প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৪, ০০:০০
৫০ বছরের ইমামকে রাজকীয় সম্মানে বিদায়
দীর্ঘ ৫০ বছর একই মসজিদে ইমামতি, পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষা প্রসারে ভূমিকা রাখা হাফেজ মাওঃ আঃ ওয়াদুদ ভূঁইয়া (৭৫) নামে এক ইমামকে ফুল দিয় সাজানো গাড়িযোগে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে রাজকীয় সম্মানে বিদায় দিয়েছে এলাকাবাসী। ১৯ জুন বুধবার বিকেলে ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের ত্রিদোনা গ্রামে ত্রিদোনা ও দত্রা গ্রামবাসীর উদ্যোগে এই বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়।
জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে ত্রিদোনা জামে মসজিদে ইমাম হিসেবে যোগ দেন ওই সময়ের টগবগে তরুণ হাফেজ মাওঃ আঃ ওয়াদুদ ভূঁইয়া। তিনি একাধারে এই মসজিদের ইমামতি ছাড়াও ত্রিদোনা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিয়ে এলাকায় মাদ্রাসা শিক্ষায় ভূমিকা রাখেন। দীর্ঘ ৫০ বছর ইমামতি করার পর বয়সের কারণে তিনি অবসরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানালে ত্রিদোনা ও দত্রা গ্রামবাসীর উদ্যোগে তাঁকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নজরুল ইসলাম মহনের সভাপতিত্বে ও হাফেজ মাওঃ ওয়ালি উল্লাহর পরিচালনায় স্মৃতিচারণ করেন চাঁদপুর জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মশিউর রহমান মিটু, হাফেজ মাওঃ কামাল হোসেন, শাহ আলম মামুন ভূঁইয়া, ইউপি সদস্য মাসফেকুর রহমান রাসেল, হাফেজ মনির ও তাজুল ইসলাম।
বক্তারা বলেন, ত্রিদোনা ও দত্রা গ্রাম এলাকায় নিঃস্বার্থভাবে হাফেজ মাওঃ আঃ ওয়াদুদ ভূঁইয়া দীর্ঘ ৫০ বছর সেবক হিসেবে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি কখনো নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করেন নি। এই এলাকায় কোরআনের আলো ছড়িয়েছেন তিনি। তাই আজকে তাঁকে রাজকীয়ভাবে বিদায় দেয়ার চেষ্টা করেছি।
এর মধ্যে চাঁদপুর জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মশিউর রহমান মিটু বলেন, হাফেজ মাওঃ আঃ ওয়াদুদ ভূঁইয়াকে আমাদের পূর্ব পুরুষগণ মসজিদের ইমাম হিসেবে এনেছিলেন। তিনি যেভাবে গত ৫০ বছর ধরে নিরলস দ্বীনের সেবা করে গেছেন, তা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। আমাদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষার যেই অক্ষর জ্ঞান রয়েছে, তা শুধু হাফেজ মাওঃ আঃ ওয়াদুদ ভূঁইয়ার জন্যেই।
নূরুল ইসলাম মহন বলেন, হাফেজ মাওঃ ওয়াদুদ ভূঁইয়ার ঋণ শোধ হওয়ার নয়। তিনি বয়সের কারণে ইমামতি চালিয়ে যেতে পারছিলেন না। তাই স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। আমরা এলাকাবাসী এই দ্বীনের সেবককে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিদায় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িযোগে তাঁকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়া ছাড়াও এলাকার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
হাফেজ মাওঃ আঃ ওয়াদুদ ভূঁইয়া তাঁর বিদায়ী বক্তব্যে এই আয়োজনের জন্যে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি আমার সারাজীবন দ্বীনের সেবায় কাটিয়েছি। এই এলাকার মানুষকে কোরআন শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
আলোচনা শেষে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর পর ফুল দিয়ে সাজানো গাড়িযোগে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা দিয়ে ইমাম হাফেজ মাওঃ আঃ ওয়াদুদ ভূঁইয়াকে নিজ বাড়ি পাশর্^বর্তী রামগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে পৌঁছে দেয়া হয়।