সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

সাঁতারে চাঁদপুরের সব ঐতিহ্য কি বিলুপ্তির পথে?
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুরের তিন কৃতী সাঁতারুর বিরল সাফল্যের ২৩ বছর পূর্তি হয়েছে গত ১৯ নভেম্বর। ১৯৯৯ সালের এইদিনে সাঁতারু একেএম বাদশা মিয়া, ছানাউল্লা খান ও রোকন ভূঁইয়া ঢাকার মেরী অ্যান্ডারসন থেকে একটানা ২৫ ঘন্টা সাঁতার কেটে ৭০ কিলোমিটার নদী পথ পাড়ি দিয়ে চাঁদপুরে মেঘনার তীর স্পর্শ করেন। এ সময় অন্তত অর্ধ লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে চাঁদপুর বড় স্টেশন এলাকায় আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। এই তিন কৃতী সাঁতারু চাঁদপুরের গৌরব বিশ্বখ্যাত সাঁতারু আবদুল মালেক ও অরুণ নন্দীর পুরোপুরি যোগ্য উত্তরসূরি হতে না পারলেও দূরপাল্লার সাঁতারে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে উল্লেখযোগ্য কিছু করার সাহস দেখাতে সক্ষম হন। সেটা কম কিসে।

দূরপাল্লার সাঁতারে মরহুম আবদুল মালেকের রয়েছে বিশ্বখ্যাতি। তিনি ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী। ১৯৬২ সালে ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতার প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম হন। ১৯৬৩ সালে ইতালীতে ‘কেপরী-নেপলস’ ৩৩ মাইল বিশ্ব দূরপাল্লার সাঁতার প্রতিযোগিতায় সারা বিশ্বে চতুর্থ এবং এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেন। ইংলিশ চ্যানেল ক্রসিং কমিটির উদ্যোগে ১৯৬৪ সালে নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর, ১৯৬৫ সালে দাউদকান্দি-নারায়ণগঞ্জ এবং নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তিনটি প্রতিযোগিতাতেই প্রথম স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করেন। অবিরাম সাঁতারে রয়েছে তাঁর জাতীয় রেকর্ড। ১৯৫৯ সালে ঢাকাস্থ জাতীয় সুইমিং পুলে ৬০(ষাট) মাইল সাঁতার কেটে তিনি এই রেকর্ড গড়েন।

সাঁতারু আব্দুল মালেকের ন্যায় সাঁতারে প্রয়াত অরুণ নন্দীরও রয়েছে বিশ্বখ্যাতি। তিনি ১৯৭১ সালে ভারতের কলকাতা বৌ-বাজার সুইমিং ক্লাব ও চাঁদপুর সম্মিলনীর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অবিরাম সাঁতারে ৯০ ঘণ্টা ৫ মিনিট সাঁতার কেটে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেন এবং ‘সন্তরণশ্রী’ উপাধিতে ভূষিত হন। এছাড়া তিনি ১৯৭৪ সালে ঢাকার মীরপুর থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত প্রায় ১১০ কিলোমিটার সাঁতার কেটে দূরপাল্লার সাঁতারে এশিয়ার সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করেন। এছাড়া ১৯৬২ সালে ঢাকা-চাঁদপুর ও ১৯৬৫ সালে নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতারসহ অবিরাম সাঁতারে রয়েছে অরুণ নন্দীর উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব। ১৯৬৭-৬৮ সালে ফরিদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ফেণী, বরিশাল ও চাঁদপুরে অবিরাম সাঁতার কেটে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। চাঁদপুর শহরের জে.এম. সেনগুপ্ত রোডস্থ জোড় পুকুরে তাঁর অবিরাম সাঁতার দেখতে এতোটা দর্শক হয়েছিলো যে, অবশেষে দর্শকের চাপে পাকা পুকুর ঘাটলাও ভেঙ্গে পড়ে।

বিশ্বখ্যাত সাঁতারু আঃ মালেক ও অরুণ নন্দীর কারণে সাঁতারে চাঁদপুরের সুনাম ও দাপট ছিলো দেশব্যাপী। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে রফিক, সালাম, মিন্টু, ফাতেমা, তপন, তকবির, বাদশা, রোকন ও ছানাউল্লাহ সহ আরো অনেকে সাঁতারে চাঁদপুরের সুনাম রক্ষার প্রয়াস চালান। তাঁদের সমকালে ও পরবর্তীতে সেন্টু লোধ, আল-আমিন, সেলিম বেপারীসহ আরো কিছু সাঁতারু জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্ব প্রদর্শন করলেও পূর্বসূরিদের ন্যায় ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেন নি।

সাঁতারে বিশ্বখ্যাত সাঁতারু আঃ মালেক ও অরুণ নন্দীসহ অন্য সাঁতারুদের দ্বারা সৃষ্ট চাঁদপুরের সুনাম এখন কেবল স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে। সাঁতারের এই সুনামকে ধরে রাখতে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ অন্য কারোরই দীর্ঘমেয়াদী কোনো পরিকল্পনা, পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রণোদনা কিছুই নেই। চাঁদপুর স্টেডিয়ামে মালেক ক্রীড়া ভবন ও আউটার স্টেডিয়ামে অরুণ নন্দীর নামে সুইমিং পুল থাকলেও এ দুটি স্থাপনায় তাঁদের নামে কোনো স্মৃতিকক্ষ নেই। উপর্যুপরি পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় অরুণ নন্দী সুইমিং পুল বন্ধ হয়ে আছে বছরের পর বছর। এ সুইমিংপুল চালু করতে জেলা ক্রীড়া সংস্থার দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই। এই সংস্থায় সাঁতার উপ-কমিটিও এখন পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। সুইমিংপুল চালু থাকা অবস্থায় চাঁদপুরের সর্বস্তরের সাঁতারুদের সংগঠন চাঁদপুর সাঁতার পরিষদ সক্রিয় থাকলেও এখন তারা নিষ্ক্রিয়। এমতাবস্থায় সাঁতারে চাঁদপুরের সুনাম-ঐতিহ্য-গৌরব সব বিলুপ্তির পথে। এগুলো পুনরুদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়