শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২২, ০০:০০

চাঁদপুরের প্রথম নারী উদ্যোক্তা প্রিয়া

দেশব্যাপী নারী উন্নয়নের হাতকে আরো শক্তিশালী করার জন্যে সামাজিকভাবে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে

জিয়াউর রহমান বেলাল

দেশব্যাপী নারী উন্নয়নের হাতকে আরো শক্তিশালী করার জন্যে সামাজিকভাবে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে
অনলাইন ডেস্ক

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ আজ অভাবনীয় উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলেছে। তাঁর পিতার স্বপ্ন সাধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার জন্য তিনি দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। যার ফলে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। অবশ্যই যার সুফল বাঙালি জাতি পাচ্ছে। দেশের অব্যাহত এই উন্নয়ন দেখে অনেক দেশ আজ বাংলাদেশের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছেন।

গত মঙ্গলবার ৭ জুন সকালে চাঁদপুরের প্রথম নারী উদ্যোক্তা প্রিয়া গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি একযোগে নারী উন্নয়নের কাজেও হাত দিয়েছেন। সারাদেশে নারীদেরকে পরিপূর্ণ সামাজিক মর্যাদা দেয়ার পাশাপাশি দিয়েছেন সমান অধিকার। তাইতো দেশে আজ নারীর উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। তাদের উন্নয়নে ইতোমধ্যে অসংখ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন এবং আরো নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন।

প্রিয়া আরো বলেন, একজন নারী হিসেবে সমাজের জন্যে আমারও দায়বদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে তাদের অভাব, অভিযোগ, সমস্যা কিংবা সম্ভাবনাময় আত্ম-উন্নয়নে আমাদেরকেও ভাবতে হবে এবং সেই অনুযায়ী প্রত্যেকে আমরা আমাদের সাধ্য মোতাবেক তাদের জন্য কিছু না কিছু করা একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশব্যাপী নারী উন্নয়নের হাতকে আরো শক্তিশালী করার জন্য আমাদেরকেও সামাজিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই কেবল বঙ্গবন্ধুর 'সোনার বাংলা গড়া সম্ভব এবং এক্ষেত্রে আমরাও সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে সরকারিভাবে নারী উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি সচেতন নাগরিক হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বেসরকারিভাবে নারীদের উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করতে চাই।

চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী, আদি ও প্রথম ইস্পাত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ‘বেগম ইন্ডাস্ট্রিজ' ও 'বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ' পরিবারের সদস্য প্রিয়ার পুরো নাম কানিজ ফাতেমা। তবে সে প্রিয়া নামে সকলের কাছে অধিক পরিচিত। অনেকটা সহজ-সরল, হাসিখুশি ও মিশুক প্রকৃতির হিসেবে সে সহজেই সকলের মন জয় করে নিতে সক্ষম। আর তাছাড়া তার শৈল্পিক গুণ এবং কর্মদক্ষতা তাকে সহজেই সকলের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত করে তোলে।

প্রিয়া'র এই শুরুটা ২০০৮ সালের প্রথমদিকে অনেকটা পরিকল্পনা ছাড়া। ঢাকায় জন্ম হলেও চাঁদপুরে তার দাদার বাড়ি ও নানার বাড়ি। শৈশবের পুরোটাই কাটে চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারের 'বেগম ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলো'তে। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার শখ। এ সুবাদে প্রচুর ছবি এঁকেছে সে। এতে অনেক পুরস্কারও পেয়েছে। নতুন কিছু জানতে বা শিখতে খুব ভাল লাগতো তার। পড়াশুনার পাশাপাশি গানও শিখতো। মঞ্চে গানও গেয়েছে অনেকবার। দীর্ঘ ৫ বছর গান শিখেছে স্থানীয় গানের স্কুলে। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করায় তাই আর পরবর্তীতে সময় করতে পারেনি সংগীতচর্চায় ।

পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া অবস্থায় অনেকটা পরিকল্পনা ছাড়া 'ডিভাইস স্টাইল অনলাইন পেজ' দিয়ে যাত্রা শুরু। নিজের জামা নিজে ডিজাইন করতো। অনেকে তা দেখে বানিয়ে দিতে বলতো, বানিয়েও দিতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা সবছিল ছেলে বন্ধু তার। সবাই কিছু না কিছু করতো। বলতো, 'পেজ ওপেন কর'। করে ফেললো তার 'অস্তিত্ব ডিভাইস স্টাইল'। সেই থেকে তাকে আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

মাত্র ২ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করেছিল সে। জীবনে কয়টা জিনিস মেনে চলে : সৎ থাকা, কম লাভ বেশি বিক্রি। সে আজ পর্যন্ত পেজ মুখস্থ করেনি। বুয়েট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নেয়ার পর মাত্র ২ বছর চাকুরি করেছে। কিন্তু ব্যবসা ছাড়া আর কিছুতে মন বসাতে পারেনি। এটা তার পেশা না এখন নেশা। তিল তিল করে গড়া সম্মান, বিশ্বাস ও ভালোবাসা ক্রেতাসাধারণের।

অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে পাড়ি দিতে হয়েছে বেশকিছু দুর্গম পথ। অনেকে বলতো, ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কাপড় বিক্রি করে। কিন্তু তার বাবা, মা ও স্বামী তাকে নিয়ে অনেক গর্ব করে। কারণ, সে চাকরি করলে সংসারে সময় দিতে পারতো না। তাই বলে বসে থাকেনি সে। বসে থেকে নিজেকে অসহায় ভাবেনি কোনোদিন। নারী বলে ভয় পায়নি। বরং সে সবসময় ভাবে, সে একজন নারী। তাই সে অনেকের জন্য একজন রফড়ষ । কিন্তু এ ব্যাপারে সে বলছে, 'সে একজন উদহারণ মাত্র'।

ভাগ্যবান পিতা শিল্পপতি মোস্তফা কামাল আর সীমা দম্পতির ঘরে এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে বড়। তার স্বামী সুমন সংগীত জগতে প্রতিষ্ঠিত একজন গিটারিস্ট। তাদের ঘরে ১ পুত্র ও ১ কন্যা রয়েছে। 'প্রথম' নামের নাতি ও 'দ্বিতীয়া' নামের নাতনিকে নিয়ে নানা-নানী ও দাদা-দাদীর আনন্দের সীমা নেই। সুমন বেশকিছু চ্যানেলে অসংখ্য সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়। এছাড়া সে চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্নস্থানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতেও নিয়মিত অংশগ্রহণ করে থাকে। বর্তমানে সুমন বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভিতে) প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে চাকরি করছে। প্রিয়ার স্বপ্ন, সে ভবিষ্যতে যা কিছু করবে তার দাদীর সম্মানে ও স্মরণে অর্থাৎ আলহাজ্ব মরহুম মোসাম্মৎ আমেনা বেগমের নামেই করবে। প্রিয়া ও সুমন তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সকলের দোয়াপ্রার্থী।

লেখক পরিচিতি : জিয়াউর রহমান বেলাল, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নামের প্রথম দৈনিক পত্রিকা (যা ঐতিহাসিক ৭ মার্চ তারিখে ডিক্লারেশন ও অনুমোদনপ্রাপ্ত) 'দৈনিক একাত্তর কণ্ঠ' পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়