প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুরে গণপিটুনিতে নিহত সেলিম খানের পিস্তলের খোঁজ মিলছে না
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই দিন সন্ধ্যায় এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে ধরা পড়ে সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের আলোচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও বালুখেকো সেলিম খান ও তার ছেলে চিত্রনায়ক শান্ত খান। পরে দুজনকেই বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করে জনতা। এ সময় সেলিম খানের লাইসেন্স করা একটি পিস্তল ও একটি শর্টগান খোয়া যায়।
ওই অস্ত্রের সন্ধানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ তৎপর হলে ঘটনার ১০ থেকে ১২ দিন পর জেলা সদরের বাগাদী এলাকার মোঃ এহসান মেম্বার নামের এক ব্যক্তি শর্ট গানটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। তবে এখনও খোয়া যাওয়া পিস্তলটির খোঁজ পাওয়া যায়নি।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন রনি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তিনি গত ১ সেপ্টেম্বর এ থানায় যোগ দিয়েছেন। সেলিম খানের পিস্তল খোয়া যাওয়ার বিষয়টি এখনও অভিযোগ আকারে জানানো হয়নি। তবে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকার থেকে যতো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়, তার সব স্থগিত করা হয়েছে। এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিজ নিজ জেলার থানায় জমা দিতে বলা হয় এবং এর সময়সীমা ছিল ৩ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার)।
এদিকে, দেশব্যাপী বৈধ এবং অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেয়ার ঘোষণার পর চাঁদপুরে এরই মধ্যে অর্ধশতের বেশি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েছে বলে জানালেন চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তবে সেলিম খানের হত্যার বিষয়ে বা তার লাইসেন্স করা অস্ত্রের বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ আসেনি পুলিশের কাছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় সেলিম খান তার দুই ছেলে শান্ত খান ও শাহীন খানকে সঙ্গে নিয়ে দামি একটি গাড়িতে করে চাঁদপুরের গ্রামের বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় কয়েক কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার ফরক্কাবাদ বাজারে বিক্ষুব্ধ জনতার সামনে পড়ে তাদের বহন করা গাড়িটি।
ওই সময় উত্তেজিত জনতার সামনে সেলিম খান আত্মরক্ষার জন্যে নিজের পিস্তল থেকে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়েন। তবে সেখান থেকে রক্ষা পেলেও পার্শ্ববর্তী বাগড়া বাজারে এসে আবারও জনতার মুখোমুখি হন। সেখানেই বিক্ষুব্ধ জনতার নির্মম পিটুনিতে আলোচিত চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তার ছেলে চলচ্চিত্র অভিনেতা শান্ত খান ঘটনাস্থলে মারা যান। তবে ছোট ছেলে শাহিন খান গা-ঢাকা দিয়ে কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যান।
এ ঘটনায় রাতভর সেলিম খান ও শান্ত খানের মরদেহ ঘটনাস্থলে পড়ে থাকে। পরের দিন ভোরে কয়েকজন মরদেহ দুটি উদ্ধার করে গ্রামে নিয়ে যান। এক পর্যায়ে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাদেরকে দাফন করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা সদরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খান পদ্মা ও মেঘনা নদী থেকে প্রথমে বৈধভাবে এবং পরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেন। এতে কয়েক বছরের মধ্যে শত শত কোটি টাকার মালিক হন তিনি।
এক পর্যায়ে তিনি শাপলা মিডিয়া নামে গড়ে তোলেন একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এ থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণও করেন। এর কয়েকটিতে ভারতীয় নায়ক-নায়িকাদের পাশাপাশি তার ছেলে শান্ত খান অভিনয় করেন। এর মধ্যে আলোচিত-সমালোচিত চলচ্চিত্রও ছিল। তাছাড়া ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই’ নামে একটি চলচ্চিত্রও ছিল। সূত্র : সময় টিভি অনলাইন।