প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

আমাদের দেশের দক্ষ-অদক্ষ কর্মীরা অন্য দেশে গিয়ে উপার্জিত অর্থ (যাকে বলে রেমিটেন্স) পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সক্ষম হলেও অনেকে নানান কারণে নিজের পরিবারের চাকাকে স্বাভাবিকভাবে সচল রাখতে পারে না। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে যারা বিদেশের কর্মস্থলে অবস্থান করে, তারা যতোটা স্বস্তিতে থাকে, আর যারা স্ত্রী/স্ত্রী-সন্তানকে দেশে রেখে বিদেশে বছরের পর বছর অবস্থান করে, তারা ততোটা স্বস্তিতে থাকে না। তাদের অধিকাংশের স্ত্রীদের সাথে মনোমালিন্য, ভুল বোঝাবুঝি তথা দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকে। উপর্যুপরি তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের বিপথগামিতায় তারা বিদেশে অবস্থান করে রেমিটেন্সের জন্যে যুদ্ধ করার পাশাপাশি অন্য এক কঠিন যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হন। এ যুদ্ধ থাকে প্রধানত মানসিক কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাবার যুদ্ধ। কথা হলো, এদের সবাই কি সে পরিত্রাণ পায়?
ক’বছরের ব্যবধানে দেশে ফিরে অনেক রেমিটেন্স যোদ্ধাকে অনেক বড় জীবন-যোদ্ধা সাজতে হয়। দাম্পত্য কলহ, প্রেরিত রেমিটেন্সের হিসাব ঠিকমত না পাওয়া, আত্মসাৎ হওয়া সহ নানা বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এমনই এক যোদ্ধার নাম ফরিদগঞ্জের জসিম উদ্দিন (৩৬), যিনি বাংলা প্রবাদবাক্য অনুযায়ী মধুর হাড়ি বলে খ্যাত শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে তিনদিন পর বড় জোর জুতার বাড়ি খাওয়ার কথা থাকলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রথম দিনেই খেয়েছেন বেদম মার। এই মার খাওয়ার রকমফের থাকলেও তারটা ছিলো রীতিমত বর্বরোচিত। তাকে চোরের মতো বাসার গ্রিলের সাথে বেঁধে এতোটা মারধর করা হয়েছে যে, তার ডাক-চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠাতে হয়েছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৫নং রূপসা উত্তর ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের প্রবাসী জসিম উদ্দিন গত দু বছর পূর্বে একই গ্রামের ছলেমান মিয়ার মেয়ে রোজিনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের এক বছর পর তাদের ঘর আলোকিত করে একটি সন্তানের জন্ম হয়। স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্কটা ভালোই ছিলো। তিনি জানান, আমি বিদেশে থাকাবস্থায় বাড়িতে কিছু পারিবারিক সমস্যা হয়। আমি দেশে ফিরে বাড়িতে এসে সেটি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছি। আমি গত ২৮ অক্টোবর বাড়ি আসি। আমার স্ত্রী আমার সাথে থাকে ১০-১২ দিন। তারপর বাচ্চা অসুস্থ হয়েছে বলে ডাক্তার দেখাতে যায়। সেখান থেকে সে বাপের বাড়ি চলে যায়। গত ১৯ নভেম্বর আমার স্ত্রী আমাকে ফোন করে বলে, বাচ্চা বেশি অসুস্থ। বাচ্চাটিকে দেখতে যাওয়ার অনুরোধ করলে আমি দ্রুত শ্বশুর বাড়িতে যাই। সেখানে আমার স্ত্রী রোজিনার সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রোজিনার বাবা ছলেমান, রোজিনার ভাই মিলন, টেলু ও রোজিনার মা রোকেয়া মিলে আমাকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে তাদের বাসার জানালার গ্রিলের সাথে আমাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রড ও লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করে। পরে আমাদের এলাকার লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
চাঁদপুর কণ্ঠে গতকাল ‘মেয়ের জামাইকে বেঁধে মারলেন শ্বশুর’ শিরোনামে সচিত্র যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে, সেটি পড়ে সংবেদনশীল কিংবা বিবেকসম্পন্ন প্রতিটি পাঠক আহত ও সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। মার খেয়ে দুর্ভাগা জামাই জসিম ফরিদগঞ্জ থানায় শ্বশুর-শাশুড়ি-শ্যালকদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্তে যেটা সত্য সেটাই বেরিয়ে আসবে। আমরা ধরে নিলাম, জসিম কোনো কারণে কোনো অপরাধ করেই ফেলেছেন কিংবা বড় কোনো ভুলই হয়ে গেছে, সেজন্যে কি তাকে চোর-ডাকাতের মতো বেঁধে কিংবা গরুর মতো মারধর করতে হবে? আমরা আইন-আদালতের কাছে এমন বর্বরতার বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তি চাই।