প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:২১
জাতি গঠনে শিক্ষার মেরুদণ্ড রক্ষা করুন: সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান!

শিক্ষা ব্যবস্থার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা: সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান
লেখক: মো. জাকির হোসেন
তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, চাঁদপুর জেলা বিএনপি
সহ-সভাপতি, বাকশিশ, চাঁদপুর জেলা শাখা
ভূমিকা
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থার যে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে, তা জাতির জন্য এক মর্মান্তিক বিপর্যয়ের সতর্কবার্তা। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার এনায়েতপুরে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমাদের সামনে অত্যন্ত গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। ইমন হোসেন নামে এক মেধাবী ছাত্রের নির্মমভাবে খুন হওয়া কেবল একটি হত্যাকাণ্ড নয়, বরং এটি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, নৈতিকতা ও আইন-শৃঙ্খলার প্রতি গভীর সংকটের প্রতিফলন।
এই ঘটনা জাতির জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা। এখন সময় এসেছে, বাংলাদেশ সরকারকে আরো কঠোর অবস্থানে দাঁড়িয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে।
ঘটনার পেছনে: সমাজের অবক্ষয়ের অন্ধকার দিক
২০২৫ সালের ১৭ এপ্রিল, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় পুরো দেশ চমকে ওঠে। ইমন হোসেনের সহপাঠীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়ার ঘটনা কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের নগ্ন প্রতিচ্ছবি।
ইমন নকল করতে না দেওয়ায় তার উপর সহপাঠীদের অমানবিক হামলা হয়। মাথায় আঘাত পেয়ে মারাত্মক আহত ইমন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। এটি প্রশ্ন তোলে, আমাদের তরুণ সমাজ কোন মূল্যবোধে গড়ে উঠছে?
শিক্ষা ব্যবস্থার পতন: সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বহুদিন ধরে অবক্ষয়ের মুখে। মানহীন শিক্ষা, নকলের বিস্তার এবং নৈতিকতার অভাবে এক ভয়াবহ অবনতি দৃশ্যমান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা ও শিক্ষকদের গাফিলতির ফলেই আজ এই পরিণতি।
সরকারকে এখনই কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। শিক্ষকদের নৈতিকতার প্রশিক্ষণ, নকল রোধে বিশেষ বাহিনী গঠন, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন - এসব এখন সময়ের দাবি।
সমাজের উপর এর প্রভাব: শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িত্ব
যে সমাজে তরুণরা নকল করতে না দেওয়ায় হত্যায় লিপ্ত হয়, সে সমাজের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত অন্ধকার। নৈতিকতা, মানবিকতা ও সহনশীলতার সম্পূর্ণ অবক্ষয় ঘটছে।
পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠনসমূহকে এখন সম্মিলিতভাবে নৈতিকতার পুনরুদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বিচারের দাবি: ইমনের পরিবারের আহ্বান
ইমনের পরিবার এখন বিচারের জন্য চিৎকার করছে। তারা বলছে, "আমার ছেলে নকল করতে না দেওয়ার জন্য মারা গেছে। আমরা এখনো বিচার পাইনি।"
এই বেদনাদায়ক আহ্বান সরকারকে অবিলম্বে দ্রুত তদন্ত, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগী হতে বাধ্য করে।
উপসংহার: নৈতিকতা ও শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার
ইমনের মৃত্যুর ঘটনা শিক্ষা ব্যবস্থার উপর এক মহাসংকেত হয়ে এসেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নকলের যে অপসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা এখনই ধ্বংস করা প্রয়োজন।
সরকারের উচিত অবিলম্বে শিক্ষাখাতে সংস্কারমূলক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। শিক্ষকদের নিয়মিত মূল্যায়ন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি নজরদারি বাড়াতে হবে।
ইমনের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়। এটি হোক বাংলাদেশের শিক্ষা সংস্কারের টার্নিং পয়েন্ট।
ডিসিকে/ এমজেডএইচ