প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
গোপনে বাঁশের সাঁকো অপসারণ, দুর্ভোগে ৭ গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা
৭টি গ্রাম অভিমুখী মাটির সড়কের মুখের একমাত্র বাঁশের সাঁকোটি গোপনে অপসারণ করে ফেলায় চলাচলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ওই গ্রাম সমূহের জনগণ। নিজেদের কেনা সম্পত্তি দাবি করে সাঁকোর স্থলে ইমারত নির্মাণ করতে গেলে স্থানীয় একটি অংশ দাবি করে যে, স্থানটি খাস খতিয়ানভুক্ত। সর্বশেষ উক্ত স্থানে সরকারি জমি চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর কার্যালয় থেকে মাপের কাজ শুরু করা হয়েছে। ঘটনাটি হাজীগঞ্জের রাজারগাঁও ইউনিয়নের রাজারগাঁও উত্তর পশ্চিম বাজারের পাকা ব্রীজের গোড়া এলাকার।
সরজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই এলাকার মফিজ মল্লিকের বিরুদ্ধে রাজারগাঁও পশ্চিম বাজার এলাকায় রুইতার বিলের ঘোড়াধারী রাস্তার সম্মুখে নির্মিত কালভার্টের পাশে সরকারি খাস ভূমি দখল করে স্থায়ী ইমারত নির্মাণের অভিযোগ উঠে। তবে উক্ত ভূমির ক্রয়সূত্রে মালিকানা দাবি করেন মফিজ মল্লিকের পরিবারসহ স্বজনরা।
জানা যায়, গত ক’বছর পূর্বে রুইতার বিলের খালপাড় ধরে ৭টি গ্রামের সমন্বয়ে একটি মাটির রাস্তা নির্মাণ করেন প্রয়াত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হাদি মিয়া। সেই মাটির সড়কে রাজারগাঁও-ঘোড়াধারী সড়কের মুখে কালভার্টের পাশে খালের ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে হাজীগঞ্জের পিপিয়া, মেনাপুর, নৈরাঈন, মুকুন্দুসার ও রাজারগাঁও গ্রামের একাংশ এবং মতলব দক্ষিণ উপজেলার ডিঙ্গাভাঙ্গা ও লেইঞ্জাকান্দি গ্রামের জনগণের চলাচলের পথ সহজ করা হয়।
গত বছর কালভার্টের পাশেই কেনা সম্পত্তি দাবি করে তার ওপর স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের উদ্দেশ্যে কাজ শুরু করেন মফিজ মোল্লা। ওই সময় স্থানীয়রা বাধা দিলে কাজটি বন্ধ হয়ে যায় এবং উপজেলা ভূমি অফিস থেকে খাস সম্পত্তি চিহ্নিত করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়। এরপর চলতি বছরের গত সপ্তাহে বাঁশের সাঁকোটি অপসারণ করে আবারো দালান ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন মফিজ মোল্লার পরিবারের সদস্যরা।
বিষয়টি দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন দালানঘর নির্মাণে বাধা দেন এবং মফিজ মোল্লার বিরুদ্ধে খাস সম্পত্তি দখলের অভিযোগ এনে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেন। এ নিয়ে এলাকায় দুই পক্ষের মাঝে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন।
সর্বশেষ গত সোমবার দুপুরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসান মানিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মফিজ মোল্লার পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে খাস সম্পত্তি চিহ্নিতকরণের নির্দেশনা দেন এবং দুপক্ষের লোকজন ও তাদের নিয়োগকৃত সার্ভেয়ারদের উপস্থিতিতে কাজ শুরু করেন।
এদিকে মফিজ মোল্লার পক্ষে তার স্বজন মাহফুজ খান জানান, তার ভগ্নিপতির ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে দালান ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করার পর একটি স্বার্থান্বেষী মহল গত দুই বছর ধরে তাদের কাজে বাধা প্রদান করে আসছে। এতে তার ভগ্নিপতি ও পরিবারের লোকজন হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, আমার ভগ্নিপতি (মফিজ মোল্লা)-এর দখলে খাস জমি নেই। গত বছর (২০২৩ সাল) উপজেলা ভূমি অফিস খাস জমির যে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে, এর বাইরে তারা তাদের কেনা সম্পত্তিতে কাজ করছেন। তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, ব্রীজের (কালভার্ট) পশ্চিম অংশে যিনি বা যারা আছেন, তারাই প্রতি বছর খালের দিকে একটু একটু করে ভরাট করে খাস জমি দখল করে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসান মানিক বলেন, সরকারি খাস জমি চিহ্নিতকরণের কাজ চলমান রয়েছে এবং কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত পরিবারের সদস্যদের তাদের স্থাপনা নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।