সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৩, ০০:০০

এক নজরে মতলব দক্ষিণ উপজেলা
অনলাইন ডেস্ক

মতলব উপজেলা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলার একটি উপজেলা। ২০০০ সালে প্রশাসনিক অঞ্চলটি মতলব দক্ষিণ উপজেলা ও মতলব উত্তর উপজেলায় বিভক্ত হয়।

সীমানা : উত্তরে-মতলব উত্তর উপজেলা, পূর্বে-কচুয়া উপজেলা, দক্ষিণে-সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে-মতলব উত্তরের দক্ষিণাংশ ও চাঁদপুর সদর উপজেলার উত্তরাংশ।

আয়তন : ১৩১.৬৯ বর্গ কিলোমিটার, জনসংখ্যা : ২,১০,০৫০ জন, লোকসংখ্যার ঘনত্ব : ১৫৯৫ (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে), গ্রাম-১৩১টি, মৌজা-৯৮টি, ইউনিয়ন-৬টি, পৌরসভা-১টি, এতিমখানা (সরকারি)-১টি, বেসরকারি- ১টি, মসজিদণ্ড২৯১টি, মন্দির-৪৭টি, নদ-নদী-১টি (ধনাগোদা), হাট বাজার- ৩৪টি, ব্যাংক-৭টি, পোস্ট অফিস-৩৬টি, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প-৭৮১টি।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব : ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলী পাটোয়ারী, ডেপুটি স্পিকার এটিএম আবদুল মতিন পাটোয়ারী, সাবেক সংসদ সদস্য ফ্লাঃ লেঃ (অব) এবি সিদ্দিক সরকার, সাবেক বিমান বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা হরদয়াল নাগ, সাবেক সচিব এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. শোয়েব আহমেদ পাটোয়ারী, সাবেক মুহাদ্দিস, ফরিদাবাদ মাদ্রাসা আল্লামা সফিউল্লাহ চাঁদপুরী।

দর্শনীয় স্থান : দীপ্ত বাংলা (মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য), বোয়ালিয়া জমিদার বাড়ি, ধনাগোদা নদী, মতলব সেতু, হোনাইরার বিল, রবিউল্লা দিঘি, আইসিডিডিআর,বি (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র), বঙ্গবন্ধু বিল, কাশিমপুর জমিদার বাড়ি, আলাল দুলালের মাজার, কাচিয়ারা কাঞ্চন রাজার দিঘি, আশ্বিনপুর অশ্বিনি কুমার রাজার দিঘি। তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া

আইসিডিডিআর,বি : আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ বা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ, সংক্ষেপে আইসিডিডিআর,বি বাংলাদেশে অবস্থিত একটি আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং এর দায়িত্ব হচ্ছে উদরাময় রোগ, পুষ্টি এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করা। বৈশ্বিক জীবন রক্ষার সমাধানের জন্যে জ্ঞান বিকাশ ও তা ভাগাভাগি করে নিতে আইসিডিডিআর,বি বিশ্বব্যাপী একাডেমিক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় গবেষণা, প্রশিক্ষণ এবং সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করে, পাশাপাশি প্রোগ্রাম ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায় এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ নাম ধারণ করে। এর পর কিছুদিন এর অবস্থা কিছুটা খারাপ থাকলেও অচিরেই আবার এর কার্যক্রম শুরু হয় এবং নাম পরিবর্তন করে শুধু ‘কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি’ রাখা হয়। বাংলাদেশের বেশ কিছু উদ্যোগী বিজ্ঞানী এবং আন্তর্জাতিক কয়েকজন বিজ্ঞানীর একটি দল ১৯৭৮ সালে এই ‘কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি’কে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন করেন। সরকার এ প্রস্তাবে সায় দেয় এবং জাতীয় সংসদের একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে একে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তখনই এর নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম দেয়া হয়।

ঢাকা শহর থেকে ৬০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে মতলব দক্ষিণ উপজেলায় এই কেন্দ্র পরিচালিত মাঠ পর্যায়ের একটি গবেষণা স্টেশন আছে। এখানে বসবাসকারী প্রায় ২ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর সমীক্ষা পরিচালনা এবং পর্যবেক্ষণই এই স্টেশনের উদ্দেশ্য। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এই স্থানে কলেরা রোগের বিভিন্ন টিকার কার্যকারিতার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এখানে ঔষধ, পুষ্টি এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ওপরও গবেষণা পরিচালিত হয়।

সম্প্রতি আইসিডিডিআর,বি-এর গবেষণা কার্যক্রমের বিস্তার আরো দীর্ঘায়িত হয়েছে। নতুন অন্তর্ভুক্ত গবেষণার ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসরোগ, যৌনরোগ, এইডস, হেপাটাইটিস, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা ও বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি।

এই প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো ওরস্যালাইন উদ্ভাবন। এই দ্রবণ লবণ এবং গুড়ের সংমিশ্রণে প্রস্তুত করা হয়। উদরাময়ে আক্রান্ত রোগীর দেহ থেকে বের হয়ে যাওয়া দেহরসের পুনঃযোগান দেওয়ার মাধ্যমে এটি রোগীকে সুস্থ করে তোলে।

মতলব দীপ্ত বাংলা : মতলব দক্ষিণের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক স্তম্ভ হচ্ছে ‘দীপ্ত বাংলা’। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিসৌধ 'দীপ্ত বাংলা'র ভিত্তিপ্রস্তর মতলব জেবি পাইলট হাইস্কুল মাঠে ১৯৯৭ সালের ৪ ডিসেম্বর স্থাপন করা হয়। ‘দীপ্ত বাংলা’ নির্মাণের প্রধান স্থপতি একুশে পদক প্রাপ্ত কবি ও স্থপতি রবিউল হোসাইন। এটির নকশা তৈরি করেন চাঁদপুরের কৃতী সন্তান চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শিল্পী হাশেম খান, স্থপতি রবিউল হোসাইন ও ড. মুনতাসির মামুন। মতলবের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অপূর্ব কুমার বিশ্বাসের উদ্যোগে, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এমএ ওয়াদুদের প্রস্তাবে এবং তৎকালীন স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতায় এই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়। ১৯৯৯ সালের ৪ ডিসেম্বর মতলব মুক্ত দিবসে এ স্তম্ভটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বীরবিক্রম।

মতলব সেতু : মতলব উত্তর ও দক্ষিণ এ দুটি উপজেলার সেতুবন্ধন এবং রাজধানী ঢাকার সাথে চাঁদপুরের দূরত্ব কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ধনাগোদা নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে ‘মতলব সেতু’। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ধনাগোদা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ৮৪ কোটি টাকার মধ্যে মূল সেতুর ব্যয় ৫৬ কোটি টাকা আর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে স্থানীয় এমপি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

মতলব উত্তর-দক্ষিণ উপজেলাকে ধনাগোদা ও মেঘনা নদী বিভাজন করেছে। দুটি উপজেলার প্রায় ৮ লাখ মানুষের জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র পথ ধনাগোদা নদী পারাপার। সেই সাথে রাজধানী ঢাকার সাথে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও বরিশাল এবং চাঁদপুরের হাইমচর, শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ, সদর ও হাজীগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকার মানুষের যাতায়াতের সহজ পথ এটি। এছাড়া এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিপণ্য পরিবহন, চাঁদপুর থেকে ইলিশসহ দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর মাছ স্বল্প সময়ে ঢাকায় দ্রুত পৌঁছানো ও পণ্য আনা-নেয়ার সহজ মাধ্যম এ সেতু।

মতলব সেতু ৩০৪ দশমিক ৫১ মিটার দৈর্ঘ্যের আরসিসি সেতু। অ্যাপ্রোচ সড়কের ওপর ৩০.৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি সেতু, ১২ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি আরসিসি কালভার্ট, ১০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি আরসিসি আন্ডারপাস, ১.৮৬ কিলোমিটার সার্ফেসিং এবং নতুন পেভমেন্ট তৈরি, ৯ দশমিক ৩৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, ৩.২৩ লাখ ঘন মিটার সড়ক বাঁধ, জিও টেক্সটাইল, টো-ওয়াল, সার্ফেস ড্রেন, দুটি ইন্টারসেকশন আইল্যান্ড এবং সাইন, সিগন্যাল ইউটিলিটি সিফটিংসহ আনুষঙ্গিক কাজের সমন্বিত রূপ হচ্ছে মতলব সেতু। সেতুতে ১০.২৫ মিটার প্রস্থের ৭টি স্প্যান রয়েছে এবং সেতুর দুপাশে ১.৮৬ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক।

বোয়ালিয়া জমিদার বাড়ি : বোয়ালিয়া জমিদার বাড়ি মতলব দক্ষিণ উপজেলায় অবস্থিত একটি জমিদার বাড়ি। প্রায় সতেরশ’ শতকের শেষের দিকে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পরবর্তী সময়ে মহব্বতপুর গ্রামের রায় মজুমদার ও বোয়ালিয়া গ্রামের দে চৌধুরী মিলে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। তারা একসাথে এখানের জমিদারির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বংশ পরম্পরায় এখানে জমিদারি চলতে থাকে। এই জমিদার বাড়ির জমিদাররা ছিলেন বেশ দানশীল। এর জন্যে তাদের বেশ সুনাম ছিল, যা এখনো রয়েছে। মতলবের মসজিদ ও জগন্নাথ মন্দির তৈরি করার জন্যে জমিদার রাজকুমার চৌধুরী জায়গা দান করেছিলেন। জমিদার ললিত মোহন রায় চৌধুরী বোয়ালিয়া গ্রামে বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা বিদ্যালয়, বাজার ও ডাকঘর প্রতিষ্ঠা করেন। এইরকম তাদের অসংখ্য দানশীলতার চিহ্ন এখনো এখানে বিদ্যমান রয়েছে। দেশভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে এই জমিদার বাড়ির জমিদারিরও ইতি ঘটে।

কাঞ্চনমালার দিঘি : মতলব দক্ষিণ উপজেলার একেবারে উত্তর সীমানা ঘেঁষে কাচিয়ারা গ্রামে কাঞ্চনমালার দিঘি অবস্থিত। দিঘির আয়তন প্রায় ১২.৪৩ একর। স্থানীয়রা এটাকে কাঞ্চনরাজার দিঘি নামে ডাকেন। এটি প্রায় ৪০০ বছর আগে খনন করা হয়। এই দিঘির পাড়ে অবস্থিত কাচিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাচিয়ারা উচ্চ বালক বিদ্যালয়, কাচিয়ারা উচ্চ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাচিয়ারা আলিম মাদ্রাসা, কাচিয়ারা এতিমখানা ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা। যা একটি শিক্ষা কমপ্লেক্সে রূপ নিয়েছে। এই দিঘির পাশে ছিল জমিদার বাড়ি, নাহার বাড়ি (পানির নহর), জমিদার বাড়ির পশ্চিমে নিরাপত্তার জন্যে ছিল পরিখা ইত্যাদি।

কাশিমপুর জমিদার বাড়ি : কাশিমপুর গ্রামটি মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। পীর কাশেম আলীর নামানুসারে কাশিমপুর গ্রামটির নামকরণ। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রাচীন বাংলার রাজা রামনাগ রায় চৌধুরী নামে এক জমিদার ছিলেন ওই গ্রামে। কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি পরিবেশে সবুজ গাছ-গাছালির মাঝে প্রায় ৩০০ বছর আগে কাশিমপুর গ্রামে ইট-সুরকি দ্বারা নির্মিত হয় বাড়িটি। জমিদার বাড়ির ভবনগুলো বাহারি ফুলে সজ্জিত ছিলো।

মতলব সদর থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্বকোণে হাজীগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলার সীমানা ঘেঁষে কাশিমপুর জমিদার বাড়িটির অবস্থান। প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী এবং আভিজাত্যের সাক্ষী কাশিমপুর জমিদার বাড়িটি এই অঞ্চলের অন্যতম দর্শনীয় স্থান ছিল।

কথিত আছে, রাজা রামনাগ রায় চৌধুরীর বাড়িতে সন্ধ্যা প্রদীপ ও আলোর প্রয়োজনে দৈনিক ১২ (বার) পাড়ি (৬০ কেজি) কেরোসিন পুড়ানো হত। এখানে প্রতি সপ্তাহে জমিদারি এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা, কৃষি-সামাজিক বিষয়ে গ্রাম প্রধানদের নিয়ে হতো আলোচনা।

রাজা রামনাগ রায় চৌধুরীর বাড়িটি ১৪৭ একর জমির ওপর অবস্থিত। এর মধ্যে রয়েছে খাল, ছোট-বড় ২০-২৫ টি পুকুর। বাড়িটির প্রবেশ পথ অর্থাৎ বারদুয়ার থেকে ২০০ মিটার পশ্চিমে জোড় পুকুর। তার পাশেই রাজা রামনাগ রায় চৌধুরীর শয্যা ঘর, মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বারদুয়ার থেকে ৩শ’ গজ পূর্ব পাশেই রাজা রামনাগ রায়ের প্রতিষ্ঠিত কাশিমপুর বাজার। বাজারের পাশেই রয়েছে ১৬ একর জমির ওপর খনন করা বিশাল দিঘি। বারদুয়ারের পাশে রয়েছে ৩০ মিটার উঁচু রাজা রামনাগ চৌধুরীর বিশাল সমাধি, পঞ্চরত্ন মন্দির, আন্ধার মানিক ঘর, ঘাতক খানা ইত্যাদি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এগুলো এখন বিলীনের পথে।

স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, কবে থেকে রাজা রামনাগ রায় চৌধুরী জমিদারি করে আসছেন এ বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও মারা যাওয়ার পর তার পুত্র হরদয়াল নাগ বাংলা ১২০৬ খ্রিঃ থেকে এ এলাকায় জমিদারি শুরু করেন। হরদয়াল নাগের মৃত্যুর পর রামদয়াল নাগ, সূর্য কুমার নাগ, প্রাণ কুমার নাগ ও মন কুমার নাগরা একের পর এক জমিদারি করে আসছিলেন। পরে ১৯৪০ সালে মন কুমার নাগ জমিদারি ছেড়ে ভারতে চলে যান। এরপর উত্তরসূরি হিসেবে হরেন্দ্র নাগ চৌধুরী জমিদারি দেখাশোনা করতেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রাক্কালে তিনিও চলে যান ভারতে।

স্থানীয়রা আরো জানান, গত ৮/১০ বছর পূর্বেও ওই বাড়িতে ছিলেন জমিদার বংশের উত্তরসূরি সঞ্জিত কুমার নাগ (কাকা বাবু) ও তার পরিবার। তার যেটুকু সম্পত্তি ছিলো সেটুকু চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. শামসুল হক ভূঁইয়ার কাছে বিক্রি করে এখান থেকে চাঁদপুরে চলে যান এবং সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

হোনাইরার বিল : মতলব দক্ষিণ উপজেলার ১নং নায়েরগাঁও উত্তর ইউনিয়নে অবস্থিত নানা কিংবদন্তি আর রূপকথায় ঘেরা হোনাইরার বিল। এই বিলের দক্ষিণে বাড়োগাঁও ও তুষপুর, পূর্বদিকে ঘোনা, কাচিয়ারা গ্রাম এবং উত্তর দিকে নন্দীখোলা, পশ্চিমে পেয়ারীখোলা গ্রাম।

এই বিল এবং আশপাশের ইতিহাস অনেক পুরানো। সময়ের সঠিক হিসেব কেউ দিতে পারে না। কথিত আছে, প্রায় ১ হাজার বছর আগে সপ্তডিঙ্গা বোঝাই মণিমানিক্য মগরাজাদের বজরা ঝড়ের কবলে পড়ে এই বিলে ডুবে যায়। ডুবন্ত জায়গায় একটি পুকুর আছে। যা হোনাইরার পুকুর (স্বর্ণের পুকুর) নামে খ্যাত। সে হিসেবেই এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল হোনাইরার বিল নামে পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা বাপ-দাদার কাছে শুনেছি, এক সময় এখানে বৃষ্টি হলে বা হালচাষ করতে গেলে মানুষ স্বর্ণ পেতো।

উপজেলার বাড়গাঁও গ্রামের বাসিন্দা মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, হোনাইরার বিলের পাশের লাক গ্রামের কাছে ডিঙ্গি গাছ ছিল। যার আকৃতি ছিল বড় ডিঙ্গি নৌকার মতো। তার মতে, মগরাজাদের মণিমানিক্য বোঝাই সপ্তডিঙ্গা ডুবেছিল লাক গ্রামে। সেখানে এখন ডিঙ্গি গাছ না থাকলেও স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ছোট একটি ডোবার মতো রয়েছে। আজ থেকে প্রায় ১ হাজার বছর আগে এ অঞ্চলে নদী ছিল। তখন সেখান দিয়ে সওদাগরের পণ্যবাহী নৌকা চলাচল করতো বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

আশ্বিনপুর দিঘি : মতলব দক্ষিণ উপজেলার আশ্বিনপুর গ্রাম। যা মতলব দক্ষিণ উপজেলার সবচেয়ে উঁচু জায়গা। যেখানে সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহ বন্যার সময়ও পানি উঠে নি। এখানে প্রাচীনকালে আশ্বিনীকুমার নামে একজন জমিদার ছিলেন। আর বর্তমান আশ্বিনপুর তৎকালীন সময়ে ধর্ম শহর নামে পরিচিত ছিলো। এটা পাটেশ্বর রাজা বা প্রাণেশ্বর রাজার রাজধানী ছিলো বলে জনশ্রুতি আছে। এখানে দেশি-বিদেশি বণিকদের আনাগোনা ছিলো। কথিত আছে, আশ্বিনপুরে ছিলো ধর্ম শহর এবং হোনাইরার বিলের পাশে লাক গ্রামে ছিল টঙ্গীর শহর। আরো কথিত আছে, আশ্বিনপুর শহরের সমৃদ্ধি ও আয়-ব্যয় রক্ষণাবেক্ষণে লাকের বুরুজং প্রসিদ্ধ ছিল। এখনো মাটি খনন করলে পুরানো ইটের দেয়ালের ভগ্নাবশেষ পাওয়া যায় আশ্বিনপুরে। প্রায় ৭০০ বছর আগে রাজা আশ্বিনীকুমারের সময়ে এখানে দিঘি কাটা হয়। এই দিঘির তলদেশ পাকা করা আছে বলে স্থানীয়রা জানান। জনশ্রুতি আছে, কলেরা, বসন্ত মহামারীর কারণে প্রাচীন ধর্মশহর বর্তমান আশ্বিনপুর দীর্ঘ সময় বিরান ভূমিতে পরিণত ছিলো।

মুসলিম বাংলার ইতিহাস বইয়ের ৯৩ পৃষ্ঠার তথ্যমতে, বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ১৩৪০ খ্রিঃ সোনারগাঁও, চট্টগ্রাম ও সিলেট ভ্রমণের সময় বর্তমান আশ্বিনপুর প্রাচীন ধর্মশহর বন্দরে কিছুক্ষণ অবস্থান করেছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়