সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৩, ০০:০০

একজন ব্যতিক্রম বিদ্যোৎসাহী ও সমাজকর্মী রাধা কান্ত দাস রাজু

একজন ব্যতিক্রম বিদ্যোৎসাহী ও সমাজকর্মী রাধা কান্ত দাস রাজু
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

বিদ্যালয়ে ঢুকলেই ছাত্রীদের অধিকাংশ আংকেল আংকেল বলে দৌড়ে আসে রাধা কান্ত দাস রাজুর কাছে। যেদিন বিদ্যালয়ে এই আংকেল আসেন সেদিন ছাত্রীদের বায়না থাকে কিছু খাওয়ার। কোনোদিন আইসক্রীম, কোনোদিন সিঙ্গারা, কোনোদিন ঠাণ্ডা কোমল পানীয় কিংবা কোনো দিন সাধারণ টকলেট আবদারের তালিকায় থাকে এদের। কিছু ছাত্রীর আবদার মিটাতে গিয়ে রাধা কান্ত দাস রাজু পুরো ক্লাসের কাউকে বাদ দেন না। বহু ছাত্রীর পড়ালেখার সব খরচ চলে রাধা কান্ত দাস রাজুর নিজের ব্যবসা থেকে আয়ের টাকায়। মেয়েদেরকে মানুষ করতে এভাবেই বহু দিন তথা বছরের পর বছর টাকা ব্যয় করে চলছেন রাধা কান্ত দাস রাজু। তিনি মেধাবী আর এতিম ছাত্রীদেরকে নিজে উদার হাতে সহায়তা করে আসছেন। তার উদারতার হাত থেকে বাদ যায় না দুঃস্থ, গরীর অসহায় কোনো ছাত্রী। এমনকি কোনো মেয়ের বিয়ে, কারো চিকিৎসা, মসজিদণ্ডমন্দির উন্নয়ন, ধর্মীয় কাজসহ সব কিছুতেই দানের ক্ষেত্রে তিনি সবার আগে। বিদ্যালয়ের কিছু কিছু উন্নয়নে নিজেকে জড়িয়ে নেন অর্থ আর শ্রমণ্ডঘাম দিয়ে। এ কাজগুলো এতোদিন গোপন রেখেছেন তিনি। নিজে বলতে বা প্রকাশ করতে না চাইলেও সত্য প্রকাশ পেয়ে যায়। তিনি হাজীগঞ্জের বলাখাল চন্দ্রবান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য পদে আসীন হয়েছেন ৩ বার। এ বিদ্যালয়ের কিছু কিছু ছাত্রীর জীবনে তিনি 'সাক্ষাৎ ফেরেশতা'।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৬ বছর ধরে তিনি বলাখাল চন্দ্রবান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য। তার তিন মেয়ের মধ্যে ৩ জনই এই বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী। ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীর রোল ১ থেকে ১০ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদেরকে প্রতি বছর তিনি শিক্ষা উপকরণ দিয়ে থাকেন। মাঝে মধ্যে বিদ্যালয়ে টিফিনের ব্যবস্থা করেন তিনি। এতিম, গরীর, অসহায় আর দুঃস্থ মেয়েদের বিদ্যালয়ের বেতন, স্কুল ব্যাগ, স্কুল ড্রেস, পায়ের ক্যাডস্, গাইড বই কেনা, প্রাইভেট পড়া, বিদ্যালয়ের বেতন, খাতাণ্ডকলম সবই তিনি দিয়ে থাকেন বহু ছাত্রীকে। বহু ছাত্রীর ফরম পূরণের পুরো টাকা, আংশিক টাকা, সুপারিশের টাকা তার পকেট থেকে দেন তিনি। বিদ্যালয়ের পুরো স্কাউট সামগ্রী তার টাকায় কেনা। বিদ্যালয়ের গণ্ডির বাইরে নিজ এলাকা তথা বলাখাল-ধেররা-খাটরা বিলওয়াইসহ তৎসংলগ্ন এলাকার গবীর অসহায় মেয়েদের বিয়ের খরচের টাকা, অসহায় ব্যক্তির চিকিৎসা খরচ, মসজিদ উন্নয়ন, মন্দির উন্নয়নসহ অসহায় দুঃস্থ নারী পুরুষ তার কাছে গেলে কাউকে তিনি ফিরিয়ে দেন না।

এ বিষয়ে রাধা কান্ত দাস রাজুর সাথে কথা বলতে গেলে তিনি কথা বলতে চাননি। অনেক অনুরোধের পরে বলেন, আমি এসব প্রচারে আগ্রহী না, কাউকে কিছু দিয়ে প্রচার করা অনেক বাজে বিষয় বলে আমি মনে করি। দুঃখিত। বিভিন্ন জনকে যেভাবে সহায়তা করেন তার আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ভালো মানের মাছের চাষের ব্যবসা রয়েছে, মাছের খাবার বিক্রির ব্যবসা রয়েছে, ঠিকাদারি করি, ধেররা মাছ বাজারে যে গদি আছে তার থেকে আমার নিজের বেতন বাবদ আমি ৫০ হাজার টাকা নেই। এই টাকার পুরোটা আমি দানের কাজে ব্যবহার করি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন জানান, রাধা বাবু যেভাবে মেয়েদেরকে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন, তা সত্যিকার অর্থে অন্যদের জন্যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। অনেক মেয়ের স্কুলের বেতন, ড্রেস, প্রাইভেট পড়ার টাকা, স্কুল ব্যাগ, শিক্ষা উপকরণ, পায়ের জুতা পর্যন্ত রাধা বাবুর টাকায় সংস্থান হয়। এভাবেই আমার বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী মানুষ হয়ে যাচ্ছে।

হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম ফারুক মুরাদ জানান, তিনি সহযোগিতা করেন, তবে সবাইকে না। এছাড়া স্কুলের আরেকজন আছেন, যিনি বছরে কমপক্ষে এক লক্ষ টাকা বিদ্যালয়কে দিয়ে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে দাস পরিবারে জন্ম নেয়া রাধা কান্ত রাজুর পৈত্রিক পেশা ছিলো মাছ ধরা। ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে জন্ম নেয়া রাধা কান্ত একটা সময় ব্যবসায় নিজেকে জড়িয়ে নিয়ে আজ নিজের ব্যবসায় নিজেই প্রতিষ্ঠিত।

রাধা কান্ত ঘরের বাইরে একেবারে ভিন্ন এক মানুষ। তিনি হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের ধেররা কালী চরণ দাস বাড়ির কালী চরণ দাসের ছেলে। রাজনৈতিকভাবে পৌর আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ হাজীগঞ্জ পৌর শাখার সভাপতি। জেলার সবচে' বড় পাইকারী মাছ বাজার ধেররা পাইকারী মাছ বাজারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়