রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

পড়াশুনার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ছাত্র-ছাত্রীদের এখনই দরকার ব্যবহারিক ক্লাস
অনলাইন ডেস্ক

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত এতো দীর্ঘকাল বন্ধ রয়েছে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। নভেল করোনা ভাইরাস মহামারিতে প্রায় দেড় বছর টানা ছুটিতে ২০২০, ২০২১, ২০২২ সালের অন্তত তিনটি শিক্ষা বর্ষের সূচি এলোমেলো হয়ে গেছে। প্রযুক্তি সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশুনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারছে না। মহামারি কমার পর সকল শিক্ষার্থীকে শ্রেণীকক্ষে ফিরিয়ে এনে কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যায় তা নিয়ে আমাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে আমাদের শিক্ষা খাতের ক্ষতির রেশ দীর্ঘকাল বইতে হবে আমাদের অর্থনীতিকে। মহামারি কালীন শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষাবিদগণের বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।

বর্তমান সময়ে প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষাস্তর পর্যন্ত চার কোটি শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে পড়ে গেছে। অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার কাজ চললেও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উক্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অনেক পাবলিক পরীক্ষা পিছিয়েছে, শিক্ষার্থীদের বয়স বৃদ্ধি পাচ্ছে, সাথে বাড়ছে হতাশা। আর এ কারণেই বাড়ছে সেশন জট, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আয়বর্ধক কাজে নিয়োগ, বাল্য বিবাহসহ বাড়ছে সমাজের বহুবিধ সমস্যা।

ইউনিসেফের তথ্য মতে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশই গত ২০২০-এর মার্চ থেকে এ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে আমাদের দেশের শিক্ষাবিদগণ বিভিন্ন মতামত প্রদান করেছেন।

এদের মধ্যে অন্যতম দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অনির্দিষ্টকাল তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে চলা সম্ভব নয়। তাই সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় এনে এখনই ব্যবহারিক শিক্ষা চালুর বিকল্প নেই। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ক্লাসরুম ভিত্তিক শিক্ষার বিকল্প নেই। প্রতিটি শিক্ষার বড় একটা অংশ জুড়ে থাকে তার ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক শিক্ষা। অনলাইনের মাধ্যমে থিউরিটিক্যাল টপিক পড়ানো সম্ভব হলেও ব্যবহারিক সব জ্ঞান দেওয়া সম্ভব হয় না। আমাদের আরও খেয়াল রাখতে হবে দেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ডিজিটাল ডিভাইস, ইন্টারনেট সুবিধার অভাবে বর্তমান অনলাইন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত আছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, স্কুল খোলার পর সব শিক্ষার্থীকে ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনতে একটা বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনে সরকারকে এ খাতে বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে। তা না হলে ঝরে পড়া সকল শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নাও হতে পারে। আমরা নিম্নোক্ত কিছু পদ্ধতি অনুসরণ সাপেক্ষে এই করোনা কালীন সময়েও শ্রেণীকক্ষে পাঠদান শুরু করতে পারি।

সাপ্তাহিক পদ্ধতি : প্রতিটি শ্রেণীর বাচ্চাদের জন্য সাপ্তাহে একদিন খোলা রেখে শিক্ষাদান। অর্থাৎ একটি শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা একদিন ক্লাসে আসবে, দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রেণীকক্ষে বসবে ও শিক্ষকগণ পাঠদান করবেন। পুরো সপ্তাহের পড়া দেওয়া এবং পরবর্তী সপ্তাহের পড়া নিয়ে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরবে।

শ্রেণীকক্ষ নির্ধারণপূর্বক : প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রেখে বসার জন্য শ্রেণীকক্ষ নির্ধারণ করে দেওয়া, যাতে করে অন্যদের সাথে মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

ভিন্ন ভিন্ন সময় নির্ধারণ : প্রতিটি শ্রেণীর পাঠদানের জন্য আলাদা আলাদা সময় সূচি নির্ধারণপূর্বক ছাত্র/ছাত্রীদেরকে শ্রেণীকক্ষে ফেরানো সম্ভব।

পরীক্ষাভিত্তিক শর্ট সিলেবাস : পরীক্ষার জন্য শর্ট সিলেবাস নির্ধারণ পূর্বক শ্রেণী কক্ষে স্বল্প মেয়াদী পাঠদান। এতে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট কিছু টপিক পড়াশুনা ও ব্যবহারিক ক্লাস করে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবে।

অনলাইনে অনাগ্রহীদের আলাদা ব্যবস্থা : যে সকল শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষায় অনাগ্রহ রয়েছে অথবা প্রয়োজনীয় ডিভাইস ও ইন্টারনেট সুবিধার অভাবে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে নি, তাদের জন্য ক্লাসরুম ভিত্তিক ও ব্যবহারিক ক্লাস কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে।

রিমোট এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া : গ্রাম ভিত্তিক অর্থাৎ প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল কলেজগুলো এখনই স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেওয়া, যাতে গ্রাম গঞ্জের শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশুনা চালিয়ে নিতে পারে।

শিক্ষা ডিভাইস চালুকরণ : সরকার একটা প্রজেক্টের আওতায় একটি শিক্ষা ডিভাইস বিনা মূল্যে অথবা স্বল্প মূল্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করতে পারে, যাতে সবাই অনলাইন শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে।

সর্বোপরি আমাদের দেশের সকল শিক্ষক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদগণের দাবি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া। কারণ আমরা শিক্ষায় বামনজাতি হয়ে থাকতে চাই না। আমাদের সকলের প্রাণের দাবি আর যেন দেশে অটো পাস না দেওয়া হয়। প্রয়োজনে শিক্ষাক্ষেত্রের সকল স্টেকহোল্ডারের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন পূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি।

ক্স মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার, লেখক ও কলামিস্ট ইমেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়