সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩, ০০:০০

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও অনাবৃষ্টিতে পানি সঙ্কট
মাহবুব আলম লাভলু ॥

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। এ প্রকল্পটি মেঘনা-ধনাগোদা নদী দ্বারা বেষ্টিত। পানি সেচ ও নিষ্কাশনের মাধ্যমে অধিক ধান উৎপাদন করাই ছিল এ প্রকল্পের লক্ষ্যে। কিন্তু অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও অনাবৃষ্টিতে পানি সংকটে প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে না।

১৯৭৯-১৯৮০ সালে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু হয়। ১৯৮৭-১৯৮৮ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। নির্মাণের শেষে প্রাথমিক পর্যায়ে পরপর দুই বার ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালে বন্যার সময় বেড়িবাঁধটি ভেঙ্গে যায়। ১৯৯০ সালে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাজ সমাপ্ত হয়।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের সুবিধা শুরুর পর থেকে কৃষকরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকে। পরিকল্পনায় ক্রটি থাকায় প্রকল্পের সকল স্থানে পানি সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। অথচ ২২০ কিলোমিটার সেচ খাল ও ১২৫ কিলোমিটার নিষ্কাশন খাল নির্মাণ করা হয়েছিল।

প্রকল্প এলাকায় ২টি পানি উত্তোলন পাম্প রয়েছে। একটি কালিপুর (উত্তোলন ক্ষমতা ২৮.৯ কিউসেক) ও অপরটি উদমদী (উত্তোলন ক্ষমতা ৪৩.৩৫ কিউসেক)। এগুলো দিয়ে দ্রুত পানি সেচ ও নিষ্কাশন করার কথা। এ প্রকল্পে রয়েছে ২টি বুস্টার পাম্প। একটি এখলাছপুরে (উত্তোলন ক্ষমতা ২.২৬ কিউসেক) ও অপরটি ডুবগী (উত্তোলন ক্ষমতা ৩.৪ কিউসেক)। প্রকল্পের সব এলাকায় সেচ সুবিধা দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে সেচ সুবিধা থেকে ক্রমশ নিষ্কাশন সুবিধা কমে আসছে। প্রতি বছর বর্ষায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে প্রকল্প এলাকায় মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ময়লা-আবর্জনায় ও জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় খালগুলো ভরাট হওয়ায় বৃষ্টির পানি সরতে পারছে না। যার কারণে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় ফসলি জমি, বাড়ি, রাস্তা ও মৎস্য খামার।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পর থেকে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ বিষয় নিয়ে প্রতি বছর ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন পত্রিকা ও চ্যানেলে নিউজ প্রকাশিত হলেও পাউবো কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে প্রতি বছর সেচ প্রকল্পের ভেতর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

কৃষকরা জানিয়েছেন, পানি সরার খালগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ছেংগারচর বাজার এলাকায় পাউবো’র খালটি একেবারে বন্ধ হয়ে আছে। খালগুলো দিয়ে বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এবার জলাবদ্ধতার কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবো। প্রতি বছরই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে অনাবাদী থাকে কয়েক হাজার একর জমি। এভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় এ সেচ প্রকল্পটি আমাদের জন্যে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রকল্প শুরুর পর থেকে শুধুমাত্র বোরো মৌসুমে সেচ সুবিধা প্রদান করা হতো। বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে প্রকল্প এলাকায় আউশ ও আমন মৌসুমে জরুরি সেচ সুবিধা প্রদানের জন্যে কৃষকরা দাবি জানিয়ে আসছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত আমন মৌসুমে সাময়িক সেচ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।

মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পটি বাস্তবমুখী করার জন্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী প্রফেসর ড. শামসুল আলম ও আলহাজ্ব অ্যাডঃ নূরুল আমিন রুহুল এমপি প্রকল্পটি ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে প্রকল্পের উন্নয়নে ৩৪৭ কোটি ৬৫ লাখ ৬৯ হাজার টাকার সংস্কার প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন হয়েছে।

বর্ষায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং অপরিকল্পিত বনায়ন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও যত্রতত্র বাড়ি ঘর তৈরির ফলে প্রকল্প এলাকায় অনেক ফসলি জমি নষ্ট করা হচ্ছে। প্রতি বছর পানি নিষ্কাশন খাল সংস্কারের অভাবে অনেক এলাকায় সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় কৃষক নিঃস্ব হচ্ছে, আবার পানি সংকটে ভুগছেন অনাবৃষ্টিতে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়