প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
মেঘনা-ডাকাতিয়ায় মাছ ধরার মহোৎসব
উজানের ঢল আর অতিবৃষ্টির পানিতে যখন পুরো জেলাবাসী জলাবদ্ধতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় এবং বন্যায় নিমজ্জিত, ঠিক তখন একদল সৌখিন মৎস্য শিকারী মাছ শিকারে মেতে উঠেছেন। চাঁদপুর সদর, ফরিদগঞ্জ, শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জ উপজেলাসহ চাঁদপুর জেলার নিম্নাঞ্চল বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে প্লাবিত। সেই সাথে ভেসে গেছে বহু পুকুর, জলাশয় ও ঝিলের চাষকৃত প্রায় সব মাছ। সেই মাছ চলে এসেছে খাল-বিল এমনকি মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীতে। গত ক'দিন যাবৎ মৎস্য চাষীদের ভেসে যাওয়া মাছগুলো ধরার উৎসব চলছে নদীর পাড় কিংবা খাল বিলে।
সবচেয়ে বেশি সৌখিন মাছ শিকারের দৃশ্য চোখে পড়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী স্লুইচ গেট, চাঁদপুর শহরের ডাকাতিয়া ও মেঘনা নদীর পাড়ে। এসব এলাকায় রাত-দিন জাল ফেলে চাষের মাছগুলো ধরা হচ্ছে।
২৬ আগস্ট সোমবার বিকেলে সরজমিনে গিয়ে মাছ শিকারের এই উৎসব দেখা যায়। অনেককেই দেখা যায় সদরের বাগাদী ইউনিয়নের নানীপুর এলাকার স্লুইচ গেটের ভেতরের এবং আশপাশে দেশীয় পদ্ধতিতে দেদার মৎস্য শিকার করছে।
এদিন স্লুইচ গেট এলাকার পুলের দু’পাশে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ যানজট ছিল। স্থানীয়রা ছাড়াও দূর দূরান্তের উৎসুক মৎস্য শিকারীরা টেঁটা, জাল, খাঁচিসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে মাছ শিকারের উৎসবে মেতে উঠে। কেউ নৌকার ওপর কেউবা আবার ভেলার ওপর দাঁড়িয়ে ঝাঁকি জাল ফেলে বা চার শিকের টেঁটা দিয়ে মৎস্য শিকারে ব্যস্ত। একটু পর পরই ছোট ও মাঝারি মানের রুই, কাতলা, মৃগেল মাছের পোনা ধরা পড়লে সবাই মিলে পাইছি পাইছি বলে বেশ উৎফুল্লতা দেখাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ আজিজ মিজি জানান, গত এক সপ্তাহের অতি বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন পেশাদার মৎস্য চাষীদের পুকুরের সব মাছ জলে ভেসে ডোবা, নালা, খাল, বিল নদীতে চলে এসেছে। সেই মাছগুলোই মানুষ এখন মহা আনন্দে ধরছে। ডাকাতিয়ার দুপাড়েই হাজারও মানুষ এভাবে মৎস্য শিকার করে চলেছে। এমন দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে, এ যেনো মৎস্য শিকারীদের মিলনমেলা বসেছে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় চর বাগাদী পাম্প হাউজ কর্তৃপক্ষ। প্রকৌশলী শরীফ মাহমুদ বলেন, এই স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই এর মধ্যে ঢুকে মাছ শিকার করছেন। এতে আমাদের নিয়মিত কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। তাছাড়া যে কোনো সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।
চাঁদপুর সদর ইউএনও সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যায় মৎস্য খামার হতে ভেসে যাওয়া পোনা মাছ ভেসাল জাল দিয়ে নির্বিচারে শিকার করা হচ্ছে। যা মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের কর্মকাণ্ড হতে বিরত থাকার জন্যে সকলকে অনুরোধ করছি।
চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, এই উপজেলায় ১ হাজার ৬শ’র বেশি মৎস্য চাষী রয়েছে। এবার চাঁদপুরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢল আর বন্যার পানিতে উপজেলার অধিকাংশ পুকুর, জলাশয় ও ঘেরের চাষ করা মাছ ভেসে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষিদের তালিকা প্রণয়নের কাজ করছি।