সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

নৌপথে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা চাই
অনলাইন ডেস্ক

চলতি একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে কথা। একদিন সন্ধ্যারাতে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশারের কাছে ফোন আসলো, খুলনা থেকে ঢাকাগামী স্টীমারে একজন ভিআইপি যাত্রী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাকে যেনো চাঁদপুর ঘাটে চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি চাঁদপুরের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ বিশ্বনাথ পোদ্দারকে এ চিকিৎসা সেবাটুকু দেয়ার অনুরোধ জানান। সেমতে ডাঃ বিশ্বনাথ ইসিজি মেশিন ও নার্সসহ স্টিমার ঘাটে হাজির হন এবং ওই যাত্রীর ইসিজি করে নিশ্চিত হন, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবায় তিনি ঢাকা পর্যন্ত যেতে পারবেন এবং ওখানকার হাসপাতালে গিয়ে বাকি চিকিৎসা সেবাটুকু নিতে পারবেন। ওই যাত্রী ঢাকায় নিরাপদে পৌঁছে ও সুস্থ হয়ে ইকবাল-বিন-বাশারকে ফোন করে অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

নৌপথে ভিআইপি লোকের জন্যে ভিআইপি ট্রিটমেন্ট যে সব সময় জোটে-এমনটি বলার সুযোগ নেই। সড়ক ও রেলপথে কোনো যাত্রী হঠাৎ অসুস্থ হলে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের কাছে থামিয়ে ওই যাত্রীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া যায়। কিন্তু নৌপথে এমন চিকিৎসা সেবা দেয়ার সুযোগ সব সময় থাকে না। কারণ, নৌযানগুলো সড়কে ও রেলপথে চলাচলকারী যানগুলোর ন্যায় দ্রুতগামী নয়। বড় বড় নৌযান, যেমন লঞ্চ ও স্টিমারের সাথে স্পীড বোট বাঁধা থাকলে, কোনো যাত্রীর অসুস্থতায় তাকে স্পীডবোটযোগে নিকটবর্তী হাসপাতালে স্থানান্তর করা যায়। কিন্তু বড় নৌযানগুলোতে স্পীড বোট বেঁধে রাখার মতো উদার মানসিকতা মালিক/সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে নেই বললেই চলে।

বছর তিনেক আগের কথা। বাংলাদেশের দুটি রোটারী ডিস্ট্রিক্টের মধ্যে চট্টগ্রাম-সিলেট- কুমিল্লাকেন্দ্রিক ডিস্টিক্ট ৩২৮২-এর পক্ষ থেকে চাঁদপুর-ষাটনল নৌপথে আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করা হয়। চাঁদপুরের বিখ্যাত লঞ্চ ব্যবসায়ী আলহাজ্ব এম. এ. বারী খানের বড় একটি লঞ্চযোগে ওই ভ্রমণটি কার্যকর করা হয়। আয়োজক ছিলো চাঁদপুর রোটারী ক্লাব ও চাঁদপুর সেন্ট্রাল রোটারী ক্লাব। আয়োজকরা প্রায় এক হাজার লোকের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ আনন্দ ভ্রমণে চিকিৎসক ও ঔষধের যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। এমনকি লঞ্চের সাথে দুটি স্পীড বোট বেঁধে নিয়েছিলেন। কেউ কেউ এমনটিকে বাড়তি ব্যয় বলে শ্লেষ করেছিলেন। আনন্দ ভ্রমণ চলাকালে সংবাদ এলো, কুমিল্লায় এক ভদ্র মহিলা মারা গেছেন, যার স্বামী ও ছেলে এই আনন্দ ভ্রমণে রয়েছেন। সংবাদটি জানার সময় লঞ্চটি মেঘনা নদীর এমন এক অবস্থানে ছিলো, যেখান থেকে চাঁদপুর পৌঁছতে অন্তত দু ঘন্টা সময় লাগবে। এমতাবস্থায় আয়োজকরা লঞ্চের সাথে বাঁধা একটি স্পীডবোট যোগে ওই দুজনকে ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে চাঁদপুর পৌঁছালেন, সেখান থেকে দ্রুত তারা কুমিল্লা পৌঁছে যান।

এই আলহাজ্ব এম.এ. বারী খানের লঞ্চ ‘রফরফে’ গত শুক্রবার সন্ধ্যারাতে ঢাকা থেকে চাঁদপুর আসতে যাত্রী হয়েছিলেন চাঁদপুর শহরের সবচে’ বিখ্যাত বিপণী বিউটি স্টোরের মালিক সুবল চন্দ্র দে। পথিমধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া ও দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিলো না। দু ঘন্টা চিকিৎসাবিহীন থাকার পর তিনি যখন চাঁদপুর পৌঁছেন, ততক্ষণে তার প্রাণবায়ু উড়ে পৌঁছে যায় না ফেরার দেশে। প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়েও বিনা চিকিৎসায় সুবল দে চিরতরে হারিয়ে গেলেন।

সুবল দের মতো ভবিষ্যতে কোনো যাত্রী লঞ্চ/স্টিমারে অসুস্থ হবেন না-এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবেন না। সেটি অনেক বড় অক্ষমতাই বটে। এই অক্ষমতা দূর করতে তথা নৌপথে যাত্রীদের ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে নৌযানে রাখা যায় কিছু ব্যবস্থা। যেমন-প্রয়োজনীয় ঔষধ সহ ফার্স্ট এইড বক্স, নৌযানের নির্দিষ্ট কর্মচারীকে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞানার্জনের জন্যে প্রশিক্ষিত করা, নির্দিষ্ট চিকিৎসক থেকে টেলি মেডিসিন প্রাপ্তির ব্যবস্থা, সর্বোপরি উন্নত চিকিৎসার্থে নিকটবর্তী হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্যে নৌযানের সাথে স্পীডবোট বেঁধে রাখা। চাঁদপুরের বিখ্যাত ব্যবসায়ী সুবল দে’র নৌপথে বিনা চিকিৎসায় দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর প্রেক্ষিতে নৌযান মালিক/কর্তৃপক্ষকে প্রাগুক্ত বিষয়টি নিয়ে ভাবার জন্যে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়