রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

দিনাজপুরের রামসাগর হোক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র
অনলাইন ডেস্ক

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি রামসাগর প্রখ্যাত, দয়ালু, সুশাসক, প্রজাপ্রিয় রাজা রামনাথের রাজত্বকালের (১৭২২-১৭৬০) শুধু অমর কীর্তিই নয়, আমাদের মায়াভরা, জাদুমাখা দিনাজপুরের এক সোনালি অধ্যায় বা ইতিহাস। আজ রাজা, মহারাজা, বাদশাহ বা তৎকালীন ক্ষমতাশালীরা বেঁচে নেই, কিন্তু তাঁদের ভালো-মন্দ ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সম্পদগুলো আপন মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে। আজকের দিনের মতো সুইচ টিপলেই সঙ্গে সঙ্গে ভূ-গর্ভস্থ পানি অলৌকিকভাবে উপরে উঠতো না। তখন ছিলো না বিদ্যুৎ, গভীর, অগভীর নলকূপ বা আধুনিক সেচ-ব্যবস্থা। পানীয় জলের জন্যে লোকেরা কূপ খনন করতো। চাষাবাদ বা মাছচাষসহ নানাবিধ প্রচুর পানির প্রয়োজনে পুকুর, পুষ্করিণী এবং বড় বড় দিঘি খনন করা হয়েছিলো। দেশ, বিদেশের প্রায় প্রতিটি জনপদে অসংখ্য দিঘি সেকালের সাক্ষ্য বহন করছে। বিভিন্ন স্থানে দিঘিগুলোর খনন ইতিহাস নিয়ে ছড়িয়ে আছে অনেক কিংবদন্তি ও উপাখ্যান। অনেক লোক ইতিহাসের চেয়ে কিংবদন্তিকে মানুষ বেশি বিশ্বাস করে। অতীতের শাসকেরা তাঁদের অফুরন্ত ধনদৌলত প্রজা সাধারণের জন্যে কেউ কেউ ব্যয় করতে কার্পণ্য করতেন না।

রামসাগরের ঐতিহাসিক ইতিহাস পাঠ করলে আপনার বুকের মধ্যে নদী ভাঙ্গনের মতো নদীপাড়ের বালুকারাশি চুর চুর করে ভেঙ্গে পড়বে। লোককথা আছে, ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে প্রকৃতির নিষ্ঠুর তাণ্ডব, একটানা অনাবৃষ্টি, খরা তথা পানির অভাবে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে হাজার হাজার প্রজা। অনাবাদি রয়ে গেলো মাঠ বা জমি, ফসল শস্য নেই একমুঠ পরিমাণ। প্রচণ্ড খাদ্যাভাব বা দুর্ভিক্ষে রাজ ভণ্ডাার হতে কিছুটা খাদ্য সমস্যার সমাধান হলে, দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টি ও খরায় খালবিল, দিঘিনালা শুকিয়ে খা খা বিরাজ করে। চারিদিকে কান্নার রোল, হতাশা আর দুর্ভাবনা বৃদ্ধ রাজার আহার নিদ্রা কেড়ে নেয়। এমন প্রেক্ষিতে রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে মাত্র ১৫ দিনে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক নিয়ে একটি দিঘি খনন করেন। কিন্তু সেই দিঘিতে একফোঁটা পানি মিললো না। তখন রাজা স্বপ্নে দৈববাণী পেলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্র রামনাথকে দিঘিতে বলি দিলে পানি উঠবে। স্বপ্নাদিষ্ট রাজা দিঘির মাঝখানে একটি ছোট মন্দির নির্মাণ করলেন। গ্রামে, গঞ্জে ঢাকঢোল পিটিয়ে মহরত বাজিয়ে প্রজাদের জানানো হলো, কাল ভোরে দিঘির বুকে পানি উঠবে। সেই ভোরে যুবরাজ রামনাথ সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে হাতির পিঠে চড়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলেন মন্দিরে। তৎক্ষণাৎ দিঘির নিচ থেকে অঝোর ধারায় পানি এসে চোখের পলকে ভরে গেলো বিশাল দিঘি। যেটি দৈর্ঘ্যে ১০৩১ মিটার প্রস্থে ৩৬৪ মিটার। যুবরাজের মাথার সোনার মুকুট পানিতে ভেসে গেলো। যুবরাজ রামের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্যে দিঘির নাম রাখা হলো ‘রামসাগর’। দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ৮ কিঃমিঃ দক্ষিণে তাজপুর গ্রামে মানবসৃষ্ট বা তৈরি রামসাগরের আয়তন ৪৩৭৪৯২ বর্গকিঃমিঃ, গভীরতা গড়ে ১০মিঃ ও পাড়ের উচ্চতা ১৩৫মিঃ।

এতো বড় দিঘি আজ আমরা পেলেও সঠিক পরিকল্পনা বা পুরোপুরি যত্নের অভাবে বনবিভাগের আওতায় তা ১৯৬০ সাল থেকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে অনাদরে পড়ে আছে। দিঘির চারিদিকে প্রায় আড়াই কিঃমিঃ সড়কের দু ধারে রয়েছে দেবদারু, ঝাউ ও মুছকন্দ ফুলের গাছ, উন্নতমানের ২শ’ প্রজাতির গোলাপ, লালমাটির ছোটখাট টিলা। দিঘির পানি কিছুটা নীলাভ বর্ণের এবং সবুজ বৃক্ষরাজিতে শোভিত। পশ্চিম পাড়ে ২ একর জমির উপর নির্মিত কৃত্রিম ‘শিশুপার্ক’ এবং মিনি চিড়িয়াখানায় মায়াবী চিত্রা হরিণের সংসার। ৭টি পিকনিক কর্নার, পশ্চিমে দ্বিতল ডাকবাংলো, পাষাণ বাঁধার দিঘির পাকা ঘাট, নানা কৌতূহলভরা উত্তর দিকে ভগ্ননগ্ন সৌধ, চটপটি-ফুচকার দোকানের পাশাপাশি দৃষ্টিকটু অসামাজিক পরিবেশ।

আমরা দিনাজপুরবাসী যারা রামসাগর দেখেছি তারা চাই, কাগজে-কলমে নামমাত্র ‘জাতীয় উদ্যান’ নয়, বাস্তবে ‘জাতীয় উদ্যান’। যেখানে থাকবে আধুনিকতার স্পর্শ, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অবাধ বিচরণ, যাতায়াতসহ নিরাপদ রাত্রিযাপন। জরুরি ভিক্তিতে সুষ্ঠু পরিকল্পনামাফিক ঝুলন্ত সেতু, ৫০ জনের ধারণ ক্ষমতাসমম্পন্ন ডরমিটরি, মিনি ট্রেন, পানির উপরে উন্নতমানের ক্যাফেটেরিয়া, সকল নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্যে পুলিশ ফাঁড়ি ইত্যাদি। এখানে যতো বেশি অর্থ বিনিয়োগ হবে ততো বেশি রাজস্ব আয় বাড়বে। অনেক আগে থেকেই শুনে আসছি, এই বাজেট আসছে, টেন্ডার হচ্ছে। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন, আমাদের রামসাগর আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র বা নগরী হিসেবে গড়ে উঠুক। এ স্বপ্ন পূরণ সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।

লেখক : শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট। সদস্য, দিনাজপুর কলামিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, দিনাজপুর।

মোবাইল ফোন : ০১৭১৭৯৭৭৬৩৪, ০১৮১৮২৩০৯৭০

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়