প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৩, ০০:০০
মানুষ জন্মগতভাবে বিনোদন প্রিয়। ঘুরতে ভালোবাসেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। কাজে এবং চাপে মানুষ যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তখন একটু প্রশান্তির জন্যে মনোরম পরিবেশে খুঁজতে থাকে। অবসাদ দূর করার জন্যে নির্মল পরিবেশের বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে কারো পছন্দ সমুদ্র, কারো পছন্দ পাহাড় আবার কারো হয়তো কৃত্রিম শিল্প অথবা স্থাপনা। সময় স্বল্পতা এবং বাজেট সংকটের কারণে কেউ কেউ বেছে নেন পাশর্^বর্তী অথবা নিজ এলাকার নদীর পাড় অথবা দৃষ্টিনন্দন কোনো স্থান। যেখানে বসে মনকে করা যাবে চাঙ্গা।
ফরিদগঞ্জ উপজেলাবাসী অসম্ভব বিনোদনপ্রেমী। ঘোরার জন্যে সবসময় মুখিয়ে থাকে। একটু সময় পেলেই ঘুরতে চলে যায়। এখানে জগদ্বিখ্যাত কোনো পর্যটন কেন্দ্র না থাকলেও কয়েকটি স্থান এবং স্থাপনাকে কেন্দ্র করে মানুষের ভিড় সবসময় লেগেই থাকে। বিশেষ করে কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে এখানে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। সরকারিভাবে অথবা ব্যক্তি উদ্যোগে এসব স্থাপনা এবং স্থানের সংস্কার করে কোনো ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করলে সুফল পাওয়া যাবে। এতে সরকার যেমন পাবে রাজস্ব, তেমনি এলাকাবাসী পাবে নির্মল আনন্দ। ফরিদগঞ্জ পেতো একটি আলোচিত পর্যটন কেন্দ্র।
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বেশ ক’টি পুরাতন স্থাপনা রয়েছে। যেমন : লোহাগড়ের মঠ, সাহেবগঞ্জ নীলকুঠি, রূপসা জমিদার বাড়ি, কড়ৈতলী জমিদার বাড়িসহ বেশ ক’টি জমিদার বাড়ি। এর মধ্যে শুধুমাত্র রূপসা জমিদার বাড়িটি ব্যবহার হচ্ছে। বাকি স্থাপনাগুলো অবহেলায় অযত্নে আস্তে আস্তে সৌন্দর্য যেমন হারাচ্ছে তেমনি নষ্টও হয়ে যাচ্ছে। শত শত বছরের পুরানো এসব স্থাপনার যথাযথ সংস্কারের উদ্যোগ নিলে এখানে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকবে। কারণ এগুলো আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ। সাধারণত একশ’ বছরের পুরাতন স্থাপনা, ভবন, ভাস্কর্য, শিলালিপি, মুদ্রা, অলংকার ইত্যাদিকে প্রত্নতত্ত্ব বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ প্রত্নসম্পদে অত্যন্ত সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এ সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান সীমিত। মানুষের রেখে যাওয়া এ সকল স্মৃতিচিহ্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লোহাগড় মঠের আশপাশ পরিষ্কার রাখাতে এবং যাতায়াতের রাস্তাটি করে দেয়ার কারণে বিভিন্ন উৎসবে এখানে এবং রূপসা জমিদার বাড়িতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সাহেবগঞ্জ নীলকুঠিতে রয়েছে একাধিক স্থাপনা। সেই সাথে এখানে কয়েক একর জায়গা কয়েক বছর ধরে বেদখল হয়ে আছে। প্রশাসন সরকারি এই ভূমিকে দখল মুক্ত করে এখানে বিশাল পর্যটন কেন্দ্র করতে পারে।
স্থাপনা ছাড়াও ফরিদগঞ্জের মানুষকে সবচেয়ে বেশি টানে নদী। তাইতো দুই ঈদ, জাতীয় দিবস যেমন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস, বাংলা বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে ফরিদগঞ্জের ডাক বাংলো সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীর দুপাশ এবং ফরিদগঞ্জ ব্রিজের পাশে ‘অমি স্মৃতি পার্ক’ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। ঈদের সময় টানা ৫/৬দিন এরকম ভিড় থাকে। অমি স্মৃতি পার্ক হলেও লোক মুখে রাজা পার্ক নামেই বেশির ভাগ মানুষ চিনে। তার কারণ মোঃ রাজার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং বিনিয়োগে পার্কটির সৌন্দর্য দিন দিন বাড়ছে। পার্কটি নদী এবং ব্রিজ সংলগ্ন হওয়াতে সকলের দৃষ্টি কাড়ে। কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক মিশেলে গড়ে উঠছে পার্কটি। নদীতে রয়েছে একাধিক ছোট-বড় নৌকা। পাড়ে রয়েছে শিশুদের জন্যে একাধিক রাইড। এছাড়াও রয়েছে বিশাল ফুচকা এবং চটপটির দোকান। ডাকবাংলো সংলগ্ন পর্যটন এরিয়াতে কোনো ধরনের রাইড না থাকলেও সাবেক আঞ্চলিক মহাসড়ক, সাবেক চাতাল, নদীর তিনটি ধারার মিলনস্থল, বাকি দুই পাশে বিশাল বিশাল চর অঞ্চলটিকে করে তুলেছে স্বর্গীয়। মনোমুগ্ধকর এই পরিবেশকে উপভোগ করতে প্রায় প্রতিদিন বিকেলে এখানে লোকজন আসে।
আজকে আমরা যে ফরিদগঞ্জ দেখছি, তা কিন্তু একদিনে তৈরি হয়নি। কয়েকশ’ বছরের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় আজকের এই ফরিদগঞ্জ। অনেকটা অগোছালো, অপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ফরিদগঞ্জের উন্নয়ন। বর্তমানে উপজেলাবাসী অনেক আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, হয়তোবা আগামী কয়েক দশকের মধ্যে এক স্বপ্নিল ফরিদগঞ্জ দেখবে জনগণ। যদি কর্তাব্যক্তিরা সুপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কাজ করেন।