প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
বাঙালির জীবনে মহান অর্জন ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয় এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ মৃত্তিকায় অভ্যুদয়। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একে অন্যের সমার্থক। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন ভূখণ্ডের জন্ম হতো না। একদিকে হাজার বছরের প্রতীক্ষায় বাঙালি পেয়েছে তার ত্রাতা আর অন্যদিকে শোষণের নিগড় হতে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বিশ্বগ্রাম মধুমতীর টুঙ্গিপাড়ায় যে খোকার জন্ম হয়েছিলো, তাঁরই জাদুকরি বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ হয়েছে স্বাধীন।
২০২০-২১ সাল বাঙালির জীবনে ঘটনাবহুল। একদিকে করোনা নামের বৈশ্বিক মহামারির আতঙ্ক গ্রাস করেছে আমাদের আর অন্যদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উদ্যাপিত হচ্ছে মুজিববর্ষ। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পূর্ণ হয়েছে আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর তথা সুবর্ণজয়ন্তী। অবিস্মরণীয় দুই উপলক্ষকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে ইতিহাস-ধন্যা। সেই ঐতিহাসিক কালের সাক্ষ্য নিয়ে সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর স্মারকগ্রন্থ ‘সুবর্ণ-শতক’ শীর্ষক প্রকাশনায়।
বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও স্বাধীনতা বিষয়ে বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় লেখাকে ধারণ করে স্মারকগ্রন্থটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, চাঁদপুরের মাটি ও মানুষের নিবেদিতপ্রাণ নেতা ডাঃ দীপু মনি এমপি তাঁর একটি মূল্যবান লেখা দিয়ে সুন্দরের পথে, ইতিহাসের রথে আমাদের যাত্রাকে সুগম করে তুলেছেন। তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা অপার। কৃতজ্ঞতা জানাই বরেণ্য সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিগণকে, যাঁদের লেখায় সমৃদ্ধ হয়েছে এ স্মারকগ্রন্থ। এর পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের প্রতি, যিনি করোনা-কঠিন দিনেও দু’কলম লিখেছেন আমাদের জন্যে। গ্রন্থটি প্রকাশে সার্বিক সহযোগিতা ও নির্দেশনা দিয়েছেন সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুরের মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত। এ স্মারকগ্রন্থে যাঁরা লেখা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, দেশে ও বিদেশে অবস্থানকারী সেসব লেখককে জানাই অশেষ কৃতজ্ঞতা।
সার্বিকভাবে নান্দনিক একটি স্মারকগ্রন্থ আমাদের আন্তরিক আরাধ্য। কিন্তু করোনার করাল থাবায় প্রায় নিস্তেজ প্রাত্যহিকতাকে জয় করে কাক্সিক্ষত সেই প্রকাশনাকে নান্দনিক রূপ দেয়া বড়ই কঠিন। তারপরও সেই বিঘ্ন মোকাবেলা করে আমরা সময়কে বিজয়ী করে তুলতে চেয়েছি। তাই প্রমাদ অনভিপ্রেত হলেও উপস্থিতি অস্বাভাবিক নয়।
করোনায় আমরা হারিয়েছি সাহিত্যের অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে। বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, তাঁর অনুবর্তী অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর হারিয়ে গেছেন করোনায়। সাহিত্য একাডেমী হারিয়েছে দুজন কৃতী ব্যক্তিত্ব অধ্যক্ষ প্রফেসর মনোহর আলী ও প্রকৌশলী মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে, যাঁদের পদচারণায় চাঁদপুরের সাহিত্যাঙ্গন মুখরিত ছিল। ওপার বাংলায় হারিয়ে গেছেন কবি শঙ্খ ঘোষ, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত প্রমুখ। তারপরও নিরন্তর সংগ্রামে অভ্যস্ত বাঙালি কোনো এক শান্তিময় ভোরে মহামারি জয় করে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে-এ আশা আমাদের সকলের। আপাত সঙ্কটকে জয় করে বিজয়ী বাঙালি ফেলবে স্বস্তির নিঃশ্বাস, এ বাসনা আমাদের শাশ্বত। সেই শুভদিনকে শীঘ্রই স্বাগত জানাতে আপনি, আমি, আমরা সবাই আসুন মাস্ক পরি, অকারণে বাড়ির বের না হই, ভিড় এড়িয়ে চলি, কিছুক্ষণ পর পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলি এবং কমপক্ষে তিনফুট দূরত্বের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। আপনি নিজে নিরাপদ থাকুন, অন্যকেও দয়া করে নিরাপদ রাখুন। জীবাণুর বিরুদ্ধে বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সফল হোক, সার্থক হোক। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
-পীযূষ কান্তি বড়ুয়া ও মুহাম্মদ ফরিদ হাসান