সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৩, ০০:০০

দুই সেতুতে বদলে যাবে ফরিদগঞ্জের অর্থনীতি
প্রবীর চক্রবর্তী ॥

ডাকাতিয়া নদীর ওপর নির্মাণাধীন ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতু ও উটতলী সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন হলে ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এমনটাই আশা স্থানীয় বাসিন্দাদের। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে কৃষি পণ্য বিকিকিনি বৃদ্ধিসহ নানাখাতে অর্থনীতির চাকা ঘুরবে বলে কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা।

ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতু : এককালের প্রমত্তা ডাকাতিয়া নদীর ওপর ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের চর রনবলিয়া গ্রাম ও চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ছোটসুন্দর গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বগার গুদাড়া এলাকা দিয়ে ২৭৭ মিটার দীর্ঘ ভাষাবীর এমএম ওয়াদুদ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার নবারুণ টেড্রার্স লিঃ সেতুটির মূল কাজ তথা নদীর ওপরের কাজটি সম্পন্ন করে। পরে ২০২০-২১ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপের কাজের জন্যে ২৮ কোটি ৯৫ লাখ ৮২ হাজার ৮৫৪ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিজভী কনস্ট্রাকশন ও ইউনুছ আল মামুন (জেবি) যৌথভাবে কাজ শুরু করে। বেশ ক’বার সময় বাড়ানোর পর আগামী ৩০ জুনের মধ্যেই সেতুর কাজ সম্পন্ন হবে বলে প্রত্যাশা করছে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যেই সেতুর অনেকটা কাজ শেষ হয়ে গেছে।

এদিকে গত ৬ বছর ধরে সেতু নির্মাণের কাজ দেখে আসছে স্থানীয় দুই পাড়ের বাসিন্দারা। তারা আশা করছে, দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি নির্মিত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে স্থানীয় অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তরাঞ্চলটি উপজেলা সদর থেকে অনেকটা দূরে। সেতুটি যান চলাচলের জন্যে উন্মুক্ত হলে ফরিদগঞ্জের পরিবর্তে অতি সহজেই কৃষিজ পণ্য পাশর্^বর্তী চাঁদপুর জেলা সদরে নিয়ে যেতে পারবেন কৃষকরা। ফলে খরচ হ্রাসের সাথে সাথে ভালো মূল্য পাবেন-এমন প্রত্যাশা কৃষকদের।

বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের চররনবলিয়া গ্রামের নূর মোহাম্মদ (৬৫) জানান, নিজেদের জমি দিয়েছি এই সেতুর জন্যে--সেতু হলে দুই পাড়ের মানুষের জন্যে ভালো হবে এই ভেবে। সেতুটি নির্মিত হলে আমাদের জমির দাম বাড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়লে আমাদের লাভ হবে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ছোটসুন্দর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মাধব দাস (৪৫) বলেন, আমি চাঁদপুর সদরের বাসিন্দা হলেও ফরিদগঞ্জে এসে ব্যবসা করি। আমার মতো আরো অনেক লোক রয়েছে, যারা উভয় পাড়েই আসা-যাওয়া করে ব্যবসা করছে। সেতু চালু হলে আমাদের কাজের সুবিধা হবে। ব্যবসায় গতি বাড়বে।

চাঁদপুর এলজিইডি বিভাগের এসও এবং সেতুর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আইউব খান জানান, ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ সেতুর কাজ শেষের পথে। আশা করছি জুনেই এটি যান চালাচলের জন্যে উন্মুক্ত হবে।

উল্লেখ্য, চাঁদপুর-হাইমচর আসনের এমপি ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির পিতা ভাষাসৈনিক মরহুম এমএ ওয়াদুদের নামানুসারে সেতুটির নামকরণ করা হয়।

এদিকে ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও হাজীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের লাখো মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন উটতলী ব্রীজের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয়েছে। ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মূল সেতু এবং এপ্রোচ সড়কসহ মোট ১০৭ কোটি টাকার এই সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর নানা সমস্যার কারণে সেতুর কাজ শুরু হতে বিলম্ব হয়। কাজের মান ও দ্রুতলয়ে কাজ করার জন্যে ইতেমধ্যেই এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মহসিন গত ২০ এপ্রিল উটতলী ব্রীজের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন। চলছে পাইলিংয়ের কাজ, আশা করা হচ্ছে আগামী দুই বছরের মধ্যে সেতুটি যান চলাচলের জন্যে খুলে দেয়া যাবে।

এদিকে ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি দুই উপজেলার ভূমিকে সংযুক্তকারী ১৩টি স্প্যানের ওপর নির্মিতব্য। দৃষ্টিনন্দনভাবে নির্মিত হলে দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বাণিজ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ফিরবে মানুষের ভাগ্য। যেমনটি শুরু হয়েছে পদ্মাসেতু নির্মাণের পর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনে।

উটতলী খেয়াঘাটে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পারাপার হচ্ছে দুই পাড়ের মানুষ। প্রতিবার পার হওয়ার জন্যে ইজারাদারকে ৫ টাকা ও নৌকার মাঝিকে ৫ টাকা করে দিতে হয়। এতে দুই উপজেলার সাধারণ মানুষকে ব্যবসা-বাণিজ্য, বাজারে যাতায়াতের সময় টাকা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে হাজীগঞ্জের অলিপুর অংশের শিক্ষার্থীদের মুন্সীরহাট স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। শিক্ষার্থী আলমগীর, লায়লা আক্তার, অলিপুর গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা, নূরজাহানসহ একাধিক ব্যক্তি এ কথা বলেন।

গত ১১ বছর ধরে সিএনজি অটোরিকশা চালান অলিপুর গ্রামের জুয়েল। তিনি জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সেতুটির অপেক্ষায় রয়েছি। এই সেতুটির দুই উপজেলার মানুষের জন্যে ভালো কিছু বয়ে আনবে বলে বিশ্বাস করি। এখন গাড়ি চালিয়ে যেটুকু আয় হয়, সেতু দিয়ে চলাচল শুরু হলে আশা করছি আমাদেরও আয় বাড়বে। সিএনজি চালক হানিফ, আরিফ হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, শাহপরান জানান, আমরা এখন অলিপুর থেকে কৈয়ারপুল পর্যন্ত যাত্রী আনা-নেয়া করি। সেতুটি দিয়ে আসা-যাওয়া করতে পারলে যাত্রীও বাড়বে, আমাদের আয়ও বাড়বে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আববার আহমেদ জানান, সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি যথাসময়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নূরে আলম জানান, দুটি সেতু ফরিদগঞ্জ উপজেলার উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উপজেলার এই অংশটিতে অর্থকরী ফসল আখ, সবজি ও ধানের ব্যাপক আবাদ হয়। সেতু দুটি চালু হলে লোকজন সহজেই চাঁদপুর, কুমিল্লা ও ঢাকা আসা-যাওয়ার মাধ্যমে তাদের ফসলগুলোর ভালো দাম পাবে বলে বিশ্বাস করি। তাদের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়নের কারণে খরচের পরিমাণও কমে আসবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়