রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বেসরকারি পর্যটন শিল্পটি আলোর মুখ দেখলো না যে কারণে-

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥
ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বেসরকারি পর্যটন শিল্পটি আলোর মুখ দেখলো না যে কারণে-

স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত চাঁদপুর জেলায় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেক বড়ো বড়ো মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন। প্রতিবার তাঁরা চাঁদপুরবাসীকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কিন্তু তারপরও আজ পর্যন্ত দু-একটি কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন চাঁদপুরবাসীর কাছে অধরাই থেকে গেছে। যে যখন আসে, স্বপ্ন দেখায়, নিজের পকেট ভারী করে। আবার চলে যায়। এমন উন্নয়ন শুধু কাগজে কলেমেই থেকে যায়।

গত ২০১৯-২০২০ সালে চাঁদপুর জেলার মেঘনার চরে জাপানের অর্থায়নে ব্লু রিভার আইল্যান্ড রিসোর্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেডের উদ্যোগে একটি আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট হওয়ার কথা ছিলো। যথারীতি ছয় হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের সংবাদে সে সময় সমগ্র চাঁদপুরে ছড়িয়ে পড়েছিলো উদ্দীপনা ও খুশির জোয়ার। ২০ হাজার মানুষের একসাথে অবকাশ যাপনের সুবিধা সম্বলিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হতো। কিন্তু সেটি হয় নি। কেন হয়নি সে ব্যাপারে এতোদিন মুখ খোলেন নি উদ্যোক্তাদের কেউ। যে কারণে চাঁদপুর কণ্ঠ সহ অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যায়নি কোনো প্রতিবেদন। অবশেষে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুখ খুলেছেন একজন, যার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিবেদন।

শুরু থেকেই মোঃ মাইনুল হাসান দোলন পাটোয়ারী নামে এক পরিচালক প্রকল্পটির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, লোকাল কমিউনিকেশন, প্ল্যানিং ও এক্সিকিউশনের দায়িত্বের কিছু অংশ ছিলো আমার এবং মনসুর আলম মুন্না (পরিচালক) ভাইয়ের কাঁধে।

প্রকল্পের ইনোগোরেশন প্রোগ্রামে চাঁদপুরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, গণমাধ্যমকর্মী এবং জাপানের বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলন। সে সময় বিনিয়োগকারীরা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে তাঁদের সন্তুষ্টি ও আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। সেই আলোকেই আমরা পরবর্তীতে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক প্রকল্পটির খসড়া রূপরেখা দাঁড় করিয়ে তৎকালীন একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করি। তিনি আমাদেরকে প্রকল্পের প্রয়োজনে সমস্ত রকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। মূলত এই প্রকল্পটির জন্যে চাঁদপুর শহরের পাড় ঘেঁষে ৩০/৩৫ বছরের পুরোনো ছোট ছোট রিভার আইল্যান্ড বা স্থায়ী চরের ৬ শ' একর জমি অধিগ্রহণ করতে হতো। শুরুর দিকের কাজে স্থানীয় মন্ত্রী, চাঁদপুরের তৎকালীন মেয়র এবং ডিসির কাছ থেকে আমরা ভালোই সহযোগিতা পাচ্ছিলাম। এরপর আমরা প্রকল্পের চূড়ান্ত রূপরেখা অনুযায়ী একটি প্রস্তাবনা ডিসি (জেলা প্রশাসক) অফিসে প্রেরণ করি। প্রস্তাবনায় আমরা তৎকালীন জেলা প্রশাসকের কাছে ৬ শ' একর জমি অধিগ্রহণের অনুরোধ জানাই। প্রকল্প প্রস্তাবনার একটি শর্ত ছিলো, রিসোর্টটি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে প্রকল্প এলাকার ৬/৭ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোনো ড্রেজিং বা নদী খনন কার্যক্রম যেন না হয়। ততোদিন পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই ছিলো। কিন্তু এই প্রস্তাবনা প্রেরণের পর থেকেই দেখি, কোনো এক অজানা কারণে সরকারি প্রশাসনের সহযোগিতা কমে যেতে থাকে। আমাদের ফাইল এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ঘুরতে থাকে। অন্যদিকে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সড়ক অধিদপ্তর, নদী রক্ষা কমিশন, বন অধিদপ্তর থেকে ট্যুরিজম বোর্ডসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট জায়গার অনুমোদন সংগ্রহ থেকে শুরু করে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে ফেলি। কিন্তু জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আমাদের ফাইলের আর মুক্তি ঘটে না। এক পর্যায়ে লক্ষ্য করি আমাদের ফাইলটি এক জায়গাতেই স্থবির হয়ে পড়ে আছে।

মোঃ মাইনুল হাসান দোলন আরো লিখেন, এই স্থবিরতার কারণ ঘাঁটতে গিয়ে খেয়াল করলাম, আমাদের প্রকল্প এলাকার আশেপাশে তো বটেই, এমনকি প্রকল্পের জন্যে নির্ধারিত চরগুলোতেও মন্ত্রীর ভাই ও তার পার্টনার ক্ষমতাসীন দলের আরো কিছু নেতা-কর্মী মিলে সমানে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। ইতোমধ্যেই দুটি চর সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গেছে। বুঝতে পারলাম, আমাদের ফাইল আটকে থাকা ও অসহযোগিতার কারণ আসলে এই বালু উত্তোলনের ব্যবসা। এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে চূড়ান্ত অসহযোগিতা পাওয়ার পর এক পর্যায়ে আমরা হাল ছেড়ে দিচ্ছিলাম প্রায়, ঠিক সেসময় চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র আমাদের ডেকে জানালেন ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে চাঁদপুর প্রেসক্লাব সংলগ্ন এলাকায় চাঁদপুর পৌরসভা এবং জেলা প্রশাসনের কিছু জমি আছে, আমরা চাইলে সেখানে কিছু করতে পারি। আমাদের মনে তখন কিছুটা আশার সঞ্চার হলো। আবার নতুন উদ্যমে কাজে নেমে পড়লাম। আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। আমরা পুনরায় প্রকল্পের খসড়া নতুন করে তৈরি করে সেখানে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করলাম। নতুন করে প্রকল্প স্টাডি করলাম। ভূমির মান যাচাইসহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত দপ্তরের অনুমোদন নেয়া থেকে শুরু করে সমস্ত কাজ মোটামুটি গুছিয়ে আনার পর এবার আবার মেয়রের কাছ থেকে অসহযোগিতামূলক আচরণ পেতে শুরু করলাম। এদিকে জাপানের বিনিয়োগকারীরা কয়েকবার এসে প্রকল্পের প্রস্তাবিত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। কিন্তু মেয়র সাহেবকে ফোন দিলে তিনি আর ফোন ধরেন না। প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরের দিনক্ষণ এগিয়ে আসতে থাকলেও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। শেষমেষ আমরা আবিষ্কার করলাম, সেই জমিগুলোও মেয়র সাহেব তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট খাতে ব্যবহারের জন্যে অন্য একটি কোম্পানিকে দিয়ে দিয়েছেন।

ফলাফল হলো, চাঁদপুরবাসীর স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো। ৬ হাজার কোটি টাকার এতো বড় একটা বিনিয়োগের সুযোগ হাতছাড়া হলো এবং আমাদের চার বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম, প্রকল্প অনুমোদনের কাজে খরচ হওয়া কাড়ি কাড়ি টাকা সবটাই মেঘনা নদীর পানিতে ভেসে গেলো।

সে সময় থেকে আজ অবধি অনেকেই সেই প্রকল্পের কথা জিজ্ঞেস করলে আমি এড়িয়ে যেতাম। ভয়ে মুখ খুলতাম না। কার কাছেই বা বলব? অভিযোগ জানানোর মতো জায়গা বা সাহস কোনোটাই ছিলো না। পানিতে নেমে আর যাই হোক কুমিরের সাথে লড়াই করা যায় না। ফলত চুপ করে থাকাকেই শ্রেয়তর মনে করেছিলাম। আজ উত্তরটা জানাতে ইচ্ছে করলো, তাই জানালাম।

তবে এখনো আমরা স্বপ্ন দেখি, হয়তো কখনো এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়