সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৩, ০০:০০

ব্রিটিশ আমল থেকে বিখ্যাত মতলবের প্রসিদ্ধ ক্ষীর
রেদওয়ান আহমেদ জাকির ॥

মতলবের এক প্রসিদ্ধ খাবার হচ্ছে ক্ষীর। ‘মতলবের ক্ষীর, বগুড়ার দই; না খেয়ে ক্যামনে রই!’ কথাটি চাঁদপুর তথা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে। বগুড়ার দই যেমন সবার কাছে সমাদৃত, চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের ক্ষীরও তা-ই। এই ক্ষীরের সুনাম শত বছরের। আজও আছে। প্রসিদ্ধ এ ক্ষীর বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল তথা দেশের বিভিন্ন জায়গায়সহ দেশের বাইরে রপ্তানি করা হতো, এখনও হচ্ছে। এর চাহিদা অনেক। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই খাঁটি দুধে তৈরি এখানকার ক্ষীর গুণে ও মানে এখনো অটুট। ভোজনরসিকদের প্রিয় রসনা। বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে হোম ডেলিভারী দেয়া হচ্ছে।

গুণ, মান ও স্বাদের কারণে ব্রিটিশ আমলে এখানকার জমিদার ও ইংরেজদের কাছে এই ক্ষীর খুবই প্রিয় ছিল। তখন ক্ষীর দিয়ে বিয়ে, পূজা-পার্বণে আপ্যায়ন করা হতো। মতলব উপজেলা প্রশাসন সম্পাদিত ‘মতলবের ইতিবৃৃত্ত’ বইয়ে এই ক্ষীরের উল্লেখ আছে। ২০১৩ সালে প্রকাশিত ওই বইয়ের ৪৪ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘মতলবের ক্ষীর খুবই প্রসিদ্ধ। সারা দেশে ক্ষীরের ব্যাপক চাহিদা ও কদরের কারণে একসময় অনেক হিন্দু পরিবার ক্ষীর তৈরি এবং ক্ষীরের পাত্র বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকতো। এখনো এই ক্ষীরের চাহিদা সর্বত্র।’

উপজেলা সদরের কলেজ রোডে অবস্থিত ক্ষীর বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান আদি গান্ধী ঘোষ। দোকানটির মালিক রোটাঃ সজল ঘোষ বলেন, পাঁচটি কারণে এখানকার ক্ষীর গুণে ও মানে সেরা। প্রথমত, গৃহস্থের কাছ থেকে সংগ্রহ করা খাঁটি দুধ দিয়ে এই ক্ষীর বানানো হয়। দ্বিতীয়ত, দুধ ও চিনি মিশ্রণের অনুপাতে হেরফের হয় না। এক কেজি ক্ষীর বানাতে পাঁচ কেজি দুধ ও ৫০-৬০ গ্রাম চিনি মেশানো হয়। তৃতীয়ত, ক্ষীরে ময়দা বা আটা মেশানো হয় না। চতুর্থত, দুধের ননী ওঠানো হয় না। ননীসহ ক্ষীর বানানো হয়। পঞ্চমত, লাকড়ির চুলায় ক্ষীর তৈরি করা হয়।

উপজেলা সদর বাজারের নন্দ কেবিন ক্ষীর-ঘরের মালিক সঞ্চয় ঘোষ বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকেই উপজেলা সদরের ঘোষপাড়া এলাকার গান্ধী ঘোষের পূর্বসূরিরা ক্ষীর তৈরি শুরু করেন। খাঁটি ও স্বাদের কারণে তখন এলাকায় এই ক্ষীরের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তাদের দেখাদেখি কলাদী ও বাইশপুর গ্রামের দাসপাড়ার আরো ১৫-২০টি হিন্দু পরিবার এ কাজে নামে। বর্তমানে ঘোষপাড়ার উত্তম ঘোষ, সুনীল ঘোষ, মিলন ঘোষ, গান্ধী ঘোষ, অনিক কুমার ঘোষ, উৎপল ঘোষ এবং দাসপাড়ার মাখনলাল ঘোষ, নির্মল ঘোষসহ কয়েকটি পরিবার ক্ষীরের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

আনন্দ ক্ষীর-ঘরের মালিক উৎপল ঘোষ জানান, প্রতিদিন সকালে গৃহস্থের কাছ থেকে খাঁটি দুধ সংগ্রহ করে রাখা হয়। দুপুরে এসব দুধ বড় পাত্রে রেখে চুলায় দুই ঘণ্টা জ্বাল দেয়া হয়। ক্ষীর তৈরি হলে ছোট ছোট পাত্রে আলাদাভাবে রাখা হয়। পরে মাটির পাত্রে ক্ষীর রেখে ফ্যানের বাতাসে কিছুক্ষণ রাখার পর ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়।

প্রবীণ ক্ষীর ব্যবসায়ী কিশোর ঘোষ বলেন, বর্তমানে এক কেজি দুধের দাম ৭০-৮০ টাকা। চিনিসহ অন্যান্য খরচ মিলে এক কেজি ক্ষীর বানাতে খরচ পড়ে ৪৩০ টাকা। প্রতি কেজি ক্ষীরের দাম পড়ে প্রায় ৫০০ টাকা।

কয়েকজন ক্ষীর ক্রেতা জানান, মতলব ক্ষীরের জন্যে বিখ্যাত। আগে প্রকৃত ক্ষীর কিনতে পারতাম। এখন বেশি মূল্য দিয়েও প্রকৃত ক্ষীর পাওয়া দুর্লভ। এদিকে এখনও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ক্রেতারা এসে ক্ষীর কিনছেন। দুধের মূল্য কম হলেই স্বল্প দামে প্রকৃত ক্ষীর পাওয়া যায়। এ প্রসিদ্ধ খাবারটি সবার পছন্দনীয় হলেও হতদরিদ্র মানুষরা অর্থের জন্যে তা কিনে খেতে পারছেন না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়