প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
চাঁদপুর পৌরসভার ১৫নং ওয়ার্ডের বিষ্ণুদী রোড, জিটি রোড, বিটি রোড, টেকনিক্যাল মহল্লা সড়ক ও ব্যাংক কলোনি মহল্লা সড়কগুলো বেহাল অবস্থায়। এসব সড়ক দিয়ে চলাচলে জনদুর্ভোগ চরমে গিয়ে পৌঁছেছে। ওইসব এলাকায় ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। এ বিষয়ে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ১৫নং ওয়ার্ডবাসী।
পৌর ১৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ নূরে আলম আখন্দ জানান, গত ১৩ জুলাই জিটি রোডের সংস্কার কাজ শুরু করে। এ রোডটি চেয়ারম্যানঘাটা থেকে কাউন্সিলর অফিস পর্যন্ত ৪শ’ ফুট আরসিসি ঢালাই করবে। অথচ ১ মাস হয়ে গেল। কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। কাঁদা পানিতে এতটুকু পথ একাকার হয়ে গেছে। মানুষ পায়ে হেঁটে যাবে, সেটাও পারছে না। ঠিকাদারদের গাফিলতিতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় এলাকাবাসীর এ সকল অভিযোগ প্রতিদিনই শুনতে হয়। মেয়র মহোদয়ের সাথে সাক্ষাৎ হলে আমি এ বিষয়টি অবশ্যই বলবো।
কমিউনিটি পুলিশিং অঞ্চল-৬ সভাপতি এএসএম শফিকুর রহমান জানান, এ বিষয়ে আমি মেয়রের কাছে অভিযোগ করেছি। তিনি সরজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিষ্ণুদী রোড ও ব্যাংক কলোনি মহল্লা সড়ক দেখে গেছেন। খুব সহসাই কাজ ধরবেন বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।
ব্যাংক কলোনি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মোঃ ইসমাইল হোসাইন জানান, বর্তমান মেয়র ভোট চাইতে এসে ওয়াদা করেছেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যাংক কলোনি মহল্লা সড়কের উন্নয়ন কাজ করবেন। কিন্তু ৩ বছর হয়ে গেলো কোনো আশার আলো দেখছি না। মডার্ন শিশু একাডেমীর অধ্যক্ষ ওমর ফারুক জানান, ব্যাংক কলোনির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরকে আমরা বার বার বলছি। এতে ড্রেনে পানি নিষ্কাশনটা ঠিকমতো পেয়েছি। কিন্তু সড়কের উন্নয়নের ব্যাপারে এ পর্যন্ত কোনো উন্নতি দেখছি না। এতে করে আমরা বাড়ির মালিকরা ভাড়াটিয়া পাচ্ছি না। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অথচ আমরা সবাই তো হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়মিত দেই।
টেকনিক্যাল মহল্লার মোঃ ইউনুছ মিজি জানান, চাঁদপুর পৌরসভায় পড়ার পর এ যাবৎ একবার এ সড়কটির উন্নয়নের কাজ হয়েছে। আজ কয়েক বছর হয়ে গেল টেকনিক্যাল বিশ্ব রোডের মাথা থেকে আলী দাখিল মাদ্রাসা পর্যন্ত এ রাস্তাটি ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। সেখানে একজন মানুষ পায়ে হেঁটে যাবে এটাই অত্যন্ত কষ্টকর। তার উপর আবার বৃষ্টি হলে কাঁদায় রাস্তা একাকার হয়ে যায়।
জিটি রোড বাইতুল মামুর ও ঈদগাহ কমপ্লেক্সের সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুল ইসলাম পাটওয়ারী জানান, চাঁদপুর পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে উন্নয়নের চিত্র দেখি। আমাদের ১৫নং ওয়ার্ডে দেখি না। এই ওয়ার্ডের প্রতিটি রাস্তা চলাচলের অযোগ্য। একজন সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবে সেই অবস্থাটাও নেই। তারপরও আবার কেউ যদি রোগী নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় তার তো দুর্ভোগের সীমা নেই। এই দুর্ভোগ কবে শেষ হবে। জিটি রোডে উন্নয়নের কাজের নামে ভোগান্তি মাস পার হয়ে গেছে।
ঠিকাদার আব্দুল মান্নান মিজি জানান, আমি প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে আসা-যাওয়া করি। এই এলাকা থেকে চাঁদপুর সরকারি কলেজের স্টাফ, ব্যাংক কর্মকর্তা, হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করে। সড়কটি দিয়ে দু'টি গাড়ি যখন ক্রস করে তখন রাস্তার পাশে গর্তে কিনারে এমনভাবে কাত হতে হয়, মনে হয় যেন খাদে উল্টে পড়ে যাবে। তখন ভয়ে বুক ধড়ফড় করে। এ সময় অনেকে আল্লাহর নাম ডাকেন।
কাসেম বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ আল-আমিন বেপারী জানান, আমরা প্রতিদিন এই রোড দিয়ে আমাদের দোকানের মালামাল খুব কষ্ট করে আনতে হয়।
অটোবাইকের ড্রাইভার হাসান জানান, এই রাস্তায় গাড়ির এঙ্গেল, টেংরি ও চাকার ভীষণ ক্ষতি হয়। এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। অবিলম্বে এ সড়কটি মেরামত করা না হলে যে কোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। হতে পারে প্রাণহানি। এই সড়কে প্রতিবছর বিভিন্ন ছোটখাটো দুর্ঘটনায় পতিত হয়।
অ্যাডভেঞ্জার বয়েজের সভাপতি জিএম জাহিদ হাসান জিটি রোডের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ ও সড়কটি নিয়ে একাধিকবার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। তার পোস্টে চাঁদপুর পৌরসভার ১৫নং ওয়ার্ড এবং তরপুরচণ্ডী ইউনিয়নের বিশাল জনগোষ্ঠীর একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম সড়কটি দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন ওই এলাকার সর্বস্তরের জনগণ।
চাঁদপুর পৌরসভার ১৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অ্যাডঃ মোঃ কবির হোসেন চৌধুরী বলেন, জিটি রোড সংস্কার কাজ চলছে এবং ব্রিজ নির্মাণের জন্যে বরাদ্দ হয়ে গেছে। ব্রিজের মোড় সোজা করে নতুন ব্রিজ নির্মাণ হবে। তবে জিটি রোডের নির্মাণ কাজ বিলম্ব হওয়ার কারণ হলো এতে আট সিসি ঢালাই হবে। নিচে যে পানির লাইন দেয়া আছে সেটি বহু আগের। যাতে পরবর্তীতে পানির লাইনে ব্যাঘাত না ঘটে এজন্যে নতুন করে আবার পানির লাইনের কাজ করা হচ্ছে। যার কারণে মানুষের একটু অসুবিধা হচ্ছে এজন্যে আমি আন্তরিক দুঃখিত। তবে আমরা টেকনিক্যাল, ব্যাংক কলোনিসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার অলিগলির কাজের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। অচিরেই সংস্কার কাজ শুরু হবে।