শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

রমজানকে পুঁজি করে প্রকৃত ব্যবসায়ীগণ কখনো অনৈতিক মুনাফার চিন্তা করতে পারে না : আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম
বিমল চৌধুরী ॥

পবিত্র রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স নেতৃবৃন্দ পাইকারি ব্যবসায়ীদের সাথে এক জরুরি সভায় মিলিত হন। গত ২৮ মার্চ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম। তিনি মহান আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করে বলেন, রোজা শুরুর আগ থেকে বর্তমান সময় অবধি নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিত্যপণ্য পূর্বের চেয়ে কিছুটা কম দামেই বিক্রি হচ্ছে। রমজানকে পুঁজি করে প্রকৃত ব্যবসায়ীগণ কখনো অতিরিক্ত মুনাফা করতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি, ব্যবসায়ীদের সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় রমজান মাসে আমরা বাজার স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হবো। তিনি আরো বলেন, চাঁদপুরের ব্যবসায়ীগণ অত্যন্ত সচেতন। তারা সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ী নয়। চাঁদপুরের যেমন ব্যবসায়িক সুনাম রয়েছে, তেমনিভাবে ব্যবসায়ীদের সামাজিক সেবামূলক কাজেরও যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে। তাই রমজানকে সামনে রেখে কোনো ব্যবাসায়ীই অতিরিক্ত ব্যবসা-বাণিজ্য করবেন না, ব্যবসায়ীদের প্রতি চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স নেতৃবৃন্দের এই বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর হলো আমদানিনির্ভর মোকাম, আমদানি মূল্য ধরেই আমাদের কেনা-বেচা করতে হয়। ইচ্ছে থাকলেই আমরা রাতারাতি কোনো কিছু পরিবর্তন করে হঠাৎ করেই কোনো পণ্যর দাম বাড়াতে পারি না। তবে সততার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারি।

তিনি সকলকে অনুরোধ জানিয়ে আরো বলেন, চাঁদপুরে ব্যবসায়িক সুনাম যাতে অক্ষুণ্ন থাকে সেদিকে আপনারা লক্ষ্য রাখবেন। তিনি বলেন, পবিত্র মাহে রমজান যেমন ইবাদতের মাস, তেমনি আমাদের লোভ লালসাকে সংবরণ করার মাসও এই রমজান মাস। পবিত্র মাহে রমজান মাসেই আমাদের পবিত্র কোরআন শরীফ নাজিল হয়েছে। তাই সকল লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকেই আমরা আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করবো--পবিত্র মাসে এই হবে আমাদের অঙ্গীকার।

সভায় মোড়কজাত পণ্যের মূল্য বৈষম্য নিয়ে ব্যবসায়ীগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, আমরা খোলা বাজারে যে দামে পণ্য আমদানি করি সেসকল আমদানিকৃত পণ্যের দাম চাইলেই অতিরিক্ত নিতে পারি না। কিন্তু দেখা যায় যে, হলুদের গুঁড়া খোলা বাজারে (অর্থাৎ লুজ) কেজি বিক্রি হয় ৪০০ টাকা, সেই হলুদের গুঁড়াই প্যাকেট বিক্রি হয় ৮০০ টাকা। তেমনিভাবে অধিকাংশ পণ্যই নামী দামী কোস্পানিগুলো প্যাকেট করে। খোলা বাজারের চেয়ে অধিকহারে মুনাফা করছে। যা খুচরা বাজার-মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। সেজন্যে প্রশ্ন থাকতে পারে, কোম্পানিগুলোর প্যাকেটজাত পণ্যের অতিরিক্ত দাম কারা নির্ধারণ করেন। তাদের প্যাকেটজাত পণ্যের গায়ে তুলনামূলকভাবে অতিরিক্ত মূল্য প্রিন্ট থাকার পরও তাদের কোনো জরিমানা বা বিচার হতে দেখা যায় না। ব্যবসায়ীগণ মোড়কজাত পণ্যের মূল্য-বৈষম্য দূরীকরণে চেম্বার প্রেসিডেন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনায় বসার জন্যেও দাবি জানান। তারা কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, খোলা বাজারে সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, আর বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। এখন আমরা (ব্যবসায়ী) যদি বোতলজাত সয়াবিন বোতল থেকে বের করে (লুজ হিসেবে) ওই সয়াবিনই ১৯০ টাকা বিক্রি করি, তাহলে ভোক্তা অধিকার আইন বা সংস্থা আমাকে জরিমানা করে দিবে। তারা কিন্তু আমার কথা শুনতে বা জানতে চাইবে না, জানতে চাইবে না মালের গুণগতমান সস্পর্কে। তারা পণ্যের মূল্য-বৈষম্য নিরসনের ওপর জোর দাবি জানান।

সভায় মতামত ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি তমাল কুমার ঘোষ, পরিচালক আমিনুর রহমান বাবুল, মোহাম্মদ আলী মাঝি (প্যানেল মেয়র, চাঁদপুর পৌরসভা), পরেশ মালাকার, চাঁদপুর রাইস মিলস মালিক সমিতির সভাপতি আঃ রহিম সর্দার, চাঁদপুর চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নাজমুল আলম, পালবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হারুনুর রশিদ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ সফরউদ্দিন ও বিপণীবাগ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জয়নাল মাঝি।

চেম্বার সচিব আব্দুল মোতালেব শেখ টুটুলের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ী প্রভাষ চন্দ্র সাহা, নেপাল সাহা, সুবল পোদ্দার, সুমন চন্দ্র দাস, মোঃ জাকির হোসেন, প্রথম সাহা প্রমুখ।

গতকাল পুরাণবাজারের কয়েকটি পাইকারী নিত্য পণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, রোজার আগ থেকে বাজার মূল্য এক পর্যায়েই রয়েছে। তবে কেনা-বেচা একদমই কম বলে তারা হতাশা ব্যক্ত করেন। চালের বাজারেও মন্দাভাব, তবে পেঁয়াজ-রসুন কিছু বিক্রি হলেও দাম আগের মতই আছে বলে জানা যায়। বর্তমানে চাল পাইকারি নাজির ৭০ থেকে ৭৫, চিনিগুড়া ১০০ থেকে ১৪০, দেশী গুটি ৪৩ থেকে সাড়ে ৪৩, পাইজাম ৪৬ থেকে ৪৭, মিনিকেট ৬৬ থেকে ৬৮, পারিজা ৪৭ থেকে সাড়ে ৪৭, এলসি স্বর্ণা ৪৬ থেকে ৪৭, জিরা ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মেসার্স গোপাল সাহার স্বত্বাধিকারী রোটারিয়ান রিপন সাহা। তিনি জানান, চিনিগুড়া চালের দাম কিছুটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ চিনিগুড়া চাল বিদেশে রপ্তানি হতো, গত ২ দিন আগে তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে পুরাণবাজারের বাতাসা পট্টির পাইকারি মুদি দোকানে গিয়ে দেখা গেল মসুরি ডাল ৯৫, খেসারি ৮০, ছোলা ৮৫, চিনি ১১০, আটা খোলা ৫৫, প্যাকেট ৬৫, ময়দা খোলা ৫৫, প্যাকেট ৬০, বেসন ৭৫, সরিষার তৈল ২০০, সয়াবিন ১৮০, পাম ১৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মেসার্স সুখরঞ্জনের পাইকারি মসলার দোকানে গিয়ে দেখা গেল জিরার বাজার সামান্য বেশি হলেও অন্যান্য মসলার বাজার ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমে গেছে। বর্তমানে জিরা (পাটনা) ৬২৫, লবঙ্গ ১৩৬০, এলাচি ১৪০০, দারুচিনি সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০, কাঁচা বাদাম ভালো কোয়ালিটি (বড় সাইজ) ১৫৫ টাকা দরে কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি মুদি ব্যবসায়ী মানিক সাহা, শিমুল সাহা, সুকান্ত সাহা টিটু, সুবল পোদ্দারসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে মালের যে পরিমাণ আমদানি রয়েছে, এমনি পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে নিত্যপণ্যের মূল্য আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা বলেন, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কোনোরূপ স্থবিরতা দেখা না দিলে বাজারের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়