করে। ১৮৩৫ সালে লর্ড থুমাস ম্যাকলে সরাসরি জানিয়ে দেন, কোম্পানির এমন কিছু ভারতীয় মানুষ প্রয়োজন যারা মূলত তাদের এবং কোম্পানি যাদের শাসন করে, অর্থাৎ ভারতীয়দের মধ্যকার যোগসূত্র হিসেবে কাজ করবে। মানে দাঁড়াচ্ছে, শিক্ষা বিস্তার তাদের মূল উদ্দেশ্য নয়, বাণিজ্যের স্বার্থে যতটুকু শিক্ষা প্রদান প্রয়োজন, কোম্পানি ততটুকুর আয়োজনই করবে। ম্যাকলে আরো জানান যে, এ মানুষগুলো শরীরে ও রক্তে হবে ভারতীয় কিন্তু চিন্তাচেতনায় হবে বৃটিশ। অর্থাৎ শুধু ভৌগোলিকভাবে নয়, মনোজগতে উপনিবেশ স্থাপনও বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বড় উদ্দেশ্য ছিলো। শিক্ষা নিয়ে কোম্পানির এ রকম নানা উদ্দেশ্য ও সিদ্ধান্তে একদিকে পুরো ভারতীয় উপমহাদেশে স্থানীয়ভাবে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে যেমন মূল্যহীন করে তোলা হয়েছিল, তেমনি একদল কেরানি সৃষ্টির মাধ্যমে বিভাজনের পথটিকেও আনুষ্ঠানিক করে তোলা হয়।

এ ধারাবাহিকতায় বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শিক্ষা নিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং সেগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে এ অঞ্চলের শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হতে থাকে। সমাজ ও মানুষের চাহিদা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে কেন্দ্র করে শিক্ষা আবর্তিত হওয়ার কথা, বৃটিশরা সেখানে চাপিয়ে দেওয়ার নীতি ও চুইয়ে পড়ার নীতিকে প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পর বৃটিশ সরকার এ অঞ্চলের শাসনের দায়িত্বভার গ্রহণ করলেও শিক্ষার মূলনীতিগুলোতে তারা তাৎপর্যপূর্ণ কোনো পরিবর্তন ঘটায়নি। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ১৮৮২’র হান্টার কমিশন, ১৯৯৪’র লর্ড কার্জনের শিক্ষা সংস্কার, ১৯১৯’র স্যাডলার কমিশন কিংবা সর্বশেষ ১৯৪৪’র জন সার্জেন্ট স্কিম শিক্ষার উন্নয়নে নানা সুপারিশ ও সিদ্ধান্ত প্রদান করলেও সেগুলো মূলত পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশকে ত্বরান্বিত করেছে।

পাকিস্তান আমলের শিক্ষানীতির ইতিহাস মূলত পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক শিক্ষার মাধ্যমে শোষণ করতে চাওয়ার ইতিহাস। বৃটিশ আমলের ২৯টি বড় শিক্ষা কমিশন বা শিক্ষানীতি মানুষকে যতটুকু না সরাসরি ক্ষুব্ধ, ক্রোধান্বিত ও প্রতিবাদী করেছিল পাকিস্তান আমলের ৬টি শিক্ষানীতি তার চেয়েও বহু বহুগুণে বিদ্রোহী করে তোলে মানুষকে। শিক্ষার মাধ্যমে কীভাবে একটি জনগোষ্ঠীকে দমিয়ে রাখার পরিকল্পনা করা যায়, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে পাকিস্তান আমলের শিক্ষানীতিগুলো। ১৯৫১’র (মাওলানা আকরাম খান), ১৯৫৭’র (আতাউর রহমান খান), ১৯৫৯’র (এস এম শরীফ), ১৯৬৬’র (হামিদুর রহমান), ১৯৬৯’র (এয়ার মার্শাল এম নূর খান) কিংবা ১৯৭০’র (শামসুল হক) কমিশনের কোনোটিই বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণীয় হয়নি। মাত্র ২৪ বছরের মধ্যে এ রকম বড় ৬টি কমিশন ও একাধিক ছোট কমিটি প্রণয়নের ইতিহাস আসলে শিক্ষার মাধ্যমে বৈষম্য সৃষ্টি ও শোষণ করতে চাওয়ার ইতিহাস ও তা প্রত্যাখ্যান করার ইতিহাস হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে এবং হবে।

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড এবং শিক্ষকরা শিক্ষার কারিগর, তাই বঙ্গবন্ধু তথা মুজিব শতবর্ষে ও বিশ্ব শিক্ষক দিবসে দাঁড়িয়ে বলতে হয় যে, বঙ্গবন্ধু দেশ ও জাতি গঠনে সবসময় শিক্ষার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। বস্তুত বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাভাবনা তার রাজনৈতিক দর্শন থেকে উৎসারিত। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনে সাম্য তথা সমাজতন্ত্র কথাটি বারবার উচ্চারিত হয়েছে। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, ‘পুঁজিবাদী অর্থনীতি সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে। তাই তিনি লিখেছেন, ‘আমি নিজে কমিউনিস্ট নই, তবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না। একে আমি শোষণের যন্ত্র হিসেবে মনে করি। এ পুঁজিপতি সৃষ্টির অর্থনীতি যতদিন দুনিয়ায় থাকবে, ততদিন দুনিয়ার মানুষের উপর থেকে শোষণ বন্ধ হতে পারে না।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী পৃঃ ২৩৪)। উক্ত উদ্ধৃতি থেকে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন সুস্পষ্ট। ১৯৪৯’র ২৩ জুন বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের ম্যানিফেস্টোতে শিক্ষা সম্পর্কে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রে প্রত্যেকের শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করিতে হইবে। শিক্ষাব্যবস্থা রাষ্ট্রের হাতে থাকিবে এবং প্রত্যেক নারী-পুরুষের পক্ষে শিক্ষা বাধ্যতামূলক করিতে হইবে। দেশের সর্বত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করিয়া শিক্ষা সহজলভ্য করিতে হইবে। উচ্চতর শিক্ষা বিশেষ করিয়া কারিগরি শিক্ষার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষা-কেন্দ্র খুলিতে হইবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারি বৃত্তির সাহায্যে উচ্চশিক্ষাকে উৎসাহিত করিতে হইবে। মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করিতে হইবে।’

বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪’র যুক্তফ্রন্ট গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচির ৯ এবং ১০ নং দফায় দলের শিক্ষানীতি সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে ঃ ‘১. দেশের সর্বত্র প্রাথমিক ও অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তন করা হইবে। ২. শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল সংস্কার করিয়া শিক্ষাকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কার্যকরী করিয়া বেসরকারি বিদ্যালয়সমূহের বর্তমান ভেদাভেদ উঠাইয়া দিয়া একই পর্যায়ভুক্ত করিয়া সকল বিদ্যালয়সমূহে সরকারি সাহায্যপুষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হইবে এবং শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করা হইবে।’

১৯৬২’র শরীফ কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত শিক্ষা রিপোর্টের বিরুদ্ধে পূর্ব-বাংলার ছাত্রসমাজ যে আন্দোলন গড়ে তোলে বঙ্গবন্ধু তাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে সমর্থন জুগিয়ে যান। ৭০’র নির্বাচনী ইশতেহারে বঙ্গবন্ধু সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা ও শিক্ষায় অধিকতর বরাদ্দের বিষয়টি বেশ জোরালোভাবে উপস্থাপন করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ১৯৭২’র ২৬ জুলাই বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-এ-খুদাকে সভাপতি ও অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে ১৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়। ঐ কমিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘একটি সমাজতান্ত্রিক দেশের উপযোগী নাগরিক তৈরির জন্য যে ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন, কমিশনের উচিত সে ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা সুপারিশ করা।’ এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু একটি বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের জন্য বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা চান, তার প্রতিফলন ঘটে। রাষ্ট্রীয় নীতি ও জনমানুষের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে কমিশন ১৯৭৪’র ৩০ মে তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। ১৯৭৫’র ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে রাজনীতির পরিবর্তন ঘটায় এ প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৯’র অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষানীতি কিংবা ১৯৮৩’র মজিদ খান কমিশন প্রতিবেদনের সুপারিশ জনগণের প্রতিবাদে বাস্তবায়ন হতে পারেনি। দুটোর কোনোটিই জনগণের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করতে পারেনি, উল্টো বৈষম্য সৃষ্টির নানা উপাদান ছিল এগুলোতে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে ১৯৮৮’র মফিজ উদ্দিন আহমদের কমিশন প্রতিবেদনের সুপারিশও বাস্তবায়ন হয়নি। এর দীর্ঘদিন পর ১৯৯৭ সালে অধ্যাপক এম শামসুল হককে প্রধান করে যে শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি করা হয়, তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৯৯’র প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি তৈরি করা হয় এবং ২০০০ সালে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো শিক্ষানীতি সংসদে গৃহীত হয়। কিন্তু সেই শিক্ষানীতিও প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়ন হয়নি বা হতে দেয়া হয়নি।

সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন শিক্ষা কমিশন গঠনের সংস্কৃতি বাংলাদেশের বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। এ ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালে ড. এম এ বারীকে প্রধান করে নতুন কমিশন গঠন করা হয়। অথচ পরবর্তী বছরই অর্থাৎ ২০০৩ সালে অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞাকে প্রধান করে নতুন আরেকটি কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু এই কমিশনের সুপারিশগুলোও বাস্তবায়ন করা হয়নি। সর্বশেষ ২০০৯ সালে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে প্রধান করে জাতীয় শিক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৭৪’র শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন এবং ২০০০’র শিক্ষানীতিকে ভিত্তি করে নতুন একটি শিক্ষানীতি তৈরির কথা। সরকারের চাওয়া অনুসারে কমিটি যে প্রতিবেদনটি তৎকালীন সরকারের কাছে পেশ করে, সেটি কিছুটা সংশোধিত হয়ে ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে শিক্ষানীতি হিসেবে গৃহীত হয়। ২০১০’র এ জাতীয় শিক্ষানীতিই বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও বর্তমান শিক্ষানীতি, যা ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অকার্যকিতভাবে কার্যকর রয়েছে।

শিক্ষানীতি গৃহীত হওয়ার পর ২০১১ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন ও মনিটরিং-এর জন্য একটি কেন্দ্রীয় কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। এসব কমিটির অধীনে অনেকগুলো উপকমিটি গঠন করা হলেও কেন শেষ পর্যন্ত সেগুলো কার্যকর হলো না তাও রহস্যপূর্ণ। ২০১৮’র মধ্যে ধাপে ধাপে শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও অনেক বড় সুপারিশ ২০২১ (বর্তমান) সালেও বাস্তবায়ন হয়নি। উদাহরণ কল্পে বলা যায়, শিক্ষানীতি অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত হওয়ার কথা। সেটির অগ্রগতি নেই। শিক্ষানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজেটে শিক্ষার জন্য বরাদ্দ রাখার ক্ষেত্রেও উন্নতি দৃশ্যমান নয়। শিক্ষা কার্যক্রম সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য শিক্ষা আইন তৈরির কথা বলা হয়েছিল। শিক্ষানীতি তৈরির পরই শিক্ষা আইন নিয়ে কাজ শুরু হয় এবং খসড়া শিক্ষা আইন তৈরি হলেও এখন পর্যন্ত গৃহীত ও বাস্তবায়ন হয়নি।

অতএব দেখা যায় বা বলা যেতে পারে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন যারা ক্ষমতায় এসেছে, পূর্ববর্তী সরকারের শিক্ষা কমিশন প্রতিবেদন বা শিক্ষানীতি তারা কারণে বা অকারণে বাতিল করেছে। কিন্তু যাদের নেতৃত্বে ২০১০ সালে শিক্ষানীতি তৈরি করা হলো, তখন থেকে এখন পর্যন্ত তারাই দেশ শাসনকার্য পরিচালনায় থাকলেও কেন নিজেদের তৈরি শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে কাক্সিক্ষত উদ্যোগ নেননি সেটি একটি বড় প্রশ্ন হয়ে উঠে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করার পরও একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে নির্ধারিত শিক্ষানীতি অনুসারে চলতে পারে না সেখানেই থাকে জিজ্ঞাসা ----।

লেখক পরিচিতি : অধ্যাপক মোঃ হাছান আলী সিকদার, সভাপতি, চাঁদপুর জেলা জাসদ ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা ; চাঁদপুর জেলা শিক্ষক নেতা ও রাজনীতিবিশ্লেষক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়