প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
(পর্ব-১)
বিনিয়োগ পরিকল্পনার সারমর্ম হলো আপনার অর্থ সম্পদে বা এমন জিনিসগুলোতে রাখার পরিকল্পনা, যা আপনি মনে করেন যে মূল্য বাড়বে বা ভবিষ্যতে দুর্দান্ত বৃদ্ধি পাবে। আমরা যখন সঞ্চয় করি তা শুধু খারাপ সময়ের মোকাবেলার জন্যেই না ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত করার জন্যেও করি। তাই আমরা যখন কোনো বিনিয়োগ পরিকল্পনা করি তা অবশ্যই ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের নির্দিষ্ট লক্ষ্য, স্বপ্ন, আকাক্সক্ষা ও ইচ্ছের তালিকা থাকে। বিনিয়োগ সূত্র জানা থাকলে তবেই আমরা আমাদের ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নের কার্যকরী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করতে পারবো। বিনিয়োগের পরিকল্পনা কোনো কাজের অর্ধেক। ব্যবসা শুরু করতে হলে অর্থাৎ বিনিয়োগের পরিকল্পনা করার আগে দরকার একটি কার্যকরী বিনিয়োগের পরিকল্পনা। তাই ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে চাইলে দরকার একটি সঠিক পরিকল্পনা। প্রত্যেক ব্যক্তির বিনিয়োগ শুরু করার আগে ব্যবসা পরিকল্পনা তথা বিনিয়োগের পরিকল্পনা জানা দরকার। বিনিয়োগ পরিকল্পনা আর্থিক পরিকল্পনার একটি মূল উপাদান। একটি ছাড়া অপরটি থাকা অসম্ভব।
তারপরে আপনি কিভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্যে সর্বোত্তম বিনিয়োগের বিকল্পগুলো নির্বাচন করবেন। একটি শেয়ার মার্কেট বিনিয়োগ পরিকল্পনা আপনি আপনার প্রয়োজন ও পরিকল্পনার ভিত্তিতে যতোটা ভালোভাবে তৈরি করবেন তার উপর নির্ভর করবে সফলতার হার। ব্যক্তিগত বিনিয়োগের পরিকল্পনা তৈরি এবং প্রয়োগ করতে কখনই দেরি করতে হয় না কেননা তা ভবিষ্যতের জন্যে নীড়ে ডিম তৈরি শুরু করে দেয়।
আপনার বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি বুঝুন। আপনার বিনিয়োগের জন্যে কত ডিসপোজেবল আয়ের ব্যবস্থা রয়েছে সে সম্পর্কে সচেতন হোন। আপনার বাজেটটি একবার দেখুন এবং নির্ধারণ করুন আপনার মাসিক ব্যয়ের পরে বিনিয়োগের জন্যে এবং আপনার জন্যে তিন মাসের ব্যয়ের সমতুল্য জরুরি তহবিল আলাদা রাখার পরে কতটা অর্থ অবশিষ্ট রয়েছে তা স্থির করুন। তা-ই হবে আপনার বিনিয়োগ যোগ্য তহবিল।
তাইতো ওয়ারেন বাফেট বলেছেন, ‘কখনোই আয়ের একমাত্র উৎসের উপর নির্ভর করবেন না। বিনিয়োগের মাধ্যমে আরেকটি উৎস তৈরি করুন’। তিনি আরো বলেছেন, ‘সফল বিনিয়োগের জন্যে দরকার সময়, শৃঙ্খলা আর ধৈর্য’।
আমরা নিম্নোক্ত প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করলে অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগের স্টক নির্বাচন করতে পারবো-
স্টকের ঝুঁকি মূল্যায়ন : আমরা যে সকল স্টকে বিনিয়োগ করবো সেই কোম্পানিগুলোর তালিকা তৈরি করে নিচের কিছু বিষয় মূল্যায়ন করলে আমরা স্টকের ঝুঁকি বুঝতে পারবো। কোম্পানির মালিকানা, রেজিস্ট্রেশন, পরিচালকদের জীবনী, পণ্য, মার্কেট শোয়ার ইত্যাদি। ঝুঁকি বিশ্লেষণ বিনিয়োগকারীদের সম্ভাব্য বিনিয়োগের সুযোগের ঝুঁকি নির্ধারণ করতে ব্যবহার করতে পারে এমন বিভিন্ন পদ্ধতির সরবরাহ করে। বিনিয়োগের মূল্যায়ন করার সময় বিনিয়োগকারী দুটি ধরনের ঝুঁকি বিশ্লেষণ প্রয়োগ করতে পারেন তা হলো পরিমাণগত বিশ্লেষণ এবং গুণগত বিশ্লেষণ।
সম্পদ বরাদ্দ : কৌশলগত সম্পদ বরাদ্দ একটি পোর্টফোলিও বিল্ডিং যা একটি ঐতিহ্যগত পদ্ধতি। আপনি কোনো স্টকে কতো পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করবেন তা পূর্বেই নির্ধারণ করতে হবে। অনেকটা বেসিক গতিশীল সম্পদ বরাদ্দের মতো, কৌশলগত সম্পদ বরাদ্দের জন্যে বিনিয়োগকারীদের প্রতিটি শ্রেণীর বিনিয়োগের জন্যে আদর্শ অনুপাত স্থাপন করা এবং পর্যায়ক্রমে তাদের পোর্টফোলিও ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন। আমরা জানি শক্ত ঋঁহফধসবহঃধষ শেয়ারে তহবিলের ৬০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে হবে। বাকি অর্থ দিয়ে বর্তমান ট্রেন্ডযুক্ত শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। শক্ত ঋঁহফধসবহঃধষ শেয়ারগুলো দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হতে হবে। আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, উদাহরণস্বরূপ, আপনি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে আপনার তহবিলের ৪০ শতাংশ, ঔষধ শিল্পে ২০ শতাংশ, ইন্স্যুরেন্স খাতে ১০ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করবেন। তবে মনে রাখবেন, বিনিয়োগকারীরা কীভাবে তাদের মূল কৌশলগুলোর অংশ হিসেবে সম্পদ বরাদ্দ ব্যবহার করতে পারেন সে সম্পর্কে এটি কেবল মাত্র সাধারণ নির্দেশিকা। তাই আপনি আপনার বিনিয়োগের জন্যে আদর্শ অনুপাত তৈরি করুন এবং আপনার কৌশলটির ত্রুটিগুলোর সংশোধন করে একটি ঝুঁকিমুক্ত সম্পদ বরাদ্দ প্রক্রিয়া তৈরি করুন।
স্টক নির্বাচন : আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে আপনি আপনার সঞ্চিত অর্থ শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে একটি নির্ভরযোগ্য স্টক নির্বাচন করতে হবে। আপনার মূল লক্ষ্য হলো একটি মানসম্মত ও লাভজনক স্টক খুঁজে বের করা, যা আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে মুনাফা ভোগ করার সুযোগ দিবে। শেয়ারে বিনিয়োগ একটি সাধারণ লেনদেন বা ক্রয়-বিক্রয় নয়। শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে আপনি একটি কোম্পানির শেয়ারের মালিকানা লাভ করেন এবং ওই কোম্পানির পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভোট করার অধিকার পেয়ে থাকেন। তাই যে কোনো কোম্পানির শেয়ারে আপনার সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনের আগে স্টকটির কার্যকারিতা এবং লাভজনকতা যাচাইয়ের জন্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি।
আপনার কষ্টে অর্জিত অর্থ যে কোনো কোম্পানির স্টকে বিনিয়োগের আগে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি বিষয় সম্পর্কে আপনার অবশ্যই জানা উচিত সেগুলো হলো :
* কোম্পানির আয় প্রবৃদ্ধি
* প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর তুলনায় টিকে থাকার ক্ষমতা
* ঋণ অনুপাত (উবনঃ-ঃড়-ঊয়ঁরঃু ৎধঃরড়)
* মূল্য আয় অনুপাত (চৎরপব-ঊধৎহরহমং ৎধঃরড় বা চ/ঊ ৎধঃরড়)
* কোম্পানিটির লভ্যাংশ বণ্টন পদ্ধতি
* দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ
* দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার মতো ক্ষমতা ও স্থিতিশীলতা
স্টকগুলো পর্যবেক্ষণ ও পুনঃভারসাম্য : আমাদের মনে হতে পারে যে বিনিয়োগের পোর্টফোলিওতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হলো এমন এক প্রক্রিয়া ‘কর এবং ভুলে যাও’ এমন ক্ষেত্রেও পর্যবেক্ষণ বা পুনরায় মূল্যায়নের প্রয়োজন হয়। আপনার বিনিয়োগগুলো অযত্নে রেখে যাওয়া একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক পদ্ধতি যা আপনাকে খুব বেশি ঝুঁকির সামনে ফেলে। আপনার পোর্টফোলিওটির পর্যায়ক্রমিক পুনর্বিবেচনা, কাক্সিক্ষত অনুপাতে সম্পদ ও ঝুঁকির বাইরে ভরসাম্য বজায় রেখে এটি পুনরায় ভারসাম্যকরণ করে একটি সহজ পোর্টফোলিও তৈরি করা যেতে পারে।
মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার : লেখক ও কলামিস্ট
ই-মেইল : সংযধযহবধিুসধুঁসফবৎ@মসধরষ.পড়স