প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
তীব্র গরম-লোডশেডিংয়ে মারা যাচ্ছে মুরগি, বিপাকে খামারি
মতলব উত্তর উপজেলায় দিন ও রাতের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। প্রচণ্ড গরমে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন পোলট্রি খামারিরা।
খামারিরা এ জন্যে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২কে দুষছেন। দিন-রাত মিলে ৮-৯ ঘণ্টার জন্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ক্ষতির বড় কারণ বলে জানিয়েছেন খামারিরা। দুপুরের দিকে প্রচণ্ড গরমের কারণে ‘হিট স্ট্রোকে’ মুরগি মারা যাচ্ছে।
মতলব উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের উপ-সহকারী কর্মকর্তা (প্রাণী ও স্বাস্থ্য) পলাশ কুমার দাস বলেছেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩৫৭টি পোলট্রি খামার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ব্রয়লার খামার ৩১৫টি এবং লেয়ার ও দেশি মুরগির খামার ৪২টি। তীব্র লোডশেডিংয়ের ফলে প্রতিদিনই এসব খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে।
খামারের ওপর নির্ভরশীল অনেক খামারি তাই দুশ্চিন্তায় রয়েছে। বিদ্যুতের বিকল্প জেনারেটর না থাকাসহ পর্যাপ্ত আলো-বাতাস খামারে ঢুকতে না পারায় মুরগির হিট স্ট্রোক হচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলেন, হিট স্ট্রোক কোনো রোগ নয়। গরমের হাত থেকে যদি মুরগিকে রক্ষা করা যায়, তাহলে হয়তো মুরগির মারা যাওয়া ঠেকানো সম্ভব। এ ছাড়া কোনো ধরনের ওষুধ বা চিকিৎসা দিয়ে মুরগি বাঁচানো সম্ভব নয়। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর দিয়ে মুরগি পালন করলে মুরগি উৎপাদনে খরচ আরও বেড়ে যাবে।
ছেংগারচর পৌরসভার ঘনিয়ারপাড় গ্রামের খামারি মোঃ সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমার খামারে ৩ হাজার ব্রয়লার মুরগি রয়েছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিদ্যুৎ না থাকায় এবং প্রচণ্ড গরমের কারণে গত ৬-৭ দিনে আমার প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ মুরগি মারা গেছে। এ জন্যে আমি মনে করি লোডশেডিং সর্বোচ্চ দায়ী। যদি রুটিনমাফিক লোডশেডিং হতো, তবু আগাম ব্যবস্থা নিয়ে হয়তো মুরগিগুলো বাঁচানো যেত।
ওঠারচর গ্রামের খামারি মোঃ শিপন মিয়া জানান, দুদিনে হিটস্ট্রোকে তার খামারের ৯০টি মুরগি মারা গেছে। প্রতিটি মুরগি দুই কেজির ওপরে।
গরমের কারণে কোনোভাবেই হিট স্ট্রোক থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্যান চালিয়েও রাখতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে লোকসান কোথায় ঠেকবে বলা মুশকিল।
লোডশেডিংয়ের বিষয়ে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর মতলব উত্তর জোনাল অফিসের এজিএম রায়হানুল ইসলাম বলেন, প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার গ্রাহকের জন্যে আমাদের প্রতিদিনের বিদ্যুতের যা চাহিদা, তার মাত্র ৫০ শতাংশ বরাদ্দ পাচ্ছি। এ ছাড়া প্রধান সংযোগ লাইনও মাঝে মাঝে বন্ধ হচ্ছে। এ জন্যে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে মুরগির মারা যাওয়ার হার কমিয়ে আনতে খামারিদের কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পলাশ দাস। তিনি বলছেন, বিদ্যুৎ না থাকলে শুধু জেনারেটর দিয়ে মুরগি পালন করা কঠিন। এ জন্যে এমন স্থানে খামার তৈরি করতে হবে, যাতে সেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসতে পারে। এ ছাড়া তীব্র গরমের সময় বিদ্যুৎ না থাকলে মুরগির শরীরে পানি স্প্রে করতে হবে। তাহলে হিট স্ট্রোকে মুরগি মারা যাওয়ার হার কমবে। সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।