শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

সুফিয়ার এগিয়ে যাওয়ার গল্প

সুফিয়ার এগিয়ে যাওয়ার গল্প
প্রবীর চক্রবর্তী ॥

এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে নির্বাচনী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিলেও স্কুলের ধার্যকৃত টাকা দরিদ্র পিতা দিতে না পারায় তার আর এসএসসি পরীক্ষা দেয়া হয়নি। বুকের মধ্যে চেপে থাকা মনঃকষ্ট নিয়ে দিনের পরে সপ্তাহ, মাস ও বছর পার করেন। কিন্তু কোনো কিছুরই কুল কিনারা পাননি। এক সময় সাহস করে চলে যান জেলা প্রশাসকের অফিসে। জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করার সুযোগ না মিললেও সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের রসদ তাকে নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায়। আজ তিনি পড়ালেখার সাথে সাথে কুমিল্লায় ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে একটি প্রকল্পে কর্মরত আছেন।

বলছিলাম ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের ঘড়িহানা গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী সুফিয়া বেগমের কথা। ওই গ্রামের ফয়েজ আহম্মদের ও মা সাজুদা বেগমের সন্তান তিনি। তার এই উঠে আসার পিছনের নেপথ্যে ছিলেন প্রতিবন্ধীদের কাজ করা সংগঠন চাঁদপুর-ডিপিওডি এবং এর পরিচালক মমতাজ উদ্দিন মিলন। যিনি হাফছা, মিন্টুসহ অনেক প্রতিবন্ধীকে সমাজে উঠে দাঁড়ানোর নেপথ্য নায়ক। সর্বশেষ তিনি সুফিয়াকে তার স্বপ্নের কাছাকাছি যাওয়ার পথে এগিয়ে দিলেন।

সুফিয়া বেগম জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজেকে কখনো দুর্বল ভাবেননি। কিন্তু পিতার দরিদ্রতা তাকে পড়ালেখা করে নিজের কর্মে পায়ে দাঁড়ানোর পথে হোঁচট খাওয়ায়। এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষার ফি দিতে না পারায় তিনি বঞ্চিত হন পরীক্ষা দেয়া থেকে। এক সময় ভেঙ্গে পড়লেও পরে আবার মনের সাহস নিয়ে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করেন। ২০১৫ সালের কোনো একদিন তিনি সাহস নিয়ে জেলা প্রশাসক চাঁদপুর কার্যালয়ে যায় একটা কিছু করার অর্থাৎ একটি চাকুরির আশায়। সেখানে গেলেও দেখা পাননি জেলা প্রশাসকের। তবে সেই অফিসের কর্মকর্তা খোকন শীল তার কথা শুনে চাঁদপুর-ডিপিওডির পরিচালক মমতাজ উদ্দিনের মুঠোফোন নাম্বার দিয়ে বলেন, যদি তোর জন্যে কিছু করতে পারে, একমাত্র তিনিই করতে পারবেন।

খোকন শীলের কাছ থেকে আশ্বাস ও মমতাজ উদ্দিনের মুঠোফোন নাম্বার নিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করেন সুফিয়া। ডিপিওডির পরিচালক প্রথমে মুঠোফোনে তার পরিচয় জেনে তার মুঠোফোন নাম্বার সংগ্রহ করেন। পরে তাকে একটু কৌশলে যাচাই বা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন তিনি দাঁড়াতে চান। ফলে ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কড়ৈতলী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে সুফিয়াকে তার পিতাসহ আসতে বলেন। সুফিয়া ওই দিন তার পিতাসহ সেই অনুষ্ঠানে আসেন। এইভাবে তার সাথে মমতাজ উদ্দিন মিলনের পরিচয় হয়।

মেয়েটির হতাশা ও বিষণ্নতা দেখে একদিন তার বাড়ি যাবেন বলে জানান মমতাজ উদ্দিন মিলন। পরে চাঁদপুর-ডিপিওডি-এর অর্থ সচিব কামরুননাহার (শারীরিক প্রতিবন্ধী)কে নিয়ে মেয়েটির বাড়ি যান। পারিবারিক অবস্থা মেয়েটির মনের অবস্থার চাইতে অনেক দুর্বল। মেয়েটিকে কাউন্সেলিং করার জন্য অর্থ সচিব কামরুননাহার অনেক উদাহরণ দিয়ে তাকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেন। তারা তাকে বলেন, প্রতিবন্ধিত্বই শেষ কথা নয়, নতুন জীবনের সূচনা মাত্র। তোমার সব শেষ হয়ে যায়নি, তোমাকে এসএসসি পাসসহ আরো উপরে যেতে হবে।

সুফিয়া তাদের কথায় আশ^স্ত হয়ে তার মা-বাবার সামনে মমতাজ উদ্দিন মিলনকে কথা দেন তার কথা শুনবেন। শুরু হয় সুফিয়ার নতুন জীবন।

চাঁদপুর উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করে সুফিয়াকে ২০১৫ সালেই ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। আর্থিক সমস্যার সমাধান করে দেয়ায় তার পড়ালেখা শুরু হয়। তাকে পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হয়। ২০১৯ সালে তিনি এসএসসি পাস করে জিপিএ ৩.২৭ নিয়ে। এর মধ্যে তার যখন যা প্রয়োজন এবং যেখানে সমস্যা সেখানে মমতাজ উদ্দিন মিলন সকল প্রকার সহযোগিতা করতে থাকেন। তার প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্র তৈরি ও পাওয়ার ব্যবস্থাসহ আর্থিকভাবে সহায়তা করেন।

‘এসএসসি পাসের পর চাকুরি পাওয়া যায় না, আমি ডিগ্রি পাস করতে চাই’ এমন প্রতিজ্ঞা নিয়ে বর্তমানে তিনি এইচএসসিতে অধ্যয়নরত।

চাঁদপুর-ডিপিওডির সহযোগিতায় সুফিয়া ফরিদপুর জেলায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের মাধ্যমে কম্পিউটারে হাতেখড়ি নেন। ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির সেক্টর স্পেশালিস্ট আফরোজা নাজনিনের মাধ্যমে বিশেষ সহায়তায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে সুফিয়া বেগম পড়ালেখার পাশাপাশি কুমিল্লায় ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে একটি প্রকল্পে কর্মরত আছেন।

চাঁদপুর ডিপিওডির পরিচালক মমতাজ উদ্দিন মিলন বলেন, সুফিয়াকে দেখে তার মনের স্পৃহাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। সে তার সফলতার পথে হাঁটতে শুরু করেছে। তার এই পথচলা আরো সুগম করতে যে কেউ তার জন্য সহযোগিতার হাত প্রশস্ত করলে চাঁদপুর-ডিপিওডি কৃতজ্ঞ থাকবে তাদের প্রতি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়