শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২১, ১৫:৪৩

চাঞ্চল্যকর রেহান মিজি হত্যার ৭ দিনের মাথায় খুনি গ্রেফতার : জুয়া খেলা দ্বন্দ্ব নিয়ে হত্যাকান্ড

আবু সাঈদ কাউসার

চাঁদপুর শহরের নিউ ট্রাক রোডে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর রেহান উদ্দিন মিজি (৫৫) হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী খোরশেদ আলম (২৭) কে গতকাল ৩০ জুন গভীর রাতে শহরের প্রফেসরপাড়ার সাধন গাজীর মেস হতে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে আসামী খোরশেদ আলমের স্বীকারোক্তি এবং তথ্যের প্রেক্ষিতে পুলিশ খুনের বিভিন্ন আলামতও উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ড করা হয় এবং পুলিশ ৭ দিনের মধ্যেই খুনের রহস্য উদ্‌ঘাতন করে।

১'লা জুলাই বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে এ তথ্য জানানো হয়। ঘটনার বিবরণীতে জানা যায়, আসামী খোরশেদ আলম একজন পেশাদার জুয়াড়ি। পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার শেফালী পাড়া গ্রামের মৃত মোস্তফা ভূঁইয়ার ছেলে সে।

আমরা মৃত রেহান উদ্দিন মিজির দ্বিতীয় স্ত্রীর সূত্র ধরে আসামীকে ধরতে পেরেছি। রেহান উদ্দিন মিজির দ্বিতীয় স্ত্রী হাইমচর একটি ভাড়া বাসায় থাকতো। ঐদিন সকাল থেকে তার কাছে একটি নাম্বার থেকে বার বার ফোন যাচ্ছিল। তিনি ফোন রিসিভ করলে তাকে হাইমচর থেকে চাঁদপুর সদরে আসার জন্য বলা হয়। ঐ কলের সূত্র ধরেই আমরা এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি উদঘাটন করতে পেরেছি। ঐদিন রেহান মিজির স্ত্রীর মোবাইলে আসামী খোরশেদ আলমই বার বার ফোন দিচ্ছিল। কিন্তু সে তার মোবাইল থেকে কল দেয়নি। অন্য আরেকজনের মোবাইল ফোন থেকে কল দিয়েছিল। তাদেরকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনেছিলাম।

তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় যে, যে ফোন থেকে কল করা হয়েছে, ফোনটি খোরশেদের না। যারা ফোনটি ব্যবহার করতো, তারা একজন হোটেল বয় এবং আরেকজন ঢালাইয়ের কাজ করে। খোরশেদ তাদের কাছ থেকে ফোনটি নিয়ে কথা বলেছে। জরুরী কথা আছে বলে তাদের কাছ থেকে ফোনটি নিয়ে কথা বলেছে। তবে তারা খোরশেদকে চিনে না। কারণ তার মুখে মাস্ক পড়া ছিল। তারা জানায়, যে ফোনটি নিয়েছে, তাকে দেখলে তারা চিনবে। এরপর পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং ঐ বাড়ির ভিডিও ফুটেজের ছবি দেখে সংঘটিত ঐ রেহান উদ্দিন মিজির চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের প্রধান আসামীকে পুলিশ খোরশেদ কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। বিষয়টি আরো কনফার্ম করার জন্য আসামী খোরশেদের আমরা হোটেল বয় ও ঢালাই কাজ করা ছেলেদের দেখালে, তারা বলে- এই লোকটিই তাদের কাছ থেকে ফোন নিয়ে কথা বলেছে।

প্রেস ব্রিফিং-এ পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, জুয়া খেলায় হেরে যাওয়ার ক্ষোভ থেকেই রেহান উদ্দিন মিজিকে ধারালো লোহার দা দিয়ে মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে হত্যা করে আসামী খোরশেদ আলম। পরে আমরা অনুসন্ধানের মাধ্যমে পলাতক খোরশেদ আলমকে প্রফেসর পাড়া সাধন গাজীর মেস থেকে গ্রেফতার করি।

পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ আরও বলেন, আসামীর দেওয়া তথ্য মতে, আমরা খুনে ব্যবহৃত দা, মৃত ব্যক্তির রক্তমাখা লুঙ্গি, ১টি গেঞ্জি, তাস, ১টি লাইটার, বেনসন সিগারেটের প্যাকেট ও ১টি নীল রঙ্গের মাস্ক আলামত হিসেবে উদ্ধার করেছি। গ্রেফতারকৃত আসামী খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে পূর্বেও ২টি গরু চুরির মামলা রয়েছে। আমরা তাকে বিকালে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে প্রেরণ করবো।

পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, আসামী খোরশেদ জিজ্ঞাসাবাদে জানায় মৃত রেহান উদ্দিন মিজি তার পূর্ব পরিচিত। তারা একসাথে বিভিন্ন জায়গায় জুয়া খেলত। গত ২২ জুন আসামী মোঃ খোরশেদ আলম রেহান উদ্দিন মিজির বাসায় জুয়া খেলবে বলে প্রস্তাব দেয়। এরেই প্রেক্ষিতে মৃত রেহান উদ্দিন মিজি (৫৫) রাজী হয়। গত ২৩ জুন বেলা আড়াইটায় আসামী খোরশেদ আলম (২৭) খুন করার পরিকল্পনা অনুযায়ী তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ব্যবহার না করে চাঁদপুর থানাধীন ওয়ারলেছ মোড়ে গিয়ে গাড়ীর গ্যারেজের মিস্ত্রী জনৈক মোঃ রফিকুল ইসলাম (৩৩)-এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে আসামী খোরশেদ মৃত রেহান উদ্দিন মিজি (৫৫) কে ফোন দেয়। ফোনের প্রেক্ষিতে আসামী খোরশেদ ও মৃত রেহান উদ্দিন মিজি সদর মডেল থানাস্থ ট্রাক রোডস্থ বটতলা মোড় এলাকায় এসে তারা একত্রিত হয়।

বটতলা মোড় হইতে মৃত রেহান উদ্দিন মিজি ও আসামী খোরশেদ আলম একসঙ্গে মৃত ব্যাক্তির বাসায় যায়। পরবর্তীতে আসামীর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির ঘরে থাকা ধারালো লোহার দ্যা দিয়া রেহান উদ্দিনের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় উপর্যুপুরি আঘাত করে হত্যা করে। মামলার আলামত নষ্ট করার জন্য ঘরে থাকা জুয়া খেলার তাস, রক্তমাখা কাপড় নিয়ে মৃত ব্যাক্তির বাসা হতে বাহির হয়ে আলামত সমুহ বঙ্গবন্ধু সড়কস্থ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের দক্ষিণ পাশে চাঁদপুর-কুমিল্লা রেললাইন সংলগ্ন গুণরাজদী সাকিনের জঙ্গলে ফেলে দিয়ে নিজ বাড়ী লক্ষীপুরে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে আসামী খোরশেদ আলম গতকাল ৩০ জুন তারিখ সে ফিরে আসে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অত্র থানাধীন প্রফেসার পাড়া সাধন গাজীর মেস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামী খোরশেদকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে অদ্য ০১ জুলাই অত্র থানাধীন বঙ্গবন্ধু সড়কস্থ মা ও শিশু হাসপাতালের দক্ষিণ দিকে চাঁদপুর-কুমিল্লা রেললাইনের দক্ষিণ পাশে জঙ্গলে অভিযান পরিচালনা করে তার দেখানো রেহান উদ্দিনের ব্যবহৃত একটি লুঙ্গি, একটি গেঞ্জি, তাস, একটি লাইটার, বেনসন সিগারেটের প্যাকেট ও আসামীর ব্যবহৃত একটি নীল রঙের মাস্ক উদ্ধার করা হয়।

উল্লেখ্য, ২৩ শে জুন বিকালে শহরের নিউ ট্রাকরোড খান বাড়ী সড়কের তামান্না শারমিন ভিলার ৩য় তলার ভাড়াটিয়া রেহান উদ্দিন মিজি (৫৫) নির্মমভাবে খুন হন। ঐ ঘটনায় সদর মডেল থানা পুলিশ মৃতের লাশ উদ্ধার করে এবং পরবর্তীতে এ বিষয়ে মামলা হয়। মামলা নং-৬১/৩৬৮। তাং-২৪/০৬/২০২১। ঐ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে তামান্না শারমিন ভিলার দারোয়ান ও নিহতের ২য় স্ত্রীসহ সন্দেহজনক ৪ জনকে পুলিশ আটক করে। পরবর্তীতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতদের কোন সম্পৃক্ততা না থাকা তাদেরকে আইনি প্রক্রিয়ায় ছেড়ে দেওয়া হবে বলে পুলিশ জানায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়