প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
তোমার আলোয় মগ্ন বাংলাদেশ
(শেখ হাসিনার পঁচাত্তরতম জন্মদিনের নিবেদন)
প্রস্তাবনা
|আরো খবর
পৃথিবীতে জন্মে লোকে, কে রাখে তার ছাপ?
কারো মাথায় স্বার্থ চাপে, কেউ করে যায় পাপ।
কেউবা শুধু ভোগ করে যায়, লাভের জন্যে আসে
অর্থ এবং বিত্ত পেলে ঘোরে সে তার পাশে
কেউবা এসে আমি এবং আমার কথা ভাবে
সে ভুলে যায় মৃত্যুকালে দুই খালি হাত যাবে
স্বার্থবাদী লোকের ভিড়ে জ্বলজ্বলে কেউ তারা
সবার কথা ভাবে কেবল নিজের কথা ছাড়া
এই ধরাতে এমন লোকের সংখ্যা অতি বিরল
তাদের জীবন সার্থকতার, হয় না তারা বিফল।
বিশ^বাসীর ধ্রুবতারা শেখ মুজিবের মেয়ে
এই পৃথিবী ধন্য হলো এমন মেয়ে পেয়ে।
পিতার স্বপ্ন নিজের হাতে সত্য করে ফোটায়
আধুনিক এক বাংলাদেশের গতির ঘোড়া ছোটায়
তাঁর দৃঢ়তায় বাংলাদেশ আজ চীন-মার্কিন দাসী না
জন্মদিনের শ্রদ্ধা জানাই প্রিয় নেত্রী হাসিনা।
.
জন্ম ও শৈশব
ছবির মতো সবুজ গাঁয়ে টুঙ্গীপাড়ার কোলে
তাল-তমালের শীতল ছায়ায় উদাস হাওয়া দোলে
এই গাঁয়ে দুই মায়ার নদী বাইগার-মধুমতী
তাদের জলে সিক্ত থাকে নিত্য বসুমতী।
এই গাঁয়েরই শ্যামল মেয়ে প্রথম হলো মাতা
মৃত্তিকা দেয় সব মমতা আকাশ মেলে ছাতা
রেণুর কোলে জন্ম নিলো পূর্ণিমার এক চাঁদে
বাবা মুজিব নেই ঘরে তাই জোছনা মুখে কাঁদে
তার দাদাজান শেখ লুৎফর অতুল হলো খুশি
শেখ সায়েরা প্রিয় দাদী হারায় যেন হুঁশই!
সাতচল্লিশে সেপ্টেম্বরে আটাশ তারিখ দিনে
টুঙ্গীপাড়া সব জ্যোৎস্না রাখলো নিজে কিনে।
ডাকলো দাদা এই মেয়েকে শেখ হাসিনা নামে
আকাশ হতে ফুলপরীরা তার মুখেতে থামে
একা একা খেলতো খুকি, থাকতো বাবা জেলে
আহ্লাদে তার জড়ায় গলা হঠাৎ কাছে পেলে।
বাবা তাকে ডাকতো ‘হাচু’, মা ছিলো তার কাছে
সখির মতো, জল পেলে মাছ যেমন করে নাচে
ছোট্ট কামাল আসার পরে খুকি হলো আপা
আজকে আপার জন্মদিনে যায় না খুশি মাপা।
.
শিক্ষা, রাজনীতি ও বিয়ে
টুঙ্গীপাড়ার পাঠ চুকিয়ে মায়ের সাথে ঢাকা
শেখ হাসিনা এসেই পেলো প্রজাপতির পাখা
দিন কেটেছে কৈশোরে তাঁর রজনী বোস লেনে
বঙ্গবন্ধুর লেখা হতে আমরা গেলাম জেনে।
আজিমপুরের পর্ব শেষে এসএসসি পাস করে
মুজিব-কন্যা শেখ হাসিনা থাকলো না তো ঘরে
ইডেন হতে পাস করে সে ভার্সিটিতে গিয়ে
স্নাতক হলেন, তার মধ্যে অনাড়ম্বর বিয়ে
কলেজকালের রাজনীতিতে নেত্রী হলো ভিপি
রক্তে থাকা গুণের টানে হঠাৎ খোলে ছিপি।
বাবা যখন থাকতো জেলে মা আর কন্যা মিলে
কর্মী-নেতার সকল কথা নিত্য খেতো গিলে
বাবার কাছে জেলের গেটে বলতো তা সব খুলে
এমনি করে ভিড়লো মেয়ের রাজ-তরণী কূলে।
বিজ্ঞানী তাঁর বর হয়েছে ভরলো জীবন সুধায়
দেশকে তখন বসলো পেয়ে স্বাধীনতার ক্ষুধায়
জয় এসেছে কোলজুড়ে তাঁর একটা পুতুল পেয়ে
ধন্য হলো টুঙ্গীপাড়ার বাবার বড় মেয়ে।
.
স্মৃতিময় একাত্তর
বাবা যখন আটক হলো পাকিস্তানের হাতে
মেয়ে ছিলেন সাহস নিয়ে বীর বাবারই সাথে
পিতা গেলো কারাগারে ধরলো মেয়ে হাল
মায়ের সাথে শক্ত হাতে ওড়ায় তরীর পাল
ছোট্ট রাসেল বুবুর সাথে নিজের বাড়ির ছাদে
বাংলাদেশের পতাকাকে হৃদয়-সুতোয় বাঁধে
পাকসেনাদের রক্তচোখের ভয়কে শূন্য করে
হাচু-রাসেল যোদ্ধারূপে বাংলা পূর্ণ করে।
কামাল গেলো যুদ্ধে ওপার,জামালের নাই খোঁজ
বাবার জন্যে হাচুর মনে প্রশ্ন জাগে রোজ
ছোট্ট রাসেল দুরন্ত খুব, বাইরে যেতে চায়
যুদ্ধদিনের বন্দীদশা কে তারে বুঝায়!
দেশ হয়েছে স্বাধীন তবু আটক ছিলো ওরা
শেখ হাসিনা চিন্তিত খুব কখন লাগায় পোড়া
এমন সময় উদয় হলো ‘কর্নেল অশোক তারা’
শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবার তাতেই পেলো ছাড়া
যুদ্ধ কালের অমানিশায় হঠাৎ এলো ভোর
এমন ছিলো শেখ হাসিনার স্মৃতির একাত্তর।
.
পঁচাত্তরের আঁধার
ছিলেন তিনি জার্মানিতে বিজ্ঞানী তাঁর সাথে
শেখ রেহানা সঙ্গে ছিলো হাত ধরে তাঁর হাতে
ঢাকার গৃহে আগস্ট রাতে কী জানি কী হলো
সবকিছুতে রক্ত মেশে, রক্ত খাওয়ার জলও!
জানতে পারে দিন পেরিয়ে ঢাকাতে সব শেষ
জনক-হারা হঠাৎ হলো সদ্য বাংলাদেশ।
জার্মানিতে শেখ হাসিনা অধীর হলো শুনে
কে বেঁচেছে কে মরেছে না পেলো ঠাঁই গুণে
মনের মধ্যে আশা ছিলো রাসেল আছে বেঁচে
আনবে খুঁজে ভাইকে তাঁরই শোকের সিন্ধু সেঁচে
তাঁর সে আশা থাকলো আশা রাসেল গেছে চলে
শেখ হাসিনার মনের মধ্যে উঠলো তুফান জ্বলে
বোনের মুখে জয়ের মুখে গভীর কাতর শোকে
মায়ের গন্ধ, বাবার গন্ধ, ভায়ের গন্ধ শোঁকে
জার্মানীতে বাংলাদেশের জনক খুনের দায়ে
দুইটি বোনের তুষের আগুন জ্বললো মাথায়-পায়ে।
.
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
মে সতের একাত্তরে বাংলাদেশে ফিরে
শেখ হাসিনা বত্রিশে যায় রক্তমাখা নীড়ে
লণ্ডভণ্ড সকল স্মৃতি এবড়ো-থেবড়ো বাড়ি
সবকিছুতে রক্তমাখা ভায়ের-বাবার-মা’রই।
সিঁড়ির বুকে রক্ত তো নয় রক্তজবা ফোটে
দেখেই মেয়ের চোখের ধারায় শ্রাবণ-বন্যা ছোটে
বড় বোনের দুচোখ খোঁজে শেখ রাসেলের স্মৃতি
হৃদ-সাগরে উঠলো প্রলয়, উঠলো জেগে ক্ষিতি
বুকভরে সে শ্বাস নিয়ে পায় বাবা-মায়ের ঘ্রাণ
অশ্রুভরা চোখের ধারায় বিলাপ করে প্রাণ।
কন্যা গেলো টুঙ্গীপাড়া, বাবা নিথর ঘুমায়
মাটির বুকে বাবার খোঁজে ভরল চুমায় চুমায়
এক-এগার আবার তাঁকে আটকে দিলো জেলে
জুলাই মাসের ষোল তারিখ দিন ছিলো গোলমেলে
বিদেশ গেলো নির্বাসনে আবার এলো ফিরে
পদ্মা-মেঘনা-যমুনা আর মধুমতীর তীরে
জীবনজুড়ে লড়াই করা শেখ হাসিনার নাম
আধুনিক এই বাংলাদেশ আজ তারই পরিণাম।
.
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা উন্নয়নের চাবি
তাঁর প্রজ্ঞায় আমরাও আজ মহাকাশকে ভাবি
আমরাও আজ আকাশজুড়ে ওড়াই স্যাটেলাইট
মেট্রোরেলে চড়তে পারি, জ্বালাই হাজার লাইট।
পদ্মাসেতু স্বপ্ন তো নয়, নদীর ওপর ভাসে
কুড়ি হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতে দেশ হাসে
কর্ণফুলির টানেল দিয়ে জলের নিচে যাবো
এ স্বপ্ন কি কেউ দেখেছো? ভাবো তোমরা ভাবো!
উন্নয়নশীল দেশের তকমা বাংলাদেশের পিঠে
একটি বাড়ি একটি খামার শুনতে বেজায় মিঠে
ঘর ছাড়া আজ থাকছে না কেউ আশ্রয়ণে সবাই
ভিক্ষা ছেড়ে নিজের কামাই খাচ্ছে আমার ক’ভাই।
স্বাস্থ্যখাতে শেখ হাসিনা ‘ভ্যাক্সিন হিরো’ হয়ে
দেশের জন্যে বিশ্ব হতে আনে সম্মান বয়ে
বিনামূল্যে বই দিয়েছে দিচ্ছে কোভিড টিকা
উন্নয়ন আজ হাতের মুঠোয়, নয়কো মরীচিকা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য উত্তরসূরি
শেখ মুজিবের মেয়ে নিবে দেশকে অনেকদূরই।
.
শেখ হাসিনা ও চাঁদপুর
শেখ হাসিনার স্মৃতির ভা-ে অনেক বেশি আলো
তাঁর স্মৃতিতে চাঁদপুরকে ফুটিয়ে তোলে ভালো
পেটচুক্তির খাওয়ার কথা তাঁর মনে আজ বাজে
মাঝ-খাওয়াতে ছুট্ দিতে হয় ভেঁপুর সে আওয়াজে
হাঁড়িভর্তি মিষ্টি আজও বানায় তাঁকে ভাবুক
শৈশব তাঁর জীবন্ত হয় ভরিয়ে রয় তা বুক
তিনটি নদীর মিলন তাঁকে মুগ্ধ করে আজো
স্বচ্ছ জল আর ঘোলা জলের ঘূর্ণি জলের মাঝও
কমডেকাতে আসার পথে নদীর শোভা দেখে
পর্যটনের সম্ভাবনা নিলেন চোখে মেখে
চাঁদপুরকে ইলিশবাড়ি স্বীকৃতি দেন তিনি
মানবতার মা হিসেবে আমরা তাঁকে চিনি।
শেখ হাসিনা চাঁদপুরকে বাঁধলে তুমি ঋণে
ভালোবাসার ডালি আপা তোমার জন্মদিনে
যতদিনই তোমার হাতে থাকবে বাংলাদেশ
উন্নয়নের ঊর্ধ্বগতির আমরা পাই উদ্দেশ।
.
যবনিকা
নেতা আসে নেতা যায় আর দেশ রয়ে যায় পিছে
বড় বড় স্বপ্ন দেখায় সবাই মুখে মিছে
নেতা গোছায় নিজের আখের আমরা পড়ি ফাঁদে
দুঃখ হতে মুক্তি পেতে নিরালে মন কাঁদে।
শেখ মুজিবের মেয়ে তুমি জ্বালাও আলোর শিখা
তোমার হাতেই আমরা বুঝি জাতির ভাগ্য লিখা
তোমার হাতে আজ আমাদের সকল দুখের শেষ
তোমার হাতেই আধুনিক এক পেলাম বাংলাদেশ।
আজকে তোমার জন্মদিনে উৎসবের এ স্বর্গে
হাজার গোলাপ শুভেচ্ছা দেই হৃদয়ছোঁয়া অর্ঘ্য।