প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
আমার জন্ম স্বাধীনতার অনেক পরে। মুক্তিযুদ্ধ কিংবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমি নিজ চোখে দেখিনি। তবে ছেলেবেলায় যে পারিবারিক পরিম-লে আমি বেড়ে উঠেছি, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের গল্প, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের গল্প, বঙ্গবন্ধুর ছবি, বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে এত আলোচনা হতো যে, আমার সেই শৈশবকাল থেকেই মনে হতো বঙ্গবন্ধু আমাদের পরিবারের অতি প্রিয় একজন, আমাদের খুবই কাছের মানুষ। এ-তো গেল আমার শৈশবকালীন পারিবারিক পরিবেশ। তারপর ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলাম। জানতে পারলাম, পড়তে শুরু করলাম বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে। তখন নিজেই আবিষ্কার করতে থাকলাম ‘বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ’।
আমাদের দেশের ইতিহাস যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো পাকিস্তানের উপনিবেশ হতে এদেশকে স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে জীবনব্যাপী আন্দোলন করেছেন বঙ্গবন্ধু। এ জন্য দিতে হয়েছে তাঁকে চরম মূল্য। তাঁর জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ৪ হাজার ৬৮২ দিন। এই ৪ হাজার ৬৮২ দিন তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন। তিনি দেখতে পারেননি কীভাবে বড় হয়েছে তাঁর সন্তানেরা। এমনকি বড় মেয়ের বিয়ের দিনও তিনি জেলে কাটিয়েছেন। তাঁর জীবনটা তিনি বিলিয়ে দিয়েছিলেন বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য, তাদের মুক্তির আস্বাদ দেয়ার জন্য। ১৯৫৪, ১৯৫৬, ১৯৫৮, ১৯৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৮, ১৯৬৯ সালের আন্দোলন, ১৯৭০-এর নির্বাচনে জয় লাভ, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। একটি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, তাদের চোখে, তাদের বুকে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকে জানতে হলে তাঁর চিন্তা-চেতনা, তাঁর ব্যক্তিজীবনকে জানতে হবে। তিনি ছিলেন এক উদার, সৎ, সাহসী, অসাম্প্রদায়িক মানুষ। তাঁকে দেখলে মনে হয় তাঁর কাছে আশ্রয় পাওয়া যাবে, নির্ভর করা যাবে। বঙ্গবন্ধু ভাবতেন এ দেশকে নিয়ে এ জাতিকে নিয়ে। তিনি বলতেন, ‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতিকে নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তা-ই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’
দেশ যখন স্বাধীন হলো, পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর বর্বরতার শিকার হয়ে অনেক নারী তাদের সতীত্ব হারান। অনেক শিশুর জন্ম হয় এদেশে। সেসব নারীর পরিবার সামাজিকতার ভয়ে তাদেরকে অস্বীকার করে। বঙ্গবন্ধু তাদেরকে আশ্রয় দেন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। তিনি ঘোষণা দেন, ‘ধর্ষিত মেয়ের পিতার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দাও-শেখ মুজিবুর রহমান, আর ঠিকানা-ধানমন্ডি ৩২ নম্বর।’ কত বড় উদার মনের, মহানুভব মানুষ হলে এমন কাজ করা সম্ভব।
বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গুছিয়ে সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। দেশকে তিনি সংবিধান দিয়েছিলেন, বিশ্ব দরবারে সম্মানের সাথে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সোনার বাংলা বিনির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু দেশের স্বাধীনতার শত্রুদের তা পছন্দ হয়নি। তাইতো তাদের হাতে নৃশংসভাবে প্রাণ দিতে হয় আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের। এই মহান মানুষটি ভাবতে পারেননি, যে জাতির জন্য তিনি তাঁর জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন সেই বাঙালি তাঁর জীবন নিতে পারে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় শক্তি আমি দেশের মানুষকে ভালোবাসি, সবচেয়ে বড় দুর্বলতা আমি তাদেরকে খুব ভালোবাসি।’ তাই তো বাঙালি নামের কিছু কুলাঙ্গার তাঁর সবচেয়ে বড় দুর্বলতাটাই কাজে লাগিয়ে জাতির সবচেয়ে বড় সর্বনাশ করেছিলো।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন, সুযোগ পেতেন তবে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে অনেক আগেই মর্যাদার সাথে উন্নত দেশ হিসেবে আসীন করতে পারতেন। কৃতজ্ঞতা বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি, তাঁর নির্দেশনায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ফিরে পাচ্ছে সেই আগের ঐতিহ্য।
আমার কাজে, আমার চিন্তায় থাকে সততা আর দেশপ্রেম। দেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িক চেতনা পাই বঙ্গবন্ধুর জীবন ও জীবনাচরণ থেকে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, তাঁর সততা, দেশপ্রেম, তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনা বরাবর আমাকে মুগ্ধ করে। আমার কাজে, আমার চিন্তায় বঙ্গবন্ধু আমাকে আলোড়িত করেন। আমি সর্বদাই মনে করি তিনি আমার নেতা, আমাদের জাতির পিতা।