প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
দীর্ঘ একবছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে বিদ্যালয়ে এলো ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এমনটাই চোখে পড়েছে পুরাণবাজারে অবস্থিত বেশ ক’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে পুরাণবাজার মধুসূধন উচ্চ বিদ্যালয়, পুরাণবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদপুর নূরিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, হাফেজ মাহমুদা পৌর বালিক উচ্চ বিদ্যালয়, রঘুনাথপুর হাজী এ করিমখান উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেলো দীর্ঘ ১৭ মাস পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা মেনে নিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর রোববার স্বল্প পরিসরে ক্লাস করার সিদ্ধান্ত নিয়ে খোলা হয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় চাঁদপুর পুরাণবাজার মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে গিয়ে দেখা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ কামাল হোসেন দাঁড়িয়ে আছেন বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে। তার অপর পাশেই প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র দ্বারা আগত ছাত্র-ছাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা দেখে এক এক করে ভেতরে প্রবেশ করাচ্ছেন। আর প্রধান শিক্ষক গনেশ চন্দ্র দাস তাদেরকে হাত ধুয়ে দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাসরুমে ঢোকার জন্যে নির্দেশনা প্রদান করছেন। দেখে মনে হলো অতিথি আপ্যায়ন হচ্ছে, যাতে কোনো কিছুতেই তাদের অযত্ন না হয়। ক্লাসরুমে প্রবেশ করেও দেখা গেল একই চিত্র। কারো সাথে যেন কারো শরীর না লাগে করা হয়েছে সেই ব্যবস্থা। ছাত্র-ছাত্রীদের ‘জেড’ আকৃতিতে বসানো হয়েছে।
সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ কামাল হোসেন ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে আসার জন্যে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তোমরা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। করোনার কারণে সরকার দেশে লকডাউন দিয়েছে, আবার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় তা তুলে নিয়েছে। এক এক করে খোলা হয়েছে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কলকারখানা। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়নি। কারণ তোমরা দেশের অমূল্য সম্পদ। তোমরাই একদিন এ দেশ পরিচালনা করবে। তোমাদের মাঝ থেকেই সৃষ্টি হবে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী তোমাদের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে বিদ্যালয় বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। যাতে তোমরা সুস্থ থাক। তাই তোমাদের কাছে অনুরোধ তোমরা শিক্ষকদের নির্দেশনা মেনে বিদ্যালয়ে আসবে এবং স্বাস্থ্য সচেতন থাকবে। তিনি দিবসটিকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গাছের চারাও রোপণ করেন।
একই চিত্র দেখা যায় নূরিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। এদিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তাহের তপাদার ছাত্র-ছাত্রীসহ সকলের সুস্থতা কামনা করে দোয়ার আয়োজন করেন। বিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য সচেতনতাও ছিল সন্তোষজনক। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাওলানা মোঃ আল-আমিন সরকার। প্রধান শিক্ষক আবু তাহের তপাদার বলেন, আমরা আজ বড়ই খুশি ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ক্লাসরুমে একত্রিত হতে পেরেছি। তিনি আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করেন।
হাত ধোয়াসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা কার্যকর করেছেন হাফেজ মাহমুদা পৌর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা সকল নির্দেশনা মেনেই আজ বিদ্যালয় খুলতে পেরেছি। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি কিছুটা কম। আশা করি পর্যায়ক্রমে তা ঠিক হয়ে যাবে। রঘুনাথপুর হাজী এ করিম খান উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল তারাও ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় সকল কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। তবে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় মাঠের পরিবেশ তেমন একটা ভালো দেখা যায়নি। প্রধান শিক্ষক মোঃ নাসির উদ্দিন জানান, নির্মাণ কার্যক্রম আরো আগেই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো শেষ না হওয়ায় আমরা শত চেষ্টা করেও বিদ্যালয়ের মাঠ পরিস্কার রাখতে পারছি না। তবে আমাদের শিক্ষকগণ সার্বক্ষণিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যাতে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকে।
বিদ্যালয় খোলার প্রথমদিন তেমনভাবে ক্লাস হতে দেখা না গেলেও ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। সকলের চোখে মুখেই ছিল উৎসবের আমেজ। বহুদিন পর একে অপরের সাথে মিলিত হতে পেরে ছাত্র-ছাত্রীরা সন্তোষ প্রকাশ করে। তারা বলেন একসময় আমরা স্কুল বন্ধ ঘোষণা করলে খুব খুশি হতাম কিন্তু দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা বুঝতে পেরেছি স্কুল খোলা থাকলেই আনন্দ বেশি। তাই আমরা এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম কবে খুলবে স্কুল।