প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৩
নীরবে নিভৃতে বন্যার্তদের পাশে এক ঝাঁক তরুণ
কোনো ব্যানার নেই, পোস্টার নেই, কোনো দলীয় পরিচয় নেই , নেই কোনো সাংগঠনিক স্বীকৃতি। চেয়ারম্যান , মেম্বার কিংবা কাউন্সিলরও তারা নন। অর্থনৈতিকভাবে সমাজের দানবীরের তকমাও তাদের গায়ে নেই। তারপরও থেমে নেই তাদের পথচলা। দুর্ভোগ-দুর্দশা ও দুর্যোগে সবার আগেই এগিয়ে যাচ্ছে তারা। কোনো প্রকার প্রশংসা, সাধুবাদ ও করতালির অপেক্ষাও করতে দেখা যায়নি তাদের। অবহেলিত বন্যার্তদের পাশে থাকার আনন্দ উপভোগ করে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে পছন্দ করে তারা। বন্যার শুরুতে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে ২৪ আগস্ট দুই ট্রাক শুকনো খাবার নিয়ে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার উদ্দেশ্যে রওনা হয় ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের একটি দল।
|আরো খবর
দু-একদিনের মধ্যে নিজ জন্মস্থান শাহরাস্তি উপজেলা বন্যায় নিমজ্জিত হলে প্রথমেই পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের ৩০ টি পরিবারের মাঝে ভারি খাবার বিতরণের মাধ্যমে কাজ শুরু করে দেয় তারা। এরপর আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রান্না করা খাবারের আয়োজন করে তারা। উপজেলা সদরে রান্না করে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ১৫শ মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়। এসব তরুণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে দিন-রাত খাবার বিতরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সূচিপাড়া ডিগ্রি কলেজ, আয়নাতলি উচ্চ বিদ্যালয়, মেহার ডিগ্রি কলেজ, চিশতিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসা, চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের চিতোষী সুলতানিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, মনিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পীর শাহ্ শরিফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের বিজয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়, বিজয়পুর এতিমখানা, রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়নের হাটপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সূচিপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের রাগৈ উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খাবার বিতরণ করে তারা। এছাড়াও ভোলদিঘি কামিল মাদ্রাসা আশ্রয় কেন্দ্রে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করে।
সকল ক্লান্তির মাঝেও থেমে থাকেনি তাদের সহযোগিতার হাত। ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আসা বিভিন্ন সংগঠনের পাশে থেকে বঞ্চিত মানুষের নিকট সুষম বণ্টনের কাজে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে তাদের।
সমবয়সী এ সকল উদীয়মান তরুণ ইতোমধ্যেই শাহরাস্তি উপজেলায় আলো ছড়িয়েছে। মাদক, ইভটিজিং সহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হয়ে একটি পরিচ্ছন্ন শাহরাস্তি উপজেলা গড়তে এগিয়ে এসে সকলের হৃদয়ে আস্থা জুগিয়েছে। আমিমূল এহছান হৃদয়, মাহবুব আলম অপু, আরিফুল ইসলাম সজীব, শরিফুল ইসলাম সাকিল, জাহিদুল হাসান, সোহান, তানভীর হোসেন ভূঁইয়া, কাজিম, আরাফাত অপু, আহাদ, রিফাত, কুদ্দুস গাজী, বাঁধনসহ আরো অনেকেই নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বন্যা দুর্গতদের জন্যে। তাদের উদ্যোগে স্বাগত জানিয়ে কচুয়া উপজেলার শ্রাবণ গ্রুপ ৪শ' জনের জন্যে রান্না করা খাবার উপহার দেয়। এছাড়াও তাদের বন্ধু ঐশ্বর্য চাঁদপুর সদর থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে শাহরাস্তিতে আসা স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতা সহ এলাকার নানা প্রান্তে খোঁজখবর নিয়ে দুর্গতদের পাশে সার্বক্ষণিক থাকার চেষ্টা চালিয়ে যেতে দেখা যায় শাহরাস্তি উপজেলার আগামী প্রজন্মের এই তরুণদের।স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্যতম সমন্বয়ক আমিমূল এহছান হৃদয় জানান, তাদের এই কর্মসূচিতে বন্যার্তদের মাঝে ১ টনের বেশি খাদ্য সামগ্রী বিতরণ সহ প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার দ্রব্যাদি বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বন্যা পরবর্তী সময়ে শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের কল্যাণে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এই সমন্বয়ক।